×

জাতীয়

পৌষ-মাঘের সংমিশ্রণে তাণ্ডব চালাচ্ছে শীত, তীব্র ঠাণ্ডার কারণ কী?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ জানুয়ারি ২০২৪, ১১:০৫ পিএম

পৌষ-মাঘের সংমিশ্রণে তাণ্ডব চালাচ্ছে শীত, তীব্র ঠাণ্ডার কারণ কী?

ছবি: সংগৃহীত

এবারের শীত মৌসুমে পৌষের শুরুতে মাসটি নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পেরেছে বলে খুব একটা মনে হয়নি। কারণ সকাল-সন্ধ্যায় হালকা কুয়াশা, দুপুরে কড়া রোদ, কখনো একটু-আধটু হিমেল হাওয়া- এই ছিল পৌষের শুরুর চিত্র। কিন্তু শেষ দিকে এসে বাংলার এ মাসটি যেন নিজের সব শক্তির সঙ্গে মাঘ'কে যোগ করে তাণ্ডব লীলা চালাচ্ছে। এ কারণে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে।

মৌসুমের এ সময়টাতে এসে ভোর থেকেই চারদিক ধুসর ঘন কুয়াশায় ও তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। বেলা বাড়লেও শীতল হাওয়ার দাপটে সূর্যও তাপ ছড়াতে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে তাপমাত্রার পারদ খুব বেশি নিচে না নামলেও উত্তরী হাওয়া আক্ষরিক অর্থেই কাঁপন ধরিয়ে দিচ্ছে।

শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তীব্র শীত অনুভূত হয়েছে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলীয় জেলা-গুলোয় শীতের তীব্রতা এতটাই বেশি যে রাতের বেলায় আকাশ থেকে ঝরছে বৃষ্টির মতো কুয়াশা। দিনেও সে কুয়াশার রেশ কাটেনি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে উত্তর দিক থেকে আসছে কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস। ফলে হাড় কাঁপানো শীতে জীবনযাত্রা অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন দরিদ্র, ছিন্নমূল, ভাসমান ও স্বল্প আয়ের মানুষ। 

শীতজনিত রোগে আক্রান্ত মানুষের ভিড় বেড়েছে হাসপাতালে। ঘন কুয়াশার কারণে বোরো ধানের বীজতলা হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে। আলুর খেতে দেখা দিয়েছে বিভিন্ন রোগ। কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগও ব্যাহত হচ্ছে। 

আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবির বলেন, “একদিকে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমেছে, দ্বিতীয়ত দিনভর ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকায় দিনে সূর্যের আলো কম ছিল এবং তৃতীয়ত, মাঘের প্রাক্কালে উত্তরী হাওয়ার বেগ রয়েছে তুলনামূলক বেশি। এসব কারণে শীতের অনুভূতি সবখানে বেড়েছে। এমন আবহাওয়া আরও দুয়েকদিন অব্যাহত থাকবে। এক সপ্তাহ পরে হালকা বৃষ্টির আভাসও রয়েছে।”

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল কিশোরগঞ্জ, পাবনা, দিনাজপুর ও চুয়াডাঙ্গায় বয়ে গেছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। এ দিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে কিশোরগঞ্জের নিকলী ও চুয়াডাঙ্গায় ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল নিকলীতেই ১০ দশমিক ৩ ডিগ্রি। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মতো রাজধানী ঢাকাতেও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আরও কমেছে। গতকাল ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকলেও স্বাভাবিকের চেয়ে নগরীতে যান চলাচল ছিল কম। খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘরে ছেড়ে বের হয়নি মানুষ।  

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, ‘আজ (১২ জানুয়ারি) থেকে ধারাবাহিকভাবে শীত কমতে শুরু করবে। তবে আবার মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) থেকে মেঘ দেখা দিতে পারে। এতে কোথাও কোথাও শীতের অনুভূতি আবার তীব্র থেকে তীব্রতর হবে। তবে শীতের তীব্রতা কমলেও ঘন কুয়াশা খুব তাড়াতাড়ি কমবে না। আগামী তিনদিন কুয়াশা এমন থাকতে পারে। বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) থেকে দেশের কোনো কোনো স্থানে বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। তাতে স্বভাবতই আরো বাড়বে শীত।’

চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিক হলেও কিশোরগঞ্জের নিকলীতে কেন এত শীত পড়ছে- এর কারণ ব্যাখ্যা করেন কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ। তাঁর মতে, গত এক সপ্তাহ থেকে প্রায় প্রতিদিন কুয়াশার চাদরে ঢাকা ছিলো কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জের মধ্যবর্তী উপজেলাগুলো। 

দিনে সর্বোচ্চ এক থেকে তিন ঘণ্টা সূর্যের আলো দেখা গেছে; তাও আবার দুপুর ২টার পর। ফলে এসব উপজেলার পরিবেশ সারাদিন সূর্যের আলোয় যে পরিমাণ গরম হয়, তার চেয়ে বেশি পরিমাণ তাপবিকীরণ হয় দিনের অবশিষ্ট সময় ও রাতে। ফলে এই ৩টি জেলার মধ্যবর্তী স্থানে আজ শনিবারও সর্বনিম্ন তপমাত্রা রেকর্ড হতে পারে।


সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App