×

জাতীয়

জামানত ১০ গুণ বাড়ানোর প্রস্তাব, সমালোচনার মুখে ইসি

Icon

এন রায় রাজা

প্রকাশ: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৪:৩০ পিএম

জামানত ১০ গুণ বাড়ানোর প্রস্তাব, সমালোচনার মুখে ইসি

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামানত ১০ গুণ বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আর ইসির এমন সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন সাবেক ইসি, দল ও প্রার্থীরা। যেখানে জাতীয় নির্বাচনে এমপিদের জামানত ২৫ হাজার টাকা, সেখানে উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যানদের জামানত একলাফে ১০ গুন বাড়ানোর প্রস্তাবের তীব্র সমালোচনা করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে গত মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের ২৮তম কমিশন সভায় সংস্থাটি এ অনুমোদন দিয়েছে বলে জানিয়েছেন ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম। তিনি বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান/ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীদের জামানত বাড়িয়ে এক লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সেই সঙ্গে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাবে অনুমোদন করেছে কমিশন। তবে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে আগের মত ৫ হাজার টাকা জামানত বহাল রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, এটাই চূড়ান্ত নয়, কমিশন সভায় অনুমোদিত প্রস্তাবগুলো আইন মন্ত্রণালয়ের পাঠানো হবে। সেগুলো ভোটিং শেষে বিধিমালা সংশোধন হবে। 

বর্তমান নির্বাচন বিধিমালায় চেয়ারম্যান/ভাইস চেয়ারম্যান (পু.) ১০ হাজার ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের জামানত পাঁচ হাজার টাকা।

এসব বিষয়ে ইসির আইন সংশোধন কমিটির অন্যতম সদস্য অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেছেন, আসন্ন উপজেলা পরিষদের নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন বিধিমালা ও আচরণবিধিতে সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। মূলত ২০ বছর আগে যা ছিল এখন তো খরচ তাই থাকতে পারে না। তাছাড়া সব জিনিষের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় জামানতও সমন্বয় করা হয়েছে। 

আরো পড়ুন: উপজেলা চেয়ারম্যান পদে জামানত ১০ গুণ বাড়ছে

তাহলে এমপিদের জামানত ২৫ হাজার থেকে কি বাড়ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে অশোক কুমার দেবনাথ জানান, এমপিদের সে হিসেবে ২৫ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা করার প্রস্তাব আসছে। আর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের জামানতও বাড়ানো হবে একই হারে। সব কিছুর দাম বা মূল্য বেড়ে যাওয়ায় সে হিসাবে জামানতের পরিমাণও বাড়বে।

এদিকে আইন সংশোধন কমিটির তরফে বলা হয়েছে উপজেলাগুলোতে অনেক প্রার্থী কোন জনসমর্থন ছাড়াই ভোটে অংশ নেয়। তার জন্য ইসির ব্যালট ছাপানোসহ নানাবিধ খরচ করতে হয়। বেশী প্রার্থী হলে তাদের ভোট গণনাতেও কর্মী ও সময় বেশী লাগে। তাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণে ম্যাজিস্ট্রেট ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োগ করতে হয়। সব মিলিয়ে এসব জনসমর্থনহীন প্রার্থী রোধ করতেই এ উদ্যোগ নিয়েছে কমিশন। আর যেহেতু উপজেলাগুলো অনেক ক্ষমতার উৎস, সেজন্য তাদের জামানত নেহাত কমই ছিল। 

তবে উপজেলা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ২৫০ ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষর তুলে দেয়ার প্রস্তাবসহ একগুচ্ছ সংশোধনে অনুমোদন দিয়েছে সংস্থাটি। প্রথমত প্রাপ্ত ভোটের ৮ ভাগের বদলে ১৫ ভাগ ভোট না পেলে জামানত বাজেয়াপ্ত করা, চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানের নির্বাচনী ব্যয় বাড়িয়ে করা হয়েছে ২৫ লাখ টাকা। মনোনয়নপত্রে লিঙ্গ হিসেবে হিজরা অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। প্রয়োজনে নির্বাচন বন্ধ করা ও পুন:ভোটের বিষয়ে ইসির ক্ষমতা বাড়ানোর প্রস্তাব এসেছে। 

