×

জাতীয়

কিশোর গ্যাংয়ের গ্রুপ লিডারসহ চক্রের ২৭ সদস্যকে গ্রেপ্তার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৫:৫০ পিএম

কিশোর গ্যাংয়ের গ্রুপ লিডারসহ চক্রের ২৭ সদস্যকে গ্রেপ্তার

র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব-৩)প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সবসময় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রাশ সৃষ্টিকারী কিশোর গ্যাং গ্রুপ লিডারসহ বিপুল সংখ্যক কিশোর গ্যাং সদস্যকে গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। 

সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বেশ কয়েকটি ‘কিশোর গ্যাং’ গ্রুপের সদস্য কর্তৃক ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম লক্ষ্য করা যায়। কিশোর গ্যাং, গ্যাং কালচার, উঠতি বয়সি ছেলেদের মাঝে ক্ষমতা বিস্তারকে কেন্দ্র করে এক গ্রুপের সাথে অন্য গ্রুপের মারামারি করা বহুল আলোচিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। কোন ঘটনায় কেউ কোন প্রতিবাদ করলে ক্ষমতা জাহির করতে মারামারি করাসহ অনেক সময় খুন করতেও দ্বিধাবোধ করে না। 

এছাড়াও তারা বিভিন্ন এলাকায় কিশোর গ্যাং এর মাধ্যমে মাদক ব্যবসার সিন্ডিকেট গড়ে তোলে এবং নিরীহ মানুষদের কাছ থেকে অপহরণপূর্বক মুক্তিপণ আদায় করে থাকে। এ সকল সন্ত্রাসীদের হামলা ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক সাধারণ ডায়েরি ও মামলা রুজু হয়। অতি সম্প্রতি শাহজাহানপুর, সবুজবাগ, শ্যামপুর, বংশাল ও তার আশেপাশের এলাকায় বেশ কয়েকটি ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও অন্যান্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তথ্য পায় র‍্যাব-৩।ফলশ্রুতিতে  র‍্যাব-৩ এর টহল ও গোয়েন্দা কার্যক্রম বৃদ্ধি করা হয়। 

র‍্যাব-৩ এর গোয়েন্দা কার্যক্রমের মাধ্যমে রাজধানীর শাহজাহানপুর, সবুজবাগ, শ্যামপুর ও বংশাল থানাধীন এলাকায় কতিপয় কিশোর গ্যাং এর কার্যক্রম সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায়। জানা যায় যে, তারা দীর্ঘদিন যাবৎ এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের নামে পেশিশক্তি প্রদর্শন করে আসছে। তারা মাদক সেবন, সাইলেন্সার বিহীন মোটরসাইকেল চালিয়ে বিকট শব্দ করে জনমনে ভীতির সঞ্চার, স্কুল-কলেজে বুলিং, র‌্যাগিং, ইভটিজিং, ধর্ষণ, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাদক সেবন, অস্ত্র প্রদর্শন এবং অশ্লীল ভিডিও শেয়ারসহ নানাবিধ অনৈতিক কাজে লিপ্ত, যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নিশ্চিত ক্ষতির মুখে ধাবিত করছে। এরই প্রেক্ষিতে কিশোর গ্যাং এর বিপথগামী সদস্যদের আইনের আওতায় আনতে র‍্যাব-৩ সম্প্রতি সময়ে গোয়েন্দা নজরদারি আরও বাড়ায়। 

এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাত ৮টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত  র‍্যাব-৩ এর পৃথক পৃথক অভিযানিক দল গোয়েন্দা সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর শাহজাহানপুর, সবুজবাগ, শ্যামপুর ও বংশাল থানাধীন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে কিশোর গ্যাং রাব্বি গ্রুপের ৫ জন, হৃদয় গ্রুপের ৭ জন, মুন্না গ্রুপের ৩ জন, হাসান গ্রুপের ২ জন, এবং রকি গ্রুপের ১০ জনসহ সর্বমোট ২৭ জন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে বেশ কয়েকটি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। 

বিকেলে র‍্যাব-৩ টিকাটুলীর প্রধান কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের জানান,এদের প্রতিটি কিশোর গ্যাং গ্রুপের প্রায় ১৫-২০ জন সদস্য থাকে।রাব্বি গ্রুপটির সন্ত্রাসী মো. রাব্বির নেতৃত্বে দীর্ঘদিন যাবত পরিচালিত হয়ে আসছে। নিজেদের মধ্যে আন্ত-কোন্দলের কারণে তারা ২/৩টি গ্রুপে বিভক্ত হয়। হৃদয় গ্রুপটি হৃদয় এর নেতৃত্বে দীর্ঘদিন যাবত পরিচালিত হয়ে আসছে। গ্রেপ্তারকৃতরা রাজধানীর বংশাল ও আশাপাশ এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতো। 

এই গ্রুপের সন্ত্রাসীরা একাকী পথচারীদের আকস্মিকভাবে ঘিরে ধরে চাপাতিসহ ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী ছিনতাই করে দ্রুত পালিয়ে যায়। তারা বিভিন্ন সময় চাঁদাবাজিসহ আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঢাকা গুলিস্থান, বংশাল, চকবাজার এলাকাসহ আশপাশ এলাকায় দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে মারামারিসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতো। এছাড়াও তারা মাদক সেবনসহ বর্ণিত এলাকাসমূহে মাদক ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত ছিল। 

তিনি আরো জানান,এছাড়াও শাহজাহানপুর ও সবুজবাগ এলাকায় মুন্না এবং হাসান গ্রুপ দুইটি দীর্ঘদিন যাবত সন্ত্রাসী মো. মুন্না এবং হাসান এর নেতৃত্বে পরিচালিত হয়ে আসছে। এরা রাজধানীর শাহাজাহানপুর, সবুজবাগ, খিলগাঁও এবং এর আশেপাশের এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ইভটিজিং, মারামারিসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতো। এই গ্রুপের সদস্যরা সাইলেন্সার-বিহীন মোটরসাইকেল দ্বারা বিকট শব্দ করে খিলগাঁও ফ্লাইওভার এলাকায় জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে অপরাধ মূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।

গ্রেপ্তারকৃতরা কিশোর গ্যাং এর সদস্যরা পেশায় গাড়ির হেলপার ও ড্রাইভার, গ্যারেজ মিস্ত্রি, দোকানের কর্মচারী, নির্মাণ শ্রমিক, পুরাতন মালামাল ক্রেতা, সবজি বিক্রেতা হলেও মূল পেশার আড়ালে তারা মূলত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়িত ছিল। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ১২ জনের বিরুদ্ধে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন থানায় চুরি, ডাকাতির চেষ্টা, অপহরণ-পূর্বক মুক্তিপণ আদায়, মারামারি, ছিনতাই,  চাঁদাবাজি, মাদক, দস্যুতা, অস্ত্র ও হত্যা চেষ্টাসহ একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App