×

জাতীয়

তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে

বন্ধ হয়নি কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০৯:১০ এএম

বন্ধ হয়নি কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

দেশের বেশে কয়েকটি জেলায় বুধবার (১৭ জানুয়ারি) দিনের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে যায়। তবে এসব এলাকায় কোনো বিদ্যালয়েরই পাঠদান বন্ধ করা হয়নি। গত মঙ্গলবার মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলা হয়, তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামলে ওই এলাকায় বিদ্যালয় বন্ধ রাখা হবে।

তীব্র শীতে বিদ্যালয় বন্ধ রাখার বিষয়ে গত মঙ্গলবার তিন দফায় সংশোধিত অফিস আদেশ দেয় মাউশি। প্রথম অফিস আদেশে ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে তাপমাত্রা নামলে সংশ্লিষ্ট জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকার কথা জানানো হয়। ঘণ্টা খানেক পরেই নির্দেশনাটি সংশোধন করে বলা হয়, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে স্কুল বন্ধ থাকবে। সর্বশেষ রাত সাড়ে ৮টার দিকে তৃতীয় দফায় দেওয়া আদেশে ‘সর্বোচ্চ তাপমাত্রা’ কথাটি বাদ দেওয়া হয়। বলা হয়, দিনের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার নিচে নামলে আলোচনার মাধ্যমে স্কুল বন্ধ রাখা যাবে। 

বুধবার বরিশাল, চুয়াডাঙ্গা, সীতাকুণ্ড, বান্দরবান, ঈশ্বরদী এবং শ্রীমঙ্গলে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নিচে রেকর্ড করা হয়েছে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে। কিন্তু এসব এলাকায় বিদ্যালয় বন্ধ রাখার খবর পাওয়া যায়নি। শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে, তাদের অনেকের মধ্যে ‘সর্বোচ্চ তাপমাত্রা’ নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। তাররা জানেন না যে, মাউশির চূড়ান্ত অফিস আদেশে ‘সর্বোচ্চ তাপমাত্রা’ কথাটি বাদ দেয়া হয়েছে। 

বরিশালে বুধবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেও স্কুলগুলোতে পুরোদমে পাঠদান চলেছে। এ জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের দায়ী করেছেন মাউশির আঞ্চলিক উপপরিচালক এবং শিক্ষা কর্মকর্তাকে। আর শৈত্যপ্রবাহেও স্কুল বন্ধ না রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা। 

বরিশাল আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ বশির আহমেদ বলেন, বুধবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি । সর্বোচ্চ ২২ দশমিক ২ ডিগ্রি । শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে এবং দু–এক দিনের মধ্যে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। 

সদর উপজেলার চন্দ্রমোহনের আব্দুল মজিদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘সরকার যেভাবে বলছে তা মানতে আমরা বাধ্য। কিন্তু মাউশি থেকে স্কুল বন্ধের নোটিশ না পেলে কি করে বন্ধ করি!’ 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নগরের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, স্কুল বন্ধ রাখার বিষয়ে নির্দেশনা চেয়ে উপপরিচালক আনোয়ার হোসেনকে কল করেও পাওয় যায়নি। 

এ বিষয়ে বরিশাল জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘আমরা মোবাইলে তো দেখেছি ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজকে তো বন্ধ ছিল না স্কুল। মাউশির চিঠির আলোকে স্কুল বন্ধ রাখতে হবে। সবাই মিলেমিশে এ সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’ 

চুয়াডাঙ্গায় বুধবার সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। 

চুয়াডাঙ্গা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূর হোসেন বলেন, ‘এ ধরনের নির্দেশনার কথা শুনেছি। তবে জেলা শিক্ষা অফিসার থেকে কোনো নির্দেশনা পাইনি। আমাদের একটি হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ আছে, সেখানে বন্ধ রাখার জন্য বলা হয়েছে। ভাবছি, কাল থেকে তাপমাত্রা দেখে বন্ধ রাখব।’ 

চুয়াডাঙ্গা ভিক্টোরিয়া জুবিলি (ভি. জে) সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সেখ সফিয়ার রহমানও বলেন, কোনো নির্দেশনা না আসায় তিনি পাঠদান চালু রেখেছেন। 

তবে নির্দেশনা না পেলেও শিক্ষকদের সঙ্গে পরামর্শ করে দুপুর ১টার দিকে স্কুল ছুটি দিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা বিলকিস জাহান। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তবিবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে যে নির্দেশনা দিয়েছে তাতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার কথা উল্লেখ আছে। স্পষ্ট করে বলা আছে, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে সাময়িক বন্ধের সিদ্ধান্ত হতে পারে। তবে আমি খোঁজ নিয়েছি, চুয়াডাঙ্গার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ডিগ্রির নিচে নামেনি। সে জন্য এ ধরনের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।’ 

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডেও বুধবার তাপমাত্রা নেমেছিল ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রিতে। তবে সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান চলেছে। 

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নূরুচ্ছোফা বলেন, নির্দেশনার বিষয়ে তিনি জানেন। তবে বুধবার বিদ্যালয়ের বন্ধে উপ–পরিচালকের কোনো নির্দেশনা তারা পাননি। তাই উপজেলার ৯৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম চলেছে। বুধবার তাপমাত্রা কত নেমেছিল সে বিষয়েও তার কোনো ধারণা নেই বলে জানান। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোস্তফা আলম সরকার বলেন, তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা নিয়ে একটি চিঠি তারা পেয়েছেন। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার বিষয়ে নির্দেশনা দেবেন চট্টগ্রাম আঞ্চলিক উপ–পরিচালক। উপ–পরিচালকের সঙ্গে তিনি একাধিকবার কথা বলেছেন। তাপমাত্রা কমে যাওয়া কিংবা বিদ্যালয় বন্ধ রাখার বিষয়ে তিনি কোনো নির্দেশনা দেননি। 

সীতাকুণ্ড আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়া কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. ইমরান বলেন, ‘মঙ্গলবার থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত সীতাকুণ্ডের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সীতাকুণ্ডে রোদের দেখা মিলেছে। আগামী আরও কয়েক দিন সীতাকুণ্ডের তাপমাত্রা আরও নিচে নামতে পারে।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাউশির পরিচালক (মাধ্যমিক) মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন বলেন, ‘কোনো জেলায় যদি তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামে তাহলে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে সংশ্লিষ্ট জেলার উপ–পরিচালকেরা। আজ (বুধবার) কোনো জেলায় স্কুল বন্ধ করা হয়েছে কিনা এ বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। আর আমরা স্কুল বন্ধের তথ্য পাঠানোর কথাও বলিনি।’

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App