আরো পড়ুন: বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করতে হবে

নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধিত হবার ক্ষেত্রে প্রতীক অন্তর্ভূক্তি ও সংশোধন করার ক্ষমতা রাখা হয়েছে ইসির হাতে। প্রচারে পোস্টার এতদিন সাদা কালো ছিল, এবারে তা তুলে দিয়ে রঙিন পোস্টার প্রচার করার বিষয়টি অন্তর্ভূক্তির কথা বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রচারে ১টি মাইক, জনসভায় ৪টি মাইক ব্যবহার, শব্দ ৬০ ডেসিবেলের নিচে রাখা ও পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিশন সভা। নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানার নেতৃত্বে গঠিত আইন সংশোধন কমিটি প্রস্তাবগুলো এনেছে।

এদিকে স্থানীয় সরকারের তৃণমূল পর্যায়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের জামানত একলাফে ১০ গুন বাড়ানোর তীব্র সমালোচনা করেছে বাম দলগুলো। বাম দলগুলোর পক্ষে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছে, এদেশে গণতন্ত্র, নির্বাচন, ভোট এসব নেই বললেই চলে। বর্তমান সরকার নির্বাচন ব্যবস্থাপনা ধ্বংস করে প্রহসনে পরিণত করেছে। আর আওয়ামী লীগ সরকার স্থানীয় সরকারের এ ভোটে জামানতের টাকা একলাফে এতটা বাড়িয়ে যারা টাকার মালিক তাদেরই নির্বাচনে এনে নির্বাচনকে ধনীক শ্রেণীর প্রহসনে পরিণত করেছে। 

এর ফলে সাধারণ জনগণ, এলাকার জনপ্রিয় মানুষ লাখ লাখ, কোটি টাকা খরচ করে আর নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। এটা হবে ধনীক শ্রেণীর নির্বাচনী খেলা, এটাকে আমরা বাম দলগুলোর পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা জানাই। সরকারকে এহেন সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহ্বান জানাব। তা নাহলে বাম মোর্চার পক্ষ থেকে তীব্র আন্দোলনের হুমকি দেন তিনি।

আরো পড়ুন: একদিন ছুটি নিলেই মিলবে টানা চার দিনের ছুটি

সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, তৃণমূল স্তরে সাধারণত সাধারণ মানুষজন নির্বাচনে অংশ নেন। তাদের অনেকেই ১ লাখ টাকা দিয়ে মনোনয়ন কিনতে নাও পারেন। তাছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেখানে ২৫ হাজার টাকা জামানত, সেখানে উপজেলা চেয়ারম্যান/ ভাইস চেয়ারম্যানদের জামানত কিভাবে ১ লাখ করা হচ্ছে তা বোধোদয় হলো না। 

এর ফলে অনেক উপযুক্ত ও জনপ্রিয় প্রার্থী নির্বাচনে আসবে না। আবার সমন্বয় করতে গিয়ে ইসিকে এমপিদের জামানত ১ লাখ বা তার ওপর করতে হবে। সব মিলিয়ে নির্বাচনটা ধনীক শ্রেণীর হাতে চলে গেলে গণতন্ত্র সঠিকতা পাবে না।

এ বিষয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন আশাশুনি উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান অসীম চক্রবর্তী। তিনি মনে করেন গত নির্বাচনে জামানত ১০ হাজার ছিল, সেখানে এবারের ভাইস চেয়ারম্যানদের জামানত ৭৫ হাজার করা হচ্ছে। এটা কোনোভাবে গণতান্ত্রিক দেশে মেনে নেয়া যায় না। এর ফলে উপযুক্ত প্রার্থীরা ভোটে অংশ নিতে পারবেন না বলেও জানান তিনি। নির্বাচন কমিশনকে জামানত পুন:বিবেচনার দাবি করেন এ জনপ্রতিনিধি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App