×

জাতীয়

৬০ বছর পর ফের চালু হলো রাজশাহী-মুর্শিদাবাদ নৌরুট

Icon

কাগজ প্রতিবেদক, রাজশাহী

প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৭:১৭ পিএম

৬০ বছর পর ফের চালু হলো রাজশাহী-মুর্শিদাবাদ নৌরুট

ছবি: সংগৃহীত

প্রায় ৬০ বছর আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া ভারতের মুর্শিদাবাদ থেকে বাংলাদেশের রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সুলতানগঞ্জ নৌবন্দর আবার চালু হয়েছে। রবিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বহুল প্রতীক্ষিত এই নৌ বন্দরটি উদ্বোধন হয়।

ইন্দো-বাংলাদেশ প্রটোকল রুট নং ৫ ও ৬ অর্থাৎ আরিচা-রাজশাহী-সুলতানগঞ্জ-মায়া-ধুলিয়ান এর অংশের সুলতানগঞ্জ অংশের প্রধান অতিথি থেকে নৌ রুটের উদ্বোধন করেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি।

উদ্বোধন উপলক্ষে সুলতানগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বাংলাদেশ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ এক সুধী সমাবেশের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা, আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরোশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী, রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান আসাদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল ওদুদ, রাজশাহী-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল কালাম আজাদ।

অনুষ্ঠানে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহম্মেদ মোস্তফার সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, বিআইডব্লিউটিয়ের যুগ্মসচিব সেলিম ফকির।

উদ্বোধনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বিআইডব্লিউটিএ প্রশাসন কর্তৃপক্ষ। এ উপলক্ষে গোদাগাড়ীতে সাজ সাজ রব। ইতোমধ্যে শুক্রবার রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদসহ জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বন্দর স্থল পরিদর্শন করেছেন। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, কাস্টমস এর কর্মকর্তা, গোদাগাড়ী উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা চেয়ারম্যান, গোদাগাড়ী পৌরসভার মেয়র নৌ রুটের উদ্বোধনী পর্বকে সাফল্য মণ্ডিত করার জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন।

সুলতানগঞ্জ নৌ বন্দরটি উদ্বোধনের মধ্যদিয়েই ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘির মায়া ঘাটের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য শুরু হয়। ভারত থেকে একটি ভেসেলে পাথর আমদানির মাধ্যমে বন্দরটি চালু হওয়ার কথা রয়েছে।

এর আগে বন্দর উদ্বোধন উপলক্ষে একই দিন দুপুর বারোটায় সুলতানগঞ্জ হাই স্কুলে এক জনসভা অনুষ্ঠিত হয়।

নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সূত্রে জানা যায়, বন্দর উদ্বোধনের পর থেকে ৫টি ট্রিপ বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে পণ্য আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে সম্পৃক্ত থাকবে। প্রাথমিক পর্যায়ে এই পথে ভারত থেকে সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল, পাথর, মার্বেল, খনিজ বালু ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের খাদ্য সামগ্রী দেশে আসবে।

অন্যদিকে এই পথে বাংলাদেশ থেকে বস্ত্র, মাছ, পাট ও পাটজাত পণ্য ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের কৃষিপণ্য ভারতে যাবে। এসব পণ্য মূলত বিভিন্ন স্থলবন্দরের মাধ্যমে সড়ক ও রেলপথে বাংলাদেশে আমদানি করা হয়।

সুলতানগঞ্জ থেকে ভারতের ময়া নৌঘাটের নদীপথে দূরত্ব মাত্র ১৭ কিলোমিটার। সুলতানগঞ্জ নৌঘাটটি রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়ক থেকে মাত্র এক কিলোমিটার ভেতরে পদ্মা মহানন্দার মোহনায় অবস্থিত। সারা বছর সুলতানগঞ্জ পয়েন্টে পদ্মায় গভীর পানি থাকে। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের ময়া নৌঘাটটি মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গিপুর মহকুমা শহরের কাছে ভারতীয় ৩৪নং জাতীয় সড়কের সঙ্গে যুক্ত। ফলে সুলতানগঞ্জ-ময়া পথে নৌবাণিজ্য শুরু হলে পরিবহণ খরচ অনেকাংশে কমবে।

স্থানীয়রা জানান, ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আগপর্যন্ত সুলতানগঞ্জ-ময়া ও গোদাগাড়ী ও ভারতের লালগোলা নৌঘাটের মধ্যে নৌপথে বিপুল বাণিজ্য চালু ছিলো। বাংলাদেশ থেকে এই পথে ভারতে বিপুল পরিমাণ পাট রপ্তানি হতো। বর্তমানে রাজশাহীতে প্রচুর মাছ উৎপাদন হয়। ফলে এই নৌপথে ভারতে মাছ রপ্তানি করা সম্ভব হবে।

ইতোমধ্যেই অনেক ব্যবসায়ী সুলতানগঞ্জ নৌ পথে ভারতের সঙ্গে ব্যবসা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। ফলে নৌ রুটটি এই অঞ্চলের সব শ্রেণী পেশার মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের একটি উৎস হিসেবে কাজ করবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App