×

জাতীয়

নৌ সদস্য পরিচয়ে একে একে ১৩ বিয়ে, ধরা ১৪ নম্বরে

Icon

কাগজ ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৫:৪৫ পিএম

নৌ সদস্য পরিচয়ে একে একে ১৩ বিয়ে, ধরা ১৪ নম্বরে

ময়মনসিংহে প্রতারণার অভিযোগে মহিদুল ইসলাম (২৭) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ২০১৬ সালে শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে নৌবাহিনীর অফিস সহায়ক পদের চাকরি হারান তিনি। এরপর বিভিন্ন প্রতারণার মাধ্যমে ১৩টি বিয়ে করেন। বিয়ে করেই শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে প্রলোভন দেখিয়ে ধাপে ধাপে হাতিয়ে নেন প্রায় অর্ধকোটি টাকা। 

শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করলে বেরিয়ে আসে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য। মহিদুলের গ্রেপ্তারের খবরে শনিবার ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা কার্যালয়ে এসে হাজির হন প্রতারিত ছয় স্ত্রী ও তাদের পরিবার। শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে প্রেস বিফ্রিংয়ে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মেদ ভূঞা এসব তথ্য জানান। 

তিনি আরো বলেন, এক ভুক্তভোগী নারী ও তাঁর পরিবারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ অভিযানে নামে। প্রযুক্তির সহায়তায় গতকাল রাতে গাজীপুর জেলার চন্দ্রা এলাকায় অভিযান চালিয়ে মহিদুল ইসলাম এবং সহযোগী ঘটক কুদ্দুস আলীকে তারাকান্দা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

ভুক্তভোগীরা জানান, নৌবাহিনীর সদস্য পরিচয়ে প্রথমে বিয়ে; তারপর বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে পরিবারের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়াই ছিল গ্রেপ্তার হওয়া মহিদুল ইসলাম ওরফে মইদুলের উদ্দেশ্য। প্রতিটি পরিবার থেকে ৩ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।

মহিদুল ইসলাম মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর থানার বাসিন্দা। বিগত কয়েক বছরে প্রতারণা করে ময়মনসিংহে ছয়টি, মানিকগঞ্জ ও টাঙ্গাইলে তিনটি করে—এছাড়া কিশোরগঞ্জে একটি বিয়ে করেন। বিয়ে করে পরিবারের কাছ থেকে প্রলোভন দেখিয়ে ৫০ লাখ টাকার মতো হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। এবার তিনি ১৪তম বিয়ের প্রস্তুতি নিতে গিয়ে ভুক্তভোগী এক নারীর অভিযোগে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। 

অনার্স সম্পন্ন করা প্রতারণার শিকার এক নারী বলেন, তাদের বাড়ির পার্শ্ববর্তী এক ঘটকের মাধ্যমে মহিদুল প্রথমে বিয়ের প্রস্তাব পাঠান। পরিবারের লোকজন প্রথমে রাজি না হলেও তার জোরালো সুপারিশে এক মাস পর রাজি হয়ে যান। কারণ, ছেলে নৌবাহিনীতে চাকরি করেন। তিনি তখন নৌবাহিনীর পোশাক পরা ছবিও পাঠান। ভাঙনে বাড়িঘর ভেঙে যাওয়াসহ তার মা-বাবা মারা যাওয়ায় তিনি তার চাচাতো ভাই পরিচয়ে একজনকে নিয়ে গেলে ২০২৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর বিয়ে সম্পন্ন হয়। 

বিয়ের পরপরই তিনি আশুলিয়ায় জমি কিনছেন বলে পরিবারের কাছ থেকে চার লাখ টাকা নিয়ে যান। দুই মাস ১৫ দিন পরপর বাড়িতে যাতায়াত ছিল তার। এরপর থেকে তিনি খুব একটা আসতেন না। এরপর অসুখ ও নতুন বাসায় ফার্নিচার কিনবেন বলে আরো দুই লাখ টাকা নেন তার পরিবারের কাছ থেকে। 

ওই নারী আরো বলেন, ‘হঠাৎ একদিন আমাদের পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নে এমন পাত্রের কাছে একটি মেয়ের বিয়ে হয়েছে, সে বিষয়টি শুনে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারি, মহিদুল সেখানেও বিয়ে করেছেন। পরে খোঁজখবর নিতে মানিকগঞ্জে তাঁর বাড়িতে যাই। সেখানে গিয়ে তাঁর মাকে পাই। কিন্তু তিনি চাকরি করেন না, সেটা নিশ্চিত হই। আজকে ডিবি অফিসে এসে জানতে পারি, তিনি ১৩টি বিয়ে করেছেন। এখন যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। আমাদের দাবি, তার কঠিন বিচার হোক। যেন আর কোনো মেয়ের জীবন এভাবে নষ্ট না হয়।’ 

আরেক ভুক্তভোগী নারী বলেন, ‘বাবা-মায়ের তিন মেয়ের মধ্যে আমি সবার ছোট। বাকি দুই বোনের সরকারি চাকরিজীবী ছেলের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে। তাই বাবা-মা আমাকে সরকারি চাকরি করে, এমন ছেলে মহিদুলের কাছে বিয়ে দিয়েছেন। বাবা-মাকে ম্যানেজ করে তাড়াহুড়া করে মহিদুল আমাকে বিয়ে করে।’

এই নারী আরো বলেন, ‘বিয়ের পর জমি কিনছে বলে বাবার কাছ থেকে দুই লাখ টাকা ধার নেয় সে। এরপর আমার এক আত্মীয়কে চাকরি দেয়ার কথা বলে আরো কয়েক লাখ টাকা নেয়। মোট আট লাখ টাকা সে নেয়। পরে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। ডিবি অফিস থেকে তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি অবগত করলে আমরা এসে জানতে পারি, সে সব মিলিয়ে ১৩টি বিয়ে করেছে। তার কাছ থেকে টাকা উদ্ধারসহ যেন কঠিন বিচার হয়—এটাই আমাদের দাবি।’ 

সুখের আশায় এমন প্রতারকের সঙ্গে সন্তানের বিয়ে দিয়ে এখন অনুশোচনায় ভুগছেন এক বাবা। তিনি বলেন, ‘মেয়ে বিয়ে দিয়ে যে প্রতারণার শিকার হব, তা ভাবতে পারেনি। নিজেকে আজকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে। আমার মেয়েটা অনেকটা প্রতিবন্ধী। সে মেয়েটার কপাল এমন হবে, ভাবতে পারেনি। লোভের মধ্যে পড়ে মেয়েটার জীবনটা আমি শেষ করে দিলাম। মহিদুল আমার কাছ থেকে কিছু টাকা নেয়ার পরে আর যোগাযোগ রাখেনি। অসহায় বাবা হিসেবে আমার একটাই দাবি, সে যেন কোনোভাবে পার না পায়।’ 

ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মেদ ভূঞা বলেন, গ্রেপ্তার দুজনের কাছ থেকে প্রতারণা করার কিছু ছবি এবং আইডি কার্ড উদ্ধার করা হয়। তাদের থেকে তথ্য জেনে প্রতারিত হওয়া পরিবারগুলোকে জানানো হয়। এরপর প্রতারিত হওয়া ছয়টি পরিবারে আজকে উপস্থিত হয়। ওই দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করা হয়েছে। পুলিশ সুপার আরো বলেন, সার্বিক বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আরো গভীরে গিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। সন্তানদের বিয়ের ব্যাপারে পরিবারকে আরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। 

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App