×

জাতীয়

বসন্ত বাতাসে ভালোবাসার দিন আজ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮:৩২ এএম

বসন্ত বাতাসে ভালোবাসার দিন আজ

পাতাঝরা দিন ভালোবাসার ডাক দিয়ে যায়। মনের অজান্তে ভেতর থেকে ভেসে আসে কবি নির্মলেন্দু গুণের লেখা কবিতার লাইনগুলো : ‘হয়তো ফুটেনি ফুল রবীন্দ্র-সংগীতে যতো আছে,/ হয়তো গাহেনি পাখি অন্তর উদাস করা সুরে বনের কুসুমগুলি ঘিরে।/আকাশে মেলিয়া আঁখি তবুও ফুটেছে জবা,/দুরন্ত শিমুল গাছে গাছে,/তার তলে ভালোবেসে বসে আছে বসন্তপথিক।’

কিংবা কবি জীবনানন্দ দাশের মতো প্রেমিক হৃদয় বলে উঠবে : ‘হৃদয়, তুমি সেই নারীকে ভালোবাসো, তাই/আকাশের ঐ অগ্নিবলয় ভোরের বেলা এসে/প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছে অমেয় কাল হৃদয় সূর্য হবে/তোমার চেয়েও বেশি সেই নারীকে ভালোবেসে।’ 

আজ বসন্ত আজ ভালোবাসার দিন। কোকিলের কুহুতানে জাগা মুখরিত বাংলার বিস্তীর্ণ প্রান্তরে আজ পহেলা ফাগুনের দিনে হবে ভালোবাসার জয়গান। হৃদয় থেকে হৃদয়ের কথাগুলো আজ ভাষা পাবে। প্রেমিক তার প্রেমিকাকে কিংবা প্রেমিকা তার প্রেমিককে আমি তোমাকে ভালোবাসি কথাটি প্রকাশ করবে ‘হ্যাপি ভ্যালেনটাইন’স ডে’ উচ্চারণ করে।

বসন্ত ও ভালোবাসা মিলেমিশে একাকার হয়ে রাজধানীসহ সারাদেশ আজ মেতে উঠবে ফাল্গুনী আমেজে। ফাগুনের আগুনলাগা উচ্ছ্বাস প্রিয়তমের হাতে হাত রেখে প্রিয়ার কোমল হৃদয় ব্যাকুল হয়ে উঠবে ঘরবাঁধার স্বপ্নে। ঋতুরাজের দখিনা বাতাস তাদের হৃদয়-জমিনে ভালোবাসার ঢেউ তুলবে। বাসন্তী রঙের শাড়িতে খোঁপায় হলুদ গাঁদা আর মাথায় ফুলের টায়রার সুষমার শৈল্পিকতা ফুটে উঠবে তরুণীদের। 

তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তরুণরাও কম যাবে না। তরুণরাও ধরা দেবে হলুদ পাঞ্জাবিসমেত একরাশ ফাল্গুনী সাজে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ, টিএসসি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সর্বত্রই তারুণ্যের উন্মাদনার ঢল নামবে। বসন্ত আর ভালোবাসার মিশেলের এমন দিনকে বরণ করতে ফুলের দোকান আর মার্কেটের শাড়ি-পাঞ্জাবির দোকানগুলোতে গত কয়েকদিন ধরেই বেশ ভিড়।

বসন্তমিশ্রিত ভালোবাসার এমন দিনে পরস্পরের শুভেচ্ছায় সিক্ত হবে দুজন। ফুল, কার্ড, চকলেট বিনিময়ের পাশাপাশি কবিতা ও ছন্দমিশ্রিত ক্ষুদে বার্তায় ভরে যাবে মুঠোফোনের ইনবক্স। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে যাবে পরানের গহিনের উষ্ণতা। বিনোদন কেন্দ্র ও পার্কসহ অনেক জায়গায় ভালোবাসা দিবস এবং বসন্তের ছোঁয়া থাকবে।

ফাগুনের আগুনরাঙা ভালোবাসা দিন : ভালোবাসার জন্য মানুষ পাড়ি দিতে চেয়েছে কালাহারি। দুরন্ত ষাড়ের চোখে লাল কাপড় বেঁধে আনতে তুলে চেয়েছে একশ আটটি নীল পদ্ম। সম্রাট শাহজাহান প্রিয়তমা স্ত্রী মমতাজের জন্য বানিয়েছেন ‘তাজমহল।’ রাধা-কৃষ্ণ, লাইলী-মজনু, ইউসুফ-জুলেখার প্রেমকাব্য এখনো মানুষের মুখে মুখে। ভালোবাসার মানুষের পায়ে হৃদয়ের সবটুকু উচ্ছ্বাস ঢেলে দিতে উদগ্রীব চিত্ত গেয়ে ওঠে কবিগুরুর গান, ‘চরণ ধরিতে দিয়ো গো আমারে, নিয়ো না, নিয়ো না সরায়ে/ জীবন মরণ সুখ দুখ দিয়ে বক্ষে ধরিব জড়ায়ে।’

