×

জাতীয়

সিলেট গণপূর্তের ৮০ ভাগ কাজ ডেল্টা কনসোর্টিয়ামে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১২:৩৯ এএম

সিলেট গণপূর্তের ৮০ ভাগ কাজ ডেল্টা কনসোর্টিয়ামে

গণপূর্তের কাজ পাচ্ছে ডেল্টা ইঞ্জিনিয়ার এন্ড কনসোর্টিয়াম

ই-টেন্ডারের আইনি মারপ্যাঁচে ঘুরেফিরে একই প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে সিলেট গণপূর্ত অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে। বার্ষিক লেনদেন (টার্নওভার) দেখে কাজ দেয়ায় প্রতিষ্ঠানটি বেশি কাজ পাচ্ছে। ডেল্টা ইঞ্জিনিয়ার এন্ড কনসোর্টিয়াম নামের এ প্রতিষ্ঠান সিলেট জোনের প্রায় ৮০ ভাগ কাজ বাগিয়ে নিয়েছে বলে স্থানীয় ঠিকাদাররা অভিযোগ করেছেন। সরকারি কেনাকাটায় স্বচ্ছতা আনতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া নির্দেশনাও মানছে না সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের অধিকাংশ এ ঠিকাদারি কোম্পানির কাছে চলে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ সিলেটের ঠিকাদাররা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ঠিকাদার জানিয়েছেন সিলেট গণপূর্তের বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. নুরুল আমিন মিয়া কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে চট্টগ্রামের ডেল্টা ইঞ্জিনিয়ার এন্ড কনসোর্টিয়াম নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে উঠে। সেই সখ্যতায় সিলেটে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে যোগদানের পর থেকে সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের প্রায় ৮০ ভাগ কাজ ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্দ দেয়ার অভিযোগ করেন সিলেটের একাধিক ঠিকাদার। তবে এ ব্যাপারে গণপূর্ত অধিদপ্তর সিলেটের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. নুরুল আমিন মিয়ার সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও সাড়া মিলেনি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ডেল্টা ইঞ্জিনিয়ার এন্ড কনসোর্টিয়াম আরআরএফ সিলেট এর ৪ তলা ব্লিডিং, মাদক দ্রব্য অধিদপ্তর সিলেট মূল ভবনের ঊর্ধ্বমুখী কাজ, এসএমপির সোবহানিঘাট পুলিশ ফাঁড়ি ঊর্ধ্বমুখী কাজ, র‌্যব-৯ সিলেটের প্রধান কার্যালয়ের ঊর্ধ্বমুখী কাজ, সমাজসেবা অধিদপ্তর সিলেটের মূল কমপ্লেক্সসহ একাধিক কাজ বাগিয়ে নিয়েছে। গতপূর্ত অধিদপ্তর সিলেটের আওতাধীন প্রায় ৫০ কোটি টাকার কাজ পেয়েছে এ প্রতিষ্ঠান।

এদিকে, ডেল্টা ইঞ্জিনিয়ার এন্ড কনসোর্টিয়াম সুনামগঞ্জের প্রায় ৭০ কোটি টাকার কাজ পেয়েছে বলে জানিয়েছেন সুনামগঞ্জ গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আল আমিন। তবে ই-টেন্ডারের মাধ্যমে প্রচলিত ক্রয়বিধি মেনে ওই কোম্পানিকে কাজ দেয়া হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

এ ব্যাপারে গণপূর্ত অধিদপ্তর সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী রিপন কুমার রায় ভোরের কাগজকে বলেন, গণপূর্ত অধিদপ্তর সব কাজই এখন ই-টেন্ডারের মাধ্যমে হয়। যিনি সর্বনিম্ন দরদাতা হন, তাকেই কাজ দেয়ার কথা। কিন্তু দরপত্রে প্রাক্কলিত মূল্যের ১০ শতাংশের মধ্যে দর দেয়ার বিধান থাকায় সব ঠিকাদারের দর একই হয়ে যায়। ফলে সর্বনিম্ন দরদাতা একাধিক হওয়ায় যার কাজের অভিজ্ঞতা, বার্ষিক লেনদেন (টার্নওভার), আর্থিক সক্ষমতা বেশি, তিনিই কাজ পেয়ে যান।

এ ব্যাপারে ডেল্টা ইঞ্জিনিয়ার এন্ড কনসোর্টিয়াম এর কর্ণধার মোহাম্মদ মমিনুল হক আদনান গণপূর্ত অধিদপ্তরের মাধ্যমে সিলেট জোনে শত কোটি টাকার ওপরে কাজ পেয়েছে বলে স্বীকার করলেও তিনি কখনো সিলেট আসেননি বলে জানান। ই-টেন্ডারের মাধ্যমে বার্ষিক লেনদেন (টার্নওভার) দেখে কাজ দেয়ায় বড় প্রতিষ্ঠান হিসেবে তিনি বেশি কাজ পাচ্ছেন বলে দাবি করেন।

অভিযোগ রয়েছে, অভ্যন্তরীণ ও ভৌত কার্যক্রমের ক্ষেত্রে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে যখন দরপত্র আহ্বান করা হয়, তখন অনেক ক্ষেত্রে যে কোনোভাবেই হোক দাপ্তরিক প্রাক্কলিত মূল্য ফাঁস হয়ে যায়। ফলে প্রতিযোগী ঠিকাদারেরা যে দর প্রস্তাব করেন, তার সঙ্গে উল্লেখিত দরের সমতা হয়ে যায়। একাধিক ঠিকাদারের ক্ষেত্রে এটা হয়ে থাকে। যেহেতু আইন অনুযায়ী উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে লটারির বিধান নেই। আবার যেহেতু একজন ঠিকাদারকে নির্বাচন করতে হবে, সেহেতু বর্তমান পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুল (পিপিআর) অনুযায়ী দরদাতার অতীত রেকর্ড, গত ১ বছরে কাজের মাত্রা, অভিজ্ঞতা তার বা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সামর্থ্য ইত্যাদি বিষয়গুলো পর্যালোচনা করা হয়।

অভিজ্ঞমহলের মতে বড় বড় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কীভাবে একসঙ্গে এত প্রকল্পের কাজ পায়, ছোট প্রতিষ্ঠান কেন কাজ পায় না, সরকারি ক্রয় আইনে কোথায় ত্রুটি আছে এসব বিষয়ে আইনের বেশকিছু ধারা সংশোধন জরুরি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App