×

জাতীয়

ঢাকায় বন্ধ হচ্ছে ৬ ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮:২৭ এএম

 ঢাকায় বন্ধ হচ্ছে ৬ ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার

দেশের স্বাস্থ্য খাত নিয়ে অসন্তোষ দীর্ঘদিনের। এ খাতের বিভিন্ন অসঙ্গতি নিয়ে বিভিন্ন সময় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে যারা ছিলেন তারাও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তবে এবার দেশের পুরো স্বাস্থ্য খাতকেই ভেজালের কারখানা বলে মন্তব্য করেছেন খোদ মন্ত্রী।  গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, দেশের পুরো স্বাস্থ্য খাতই যেন ভেজালের কারখানা। স্বাস্থ্য খাতে এত যে অসঙ্গতি, এর কোনোটির দায়ই মন্ত্রী হিসেবে এড়ানো সম্ভব নয়। দায় মাথায় নিয়েই কাজ করতে হবে।

এদিকে অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিক-ডায়গনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে গতকাল মঙ্গলবার আবারো মাঠে নামে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৬টি টিম। ১৮টি প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালিত হয়। মূলত সরকারের ১০ দফা নির্দেশনা ঠিকমতো মানছে কিনা এবং নিবন্ধন ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান চলছে কিনা- সেটি তদারকিতে চার সদস্য করে ৬টি টিম মাঠে নামে। প্রথম দিনের অভিযানেই বেরিয়ে আসে অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার হরেক চিত্র। এমন অভিযোগে ছয়টি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আজ বুধবার পূর্ণ অভিযানে নামবে অধিদপ্তর।

গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরের বাইরে অবৈধ ক্লিনিক-হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে। যে কোনো দিন মন্ত্রী হিসেবে অভিযানে আমি যাব। অভিযানে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এ ধরনের অভিযানে চিকিৎসা কিছুটা ব্যাহত হবে। তবে অবৈধভাবে কোনো প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হতে পারবে না। ভুল জায়গায় চিকিৎসা নেয়ার চেয়ে চিকিৎসা না নেয়া ভালো। সঠিক জায়গায় চিকিৎসা নেয়া উচিত সবার।

গতকালের অভিযানে বিভিন্ন অনিয়মে ৬টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হবে বলে ভোরের কাগজকে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান। তিনি বলেন, গতকাল আমাদের কয়েকটি টিম ১৮টি ক্লিনিক পরিদর্শন করেছে। এরমধ্যে বাড্ডা এলাকার ৬টি, মিরপুর কালসির ২টা, ইসিবি চত্ত্বরে ৪টি ও মোহাম্মদপুরে ৬টি। এর মধ্যে ৬টি বন্ধ হবে। বাকিগুলোর বিরুদ্ধে বিভিন্ন মেয়াদে নোটিস দেয়া হবে।

জানা যায়, এই ৬ প্রতিষ্ঠান হলো- কালশীর এশিয়ান ডায়গনস্টিক সেন্টার, এ এইচ এফ ডায়ালাইসিস ও ডায়গনস্টিক সেন্টার, ইসিবি চত্বরে আল হাকিমি চক্ষু হাসপাতাল, টিজি মাল্টি স্পেশালিস্ট হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং মোহাম্মদপুরের মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ারে অবস্থিত রাজধানী ব্লাড ব্যাংক, রেডিয়াম ব্লাড ব্যাংক।

অভিযানে কী অনিয়ম দেখেছেন জানতে চাইলে ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান বলেন, খুবই নোংরা পরিবেশ, মেয়াদ উত্তীর্ণ রি-এজেন্ট, লাইসেন্স না থাকার অভিযোগে ৬টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হবে। আশা করছি আজ তাদের চিঠি পাঠানো হবে।

সরকারের নির্দেশনা টাঙ্গানোর হার কেমন? এ প্রসঙ্গে হাসপাতাল শাখার পরিচালক বলেন, ঢাকার বড় বড় ল্যাব ও প্রতিষ্ঠনগুলো ইতোমধ্যেই সরকারের নির্দেশনা মেনেছে। নতুন এই নির্দেশনা কার্যকর হতে কিছুটা সময় লাগবে।

