স্বাস্থ্যমন্ত্রী
আমাদের চিকিৎসকরা কোনো অংশে কম নন
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০২:৫৮ পিএম
প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার রোগী চিকিৎসা নিতে দারস্থ হন প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ বিভিন্ন উন্নত দেশে। দেশের চিকিৎসায় আস্থাহীনতার কারণে তারা বাইরের দেশে যান বলে ধারণা করা হয়। তবে সেই রেকর্ড ভেঙে এবার বাংলাদেশ সাক্ষী হলো এক বিরল ঘটনার। ভারতে চিকিৎসায় সফলতা না পাওয়া নাকে ক্যান্সার আক্রান্ত এক রোগীকে বাংলাদেশে এনে তার নাক পুনর্গঠন করেছেন প্লাস্টিক সার্জনরা। এই প্রথম বাইরের দেশের কোনো রোগীকে সরকারের হস্তক্ষেপে দেশে এনে এমন চিকিৎসার সফলতার গল্প এটিই প্রথম। এই সফলতা দেখেই বলা যায়, আমাদের দেশের চিকিৎসকরা বিশ্বের যেকোনো দেশের চিকিৎসকদের চাইতে কোনো অংশে কম নয়। কাজ করার মত পরিবেশ না পাওয়ার কারণেই আমাদের চিকিৎসকরা সুযোগ পান না।
শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে এমন সফলতার গল্প তুলে ধরে এসব কথা বলেন, ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বায়ক ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।
মন্ত্রী বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ ও ভুটান সরকার যৌথভাবে গত বছরের সেপ্টেম্বরে থিম্পুতে বাংলাদেশি চিকিৎসকদের মাধ্যমে একটি প্লাস্টিক সার্জারি ক্যাম্পের আয়োজন করেছিল। সেখানে ‘কার্মা ডেমা (২৩)’ নামে ওই রোগীকে দেখি। তখন সেখান থেকেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ওই রোগীকে দেশে নিয়ে এসে চিকিৎসা দেয়াড় বিষয়ে কথা বলি এবং তিনি সঙ্গে সঙ্গে সম্মতি দেন।
আরো পড়ুন: তৃণমূল পর্যায়ে চিকিৎসা উন্নতি করাই হলো আমার প্রথম কাজ
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, নেপালের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গেও আমার কথা হয়েছে, আমরা তাদের দেশে গিয়েও বার্ন এবং প্লাস্টিক সার্জারির এমন জটিল রোগী নিয়ে কাজ করতে চাই। বিশেষ করে সার্ক কান্ট্রিতে এমন কাজ করবো। ভুটানে ১০-১৫ বেডের একটি বার্ন ইউনিট করার জন্য তাদের সঙ্গে একটি চুক্তি করবো। প্রধানমন্ত্রীও এবিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন।
প্রতিবছর দেশ থেকে অনেক রোগী চিকিৎসার জন্য ভারতসহ বিভিন্ন উন্নত দেশে ছুটে যান। দেশে চিকিৎসা নেয়ার আস্থার জায়গাটা কেনো কম? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, কেউ যদি পরিবারের কাউকে চিকিৎসার জন্য বাইরে নিয়ে যেতে চায় তাহলেতো তাকে আটকাতে পারি না। তবে আমরা এরকম আরও কিছু কাজ করলে সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরে আসবে বলে মনি করি।
সংবাদ সম্মেলনের উপস্থিত থাকা ‘কার্মা ডেমা’ নামে ওই তরুণী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ সকল চিকিৎসকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, সার্জারির আগে আমি খুব টেনশনে ছিলাম। তবে সার্জারির রেজাল্ট নিয়ে ভালো ফিল করছি। এখানকার ট্রিটমেন্ট অনেক ভালো ছিলো। এখন অনেক ভালো ফিল করছি।
বার্ন ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক প্রদীপ চন্দ্র দাস জানান, ১০ বছর আগে কার্মা ডেমার নাকের গহ্বরে ক্যানসার শনাক্ত হয়। তার চিকিৎসা ভুটানে সম্ভব ছিল না। তিনি টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। ওই হাসপাতালে তাকে কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি দেয়া হয়। একপর্যায়ে তার নাকের ভেতরে পচন দেখা দেয় এবং নাকের আকার-আকৃতি অস্বাভাবিক হয়ে যায়।
নাকের আকার ঠিক করার জন্য নতুন করে টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে ভর্তি হন কার্মা। সেখানে তার নাকে দুবার অস্ত্রোপচার হয়। কিন্তু তিনি আর আগের স্বাভাবিক চেহারা ফিরে পাননি। চিকিৎসকদের ভাষায়, নাক পুনর্গঠন হয়নি। পরে তিনি ভুটান চলে যান।
এরপর ৯ জানুয়ারি কারমার অস্ত্রোপচার হয়েছে। তার শরীরের তরুণাস্থি ও হাতের চামড়া নিয়ে নাক পুনর্গঠন করা হয়েছে। অস্ত্রোপচারে সময় লেগেছিল আট ঘণ্টা।