×

জাতীয়

বর্ণিল আয়োজনে শুরু হলো জাতীয় পিঠা উৎসব

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২৪, ১০:১৭ পিএম

বর্ণিল আয়োজনে শুরু হলো জাতীয় পিঠা উৎসব

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ যেন একখণ্ড গ্রাম। এর বিস্তৃত মাঠজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে গ্রামীণ আদলে গড়া অনেকগুলো কুড়েঘর। যেখানে বাঁশ-বেত ও ছনের তৈরি ঘরগুলোতে শোভা পাচ্ছিল ভাপা থেকে চিতই, লবঙ্গলতিকা, কুসুমকলি, মালপোয়াসহ নানা স্বাদ ও বর্ণের বাহারি পিঠা। যেখান থেকে খাদ্যরসিকরা পছন্দের পিঠা তুলে নিচ্ছেন নিজেদের পাতে। এমন মনোহর আবহের মধ্যে শোনা গেল ঢাক-ঢোলের বাদন। বিশেষ কৌশলে শরীর দুলিয়ে বাদ্যযন্ত্র দুটিতে শব্দের নিনাদ ছড়িয়ে দেন ঢাকি ও ঢুলির দল। চলতে থাকে প্রাণের স্পন্দন জাগানো ঢাক-ঢোলের শব্দধ্বনির লড়াই। 

এর কিছুক্ষণ পরেই লাঠিয়ালদের লাঠি খেলায় মজে যায় দর্শক মন। শুধু কি তাই! বিস্তৃত প্রান্ত জুড়ে ভেসে বেড়িয়েছে লোকায়ত গানের সুর। পরিবেশিত হয়েছে নয়ন জুড়ানো লোকনৃত্য। আর এভাবেই শেকড়ের আবাহনে শুরু হলো জাতীয় পিঠা উৎসব। 

সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে বুধবার (৩১ জানুয়ারি) থেকে ১১ দিনব্যাপী এ বর্ণিল আয়োজনের সূচনা হয়। 

অন্যদিকে একই দিনে জেলা শিল্পকলা একাডেমির তত্ত্বাবধানে ঢাকার সমান্তরালে দেশের ৬৪ জেলায় শুরু হওয়া উৎসব চলবে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এবারের উৎসব প্রতিপাদ্য ‘মাছে ভাতে বাঙালি, ঐতিহ্যমন্ডিত পিঠাপুলি/রন্ধন আর পিঠার বাহারে শিল্পী আছে ঘরে ঘরে’। দেশের নানা প্রান্তের পিঠা শিল্পীরা রকমারি পিঠা নিয়ে হাজির হয়েছেন উৎসবে। তারা মেলে ধরছেন নানা স্বাদ ও বৈচিত্র্যের অঞ্চলভিত্তিক বিশেষায়িত ও লুপ্তপ্রায় পিঠাশিল্পকে।

বুধবার শীতের হিম ছড়ানো বিকেলে একাডেমি মাঠের বাউলকুঞ্জে রঙিন বেলুন উড়িয়ে উৎসব উদ্বোধন করেন অতিথিরা। এরপর অতিথিরা মূল মঞ্চে যাওয়ার পর অনুষ্ঠিত হয়েছে লাঠিয়ালদের লাঠি খেলা। লাঠি খেলা শেষ হতেই ঢাকের তালে ঢাকী নৃত্য পরিবেশন করে শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীদল। 

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সংস্কৃতি সচিব খলিল আহমদ। আরো অতিথি ছিলেন একুশে পদকজয়ী নাট্যজন আতাউর রহমান। সভাপতিত্ব করেন একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির সচিব সালাহউদ্দিন আহাম্মদ।

কথনপর্বে অতিথিরা বলেন, বাঙালি সংস্কৃতির স্রোতধারায় বাঙালির কাছে আনন্দ ও উদযাপনের প্রতীকে পরিণত হয়েছে পিঠা। এই পিঠা পুলির বাংলাদেশ আমাদের দীর্ঘকালের পরিচয় বহন করে। তাই তো উৎসব-পার্বণে পিঠা অনিবার্য উপাদান হিসেবে আপন সংস্কৃতির অংশ হয়ে আছে। পিঠার নামে যেমন বৈচিত্র্য রয়েছে তেমনি স্বাদে-গন্ধেও রয়েছে বিশেষত্ব। ঐতিহ্যবাহী গ্রাম বাংলার বাহারি পিঠা খেয়ে একসময় পাড়া-মহল্লার ছোট-বড় সকলেই আনন্দে মেতে উঠত। কিন্তু নাগরিক জীবনে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষয়িষ্ণু হচ্ছে লোকায়ত সেই জীবনধারা। শহরের ব্যস্তময় জীবনের গর্ভে কিংবা বাড়ির উঠোনে পিঠা তৈরির সেই আমেজ ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। সেই বাস্তবতায় অঞ্চলভিত্তিক বিশেষায়িত ও লুপ্তপ্রায় পিঠাশিল্পকে তুলে আনার লক্ষ্যে রাজধানীর পাশাপাশি  দেশব্যাপী এ উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। 

উদ্বোধনী পর্ব শেষে উপস্থাপিত হয়েছে নাচ-গান ও কবিতার সজ্জিত বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এতে একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন- অনিমা মুক্তি গোমে, আবুবকর সিদ্দীক, মাটি রহমানসহ একঝাঁক কণ্ঠশিল্পী। সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে ভঙ্গিমা ড্যান্স থিয়েটার ও নৃত্যালোক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। কবিতার দোলায়িত ছন্দোময় আবৃত্তি পরিবেশন করেন ডালিয়া আহমেদ, রেজিনা ওয়ালী লীনা ও জাহিদুল কবির। 

উৎসবে অংশগ্রহণ করছেন বিভিন্ন জেলার প্রান্তিক পর্যায়ের পিঠাশিল্পীরা। পারিবারিক ঐতিহ্য ধরে পরিবারের জন্য পিঠা তৈরি করেন এবং লুপ্তপ্রায় পিঠাকে বংশ পরম্পরায় ধরে রেখেছেন এমন পিঠাশিল্পীদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে উৎসবে। সেই বাস্তবতায় সকল জেলার পিঠাশিল্পীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রতিদিন ২ জন করে শিল্পী পিঠা উৎসবে একটি স্টলে অংশগ্রহণ করবেন এবং মূল্যায়ন কমিটি পিঠার গুনমান, ভিন্নতা এবং স্বাদ যাচাই করে নম্বর প্রদান করবেন। সেই নম্বরের ভিত্তিতে প্রথম, দ্বিতীয় ও ৩য় পুরস্কৃত হবেন। 

এবার পিঠা উৎসবে থাকছে ৫০টির বেশি স্টল। আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলমান উৎসব প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে শুরু হয়ে চলবে রাত নয়টা পর্যন্ত। বিকেল থেকে শুরু হবে লোকায়ত ধারার নাচ-গানের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App