প্রসঙ্গত; ২২ ফেব্রুয়ারি ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স প্রবেশপথে টানানো, তথ্য কর্মকর্তা নিয়োগ ও লেবার রুম প্রটোকল বাধ্যবাধকতাসহ ১০ দফা নির্দেশনা দেয় অধিদপ্তর। নির্দেশনায় বলা হয়, যে ১০ শর্ত মানতে হবে- বেসরকারি ক্লিনিক/হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক এর লাইসেন্সের কপি ওই প্রতিষ্ঠানের মূল প্রবেশ পথের সামনে দৃশ্যমান স্থানে অবশ্যই স্থায়ীভাবে প্রদর্শন করতে হবে। 

সব বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ওই প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় তথ্যাদি সংরক্ষণ ও সরবরাহের জন্য একজন নির্ধারিত দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য কর্মকর্তা/কর্মচারী থাকতে হবে এবং তার ছবি ও মোবাইল নম্বর দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শন করতে হবে। যে সব প্রতিষ্ঠানের নাম ডায়াগনস্টিক ও হাসপাতাল হিসেবে আছে কিন্তু শুধুমাত্র ডায়াগনস্টিক অথবা হাসপাতালের লাইসেন্স রয়েছে তারা লাইসেন্স প্রাপ্ত ব্যতিরেকে কোনোভাবেই নামে উল্লেখিত সেবা প্রদান করতে পারবে না। 

ডায়াগনস্টিক সেন্টার/প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরি এর ক্ষেত্রে যে ক্যাটারগরিতে লাইসেন্সপ্রাপ্ত শুধুমাত্র সে ক্যাটারগিতে নির্ধারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ব্যতীত কোনোভাবেই অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যাবে না এবং ক্যাটারগরি অনুযায়ী প্যাথলজি/মাইক্রোবায়োলজি,বায়োকেমিষ্ট্রি ও রেডিওলজি বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করতে হবে। 

বেসরকারি ক্লিনিক/হাসপাতালের ক্ষেত্রে লাইসেন্সের প্রকারভেদ ও শয্যা সংখ্যা অনুযায়ী সকল শর্তাবলি বাধ্যতামূলকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। হাসপাতাল/ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়োজিত সব চিকিৎসকের পেশাগত ডিগ্রির সনদসমূহ, বিএমডিসির হালনাগাদ নিবন্ধন ও নিয়োগপত্রের কপি অবশ্যই সংরক্ষণ করতে হবে। 

হাসপাতাল/ক্লিনিকের ক্ষেত্রে যে কোনো ধরনের অপারেশন/সার্জারি/প্রসিডিউর এর জন্য অবশ্যই রেজিষ্ট্রার্ড চিকিৎসককে সার্জনের সহকারী হিসেবে রাখতে হবে। কোনো অবস্থাতেই লাইসেন্সপ্রাপ্ত/নিবন্ধিত হাসপাতাল ও ক্লিনিক ব্যতীত চেম্বারে অথবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অ্যানেসথেশিয়া প্রদান করা যাবে না। বিএমডিসি স্বীকৃত বিশেষজ্ঞ অ্যানেস্থেসিস্ট ছাড়া যে কোনো ধরনের অপারেশন/সার্জারি করা যাবে না। সব বেসরকারি নিবন্ধিত/লাইসেন্সপ্রাপ্ত হাসপাতাল/ক্লিনিকে লেবার রুম প্রটোকল অবশ্যই মেনে চলতে হবে। নিবন্ধিত/লাইসেন্সপ্রাপ্ত হাসপাতাল/ক্লিনিকে অপারেশন থিয়েটারে অবশ্যই অপারেশন থিয়েটার অ্যাটিকুইট মেনে চলতে হবে।

ওষুধ ও হার্টের রিংয়ের মূল্য কমাতে হবে : গতকাল সচিবালয়ে ওষুধ ও হার্টের মূল্য নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ওষুধ ও হার্টের রিং, উভয়ের দাম নির্ধারণেই বৈঠক বসেছে। হৃদরোগীদের জীবনদায়ী চিকিৎসা সামগ্রী করোনারি স্টেন্টের (হার্টের রিং) দাম কমাতে হবে। একইসঙ্গে ওষুধের দাম কমানোর কথা বলেছেন তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App