তবে প্রিয় বিরহে আকুল হৃদয়েও রয়েছে হারানোর ভয়- ‘মনে হয় তবু বারে বারে/ এই বুঝি এলে মোর দ্বারে/ সে মধুর স্বপ্ন ভেঙো না কো।’ অবশ্য আত্মপ্রত্যয়ী মনেই রয়েছে এর উত্তর। কবি নির্মলেন্দু গুণের ভাষায়, ‘হেমের মাঝে শুই না যবে/ প্রেমের মাঝে শুই/ তুই কেমন কর যাবি?/ পা বাড়ালেই পায়ের ছায়া/ আমাকেই তুই পাবি।’

ফাগুনের আগুনরাঙা দিনে ভালোবাসার রঙে রাঙিয়ে নগর জীবন থেকে পাড়া গাঁয়ে প্রেমিক হৃদয় গাইবে, ভালোবাসি, ভালোবাসি। গৎখালীর গোলাপ বাগান খালি হয়ে যাবে আজকের ভালোবাসার উৎসবে। শুধু রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাসের ‘মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেনই নন; ভার্চুয়াল এই যুগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টুইটার, ম্যাসেঞ্জার- সব একাকার হয়ে যাবে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের ভালোবাসাময় শুভেচ্ছায়। ডিজিটালি আবেগেও ভাসবে পৃথিবী।

সেন্ট ভ্যালেন্টাইন থেকে ভ্যালেন্টাইন ডে : বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উদযাপনের ইতিহাস বেশ পুরনো। এ নিয়ে প্রচলিত রয়েছে অনেক কাহিনী। তবে সবচেয়ে বেশি যে গল্পটি প্রচলিত সেটি হচ্ছে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামে একজন রোমান ক্যাথলিক ধর্মযাজকের ২৬৯ খ্রিস্টাব্দের একটি ঘটনা। সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামে ওই ধর্মযাজক চিকিৎসক ছিলেন। 

তখন রোমান সম্রাট ছিলেন দ্বিতীয় ক্লডিয়াস। বিশ্বজয়ী রোমানরা একের পর এক রাষ্ট্র জয় করে চলেছে। যুদ্ধের জন্য রাষ্ট্রে বিশাল সৈন্যবাহিনী গড়ে তোলা দরকার। কিন্তু লোকজন বিশেষ করে তরুণরা এতে উৎসাহী নয়। সম্রাটের ধারণা ছিল পুরুষরা বিয়ে করতে না পারলে যুদ্ধে যেতে রাজি হবে। তিনি তরুণদের জন্য বিয়ে নিষিদ্ধ করলেন। কিন্তু প্রেমপিয়াসী তারুণ্যকে কি নিয়মের বেড়াজালে আবদ্ধ করা যায়! এগিয়ে এলেন সেন্ট ভ্যালেন্টাইন।

ভ্যালেন্টাইন প্রেমে আবদ্ধ তরুণ-তরুণীদের বিয়ের ব্যবস্থা করলেন। কিন্তু এক দিন ধরা পড়ে গেলেন ভ্যালেন্টাইন। তাকে জেলে নেয়া হলো। দেশজুড়ে এই খবর ছড়িয়ে পড়লে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা দিল। অনেকেই ভ্যালেন্টাইনকে জেলখানায় দেখতে যান। ফুলেল শুভেচ্ছা জানাতে আসেন। কারাগারের জেলারের একজন অন্ধ মেয়েও ভ্যালেন্টাইনকে দেখতে যেত। চিকিৎসক ভ্যালেন্টাইন মেয়েটির অন্ধত্ব দূর করলেন। তাদের মধ্যেও সৃষ্টি হলো হৃদয়ের বন্ধন। 

ধর্মযাজক হয়েও নিয়ম ভেঙে তিনি প্রেম করেন। আইন ভেঙে তিনিও বিয়ে করেন। খবর যায় সম্রাটের কানে। তিনি ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদণ্ড দেন। দিনটি ছিল ২৬৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি। ৪৯৬ খ্রিস্টাব্দে রোমের রাজা পপ জেলুসিয়াস এই দিনটিকে ভ্যালেন্টাইন দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন।  

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App