যৌন হয়রানির অভিযোগে সোমবার গভীর রাতে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক মোহাম্মদ মুরাদ হোসেন সরকারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় শিক্ষক মুরাদ হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে রাজধানীর লালবাগ থানায় মামলা করা হয়। সালমা হক নামের এক অভিভাবক তার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেছেন। মামলা নম্বর ১৭/৩৮।

মধ্যরাতে রাজধানীর কলাবাগানের বাসা থেকে ভিকারুননেসার আজিমপুর শাখার গণিতের এ জ্যেষ্ঠ শিক্ষককে গ্রেপ্তার করে লালবাগ থানা পুলিশ। গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন লালবাগ থানার ওসি খন্দকার মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন।

মামলার আবেদনে বলা হয়, আমার মেয়ে বর্তমানে ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের আজিমপুর দিবা শাখায় ৮ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। ২০২২ সালে আমার মেয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে অধ্যয়নকালীন সময়ে মুরাদ হাসান সরকার শ্রেণিতে গণিতের ক্লাস নেওয়ার সময় তার ব্যক্তিগত বসার ডেস্ক ছেড়ে চেয়ার টেনে নিয়ে আমার মেয়ের বসার বেঞ্চের সামনে নিকটে বসতো। আমার মেয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ক্লাস ক্যাপ্টেন ছিল এবং গণিতে মেধাবী ছিল। যে কোনো গণিত প্রতিযোগিতায় মেয়ের দিকে বিবাদী বেশি মনোযোগ দিত এবং আমার মেয়ের ব্যক্তিগত বইয়ের পিছন দিকে মেয়ের নাম লিখত। প্রায় সময় বিবাদী আমার মেয়ের মেধার বিষয়ে প্রশংসা সুলভ কথাবার্তা বলে মেয়েকে বিবাদীর ব্যক্তিগত কোচিং সেন্টারে পড়ার জন্য আগ্রহ সৃষ্টি করত। সেই প্রেক্ষিতে আমার মেয়ে গত বছর ৭ম শ্রেণিতে পড়ার সময় বিবাদীর ব্যক্তিগত কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়।

মামলার আবেদনে আরও বলা হয়, পরবর্তীতে বিবাদী প্রায় সময়ই কোচিং শেষে কৌশলে রেখে আমার মেয়েকে জড়িয়ে ধরে চুম্বন করতো এবং শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিত। এভাবে দিনের পর দিন চলতে থাকে এবং বিভিন্ন স্পর্শ কাতর স্থানে পোশাকের উপরে এবং ভিতরে হাত ঢুকিয়ে স্পর্শ করে চাপ দিত। মেয়ে জিন্স ও টি-শার্ট পরে কোচিং সেন্টারে আসলে বিবাদী সেগুলো পরিধান না করে ঢিলেঢালা সালোয়ার কামিজ পরে আসার জন্য বলত।

এর আগে সোমবার রাতে কলেজের পরিচালনা কমিটির সভায় সাময়িক বরখাস্তের পাশাপাশি পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে তিন সদস্যের উচ্চতর তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কমিটির জরুরি বৈঠকে এ দুই সিদ্ধান্ত এসেছে বলে জানিয়েছেন ভিকারুননেসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী। তিনি বলেন, সবার আগে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। আইনের নিয়মের ব্যত্যয় করে কোনো কিছু করতে পারব না।

গণিতের শিক্ষক মুরাদ হোসেনের বিরুদ্ধে গত ৭ ফেব্রুয়ারি কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে কোচিংয়ে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ করা হয়।

এদিকে শিক্ষক মুরাদ হোসেন বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা’ অভিযোগ করা হচ্ছে এমন দাবি করছেন কিছু অভিভাবক ও ছাত্রীরা। এ শিক্ষকের পক্ষে তারা ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আজ মঙ্গলবার সকাল ১১টায় সংবাদ সম্মেলন করার ঘোষণা দিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, মুরাদ হোসেন সরকার গ্রেপ্তার হওয়ার কিছুক্ষণ আগে ভোরের কাগজকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সেখানে তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার ও নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেছেন। ভিডিওটি দেখুন এখানে-