×

জাতীয়

নারায়ণগঞ্জে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বচন হচ্ছে রূপগঞ্জ ও সোনারগাঁওয়ে

Icon

এম এম সালাহউদ্দিন, নারায়ণগঞ্জ থেকে

প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১০:৫২ এএম

নারায়ণগঞ্জে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বচন হচ্ছে রূপগঞ্জ ও সোনারগাঁওয়ে

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনের মধ্যে সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বচন হচ্ছে রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ-) সোনারগাঁওয়ে (নারায়ণগঞ্জ-) 

তবে জেলার আসনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেছে রূপগঞ্জে। গত কয়দিনে ঘটে যাওয়া নানান ঘটনা তার প্রমাণ দিচ্ছে। 

আরও নির্দিষ্ট করে বললে বলতে হয়, নারায়ণগঞ্জে নির্বাচনের আসল লড়াইটা হচ্ছে এবার রূপগঞ্জে। কারণ, সিটি গ্রুপ, গাজী গ্রুপসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং বসুন্ধরা ইউএস-বাংলাসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় আবাসন প্রকল্পগুলো এখানে অবস্থিত। 

তাই এখানকার নির্বাচন নিয়ে এলাকাবাসীর চেয়ে বেশি উৎকণ্ঠায় আছেন শিল্পপতি আবাসন ব্যবসায়ীরা। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ- আসন অর্থাৎ রূপগঞ্জে প্রার্থী সংখ্যা জন। এতে দলীয় মনোনয়নে জন এবং স্বতন্ত্র থেকে দাঁড়িয়েছেন জন প্রার্থী। আসনে প্রার্থী জন হলেও পুরো নারায়ণগঞ্জ জুড়ে আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে আছেন জন। একজন হলেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী- বস্ত্র পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (নৌকা প্রতীক) 

অপরজন হলেন- তৃণমূল বিএনপির মনোনীত প্রার্থী, দলটির মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার (সোনালী আঁশ প্রতীক) আরেকজন হলেন স্বতন্ত্র হিসেবে দাঁড়ানো, রূপগঞ্জ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান ভূঁইয়া। 

নারায়ণগঞ্জ- আসনে গত ১৫ বছর ধরে ক্লিন ইমেজ নিয়ে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন পাট বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী।তিনি ২০০৮, ২০১৪ ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে আসনে নির্বাচিত হয়েছেন। 

আসনে গোলাম দস্তগীর গাজীর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান ভূঁইয়া। একই দলের দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা আছে বলে দাবি এলাকাবাসীর। 

গোলাম দস্তগীর গাজী তিনবারের সংসদ সদস্য শাজাহান ভূঁইয়া তিনবারের উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন। ফলে এলাকায় দুইজনেরই ব্যক্তিগত ভোট ব্যাংক রয়েছে। 

অপরদিকে, রূপগঞ্জে এমপি হওয়ার লড়াইয়ে এর পরই এগিয়ে আছেনমজলুম জননেতাহিসেবে খ্যাত তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার। রূপগঞ্জে পৈত্রিক নিবাস থাকায় রূপগঞ্জবাসীর সঙ্গে গভীর সখ্যতা রয়েছে বলেও দাবি করেছেন তিনি। 

এবার আসনে আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থী থাকায় তৈমুর আলম খন্দকারের জয়লাভের পথ সহজ হবে দাবি করছেন তার নেতাকর্মীরা। গণসংযোগকালে তৈমুর নিজেও বলেছেন, ‘দলীয় কোন্দলের কারণে আমার পথ সহজ হয়েছে, নির্বাচন সুষ্ঠু হলে জয়লাভ সম্ভব হবে।’ 

নির্বাচনী প্রচারণার শুরু থেকেই মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন এই প্রার্থী। গণসংযোগ, উঠান বৈঠক, ডিজিটাল মিডিয়ার মাধ্যমে জনসাধারণের কাছে নির্বাচনী বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন তারা। 

এই আসনে বাকি প্রার্থীরা হলেন, গাজী গোলাম মর্তুজা (স্বতন্ত্র), মো. হাবিবুর রহমান (স্বতন্ত্র), মো. জোবায়ের আলম (জাকের পার্টি), মো. সাইফুল ইসলাম (জাতীয় পার্টি), মো. জয়নাল আবেদীন চৌধুরী (স্বতন্ত্র), একেএম শহিদুল ইসলাম (ইসলামি ফ্রন্ট বাংলাদেশ) তাদের মধ্যে শুধু জাতীয় পার্টির প্রার্থীর সাইফুল ইসলামের কিছু গণসংযোগ চোখে পড়লেও বাকি প্রার্থীদের কোনো তৎপরতা দেখেননি রূপগঞ্জবাসী। 

নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনে আওয়ামী লীগের জন, জাতীয় পার্টির জন, স্বতন্ত্র একজন তৃণমূল বিএনপির একজনসহ মোট জন হেভিওয়েট প্রার্থী ভোটারদের মন জয় করার চেষ্টা করেছেন। 

এদিকে রূপগঞ্জের পর নারায়ণগঞ্জে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বচন হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ- (সোনারগাঁও) আসনে। আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী সাবেক আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতের সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে জাতীয় পার্টির দুইবারের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকার। 

সাধারণ ভোটারদের মতে, ২০০৮ সালের নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী কায়সার হাসনাত বিজয়ী হন। এরপর জোটের সুবিধা নিয়ে পর পর দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন লিয়াকত হোসেন খোকা। কায়সার হাসনাতের পক্ষেই গণজোয়ার দেখা গেছে এখানে। নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টির অনেক নেতাকর্মী যোগ দিয়েছেন আওয়ামী লীগে। 

এই আসনে অন্য প্রার্থীরা হলেন- মো. মজিবুর রহমান মানিক (বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন), মোহাম্মদ আসলাম হোসেন (বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি), এবিএম ওয়ালিউর রহমান খান (বিএনএফ), নারায়ণ দাস (বিকল্প ধারার বাংলাদেশ), মো. আরিফ (বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট), .এইচ.এম মাসুদ (স্বতন্ত্র) 

এরপর নারায়ণগঞ্জ- (আড়াইহাজার) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী তিনবারের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুর সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী আলমগীর সিকদার লোটন। এন্টি আওয়ামী লীগ এন্টি বাবু গ্রুপটি লোটনের সঙ্গে পরোক্ষভাবে সক্রিয় থাকায় চিন্তার ভাঁজ বাবুর কপালে। এমনটা বলছেন সেখানকার সাধারণ মানুষ। এখানে অন্য প্রার্থীরা হলেন- মো. আবু হানিফ হৃদয় (তৃণমূল বিএনপি), শাহজাহান (জাকের পার্টি) শরিফুল ইসলাম (স্বতন্ত্র) কিন্তু তাদের প্রচারণা তেমন একটা ছিল না বললেই চলে। 

এদিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচন হতে যাচেআছ নারায়ণগঞ্জ- নারায়ণগঞ্জ- আসনে। নারায়ণগঞ্জ- (সিদ্ধিরগঞ্জ-ফতুল্লা) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের বিপরীতে শক্ত কোনো প্রার্থী নেই। ফলে এই আসন নিয়ে ভোটারদের আগ্রহ কম। 

যদিও দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও শামীম ওসমান, তার স্ত্রী-সন্তানসহ আত্মীয়-স্বজন সবাই দিনরাত প্রচারণা চালিয়েছেন। নির্বাচনের দিন ভোটারদের উপস্থিতি বাড়ানোই ছিল তাদের প্রচারণার মূল লক্ষ্য। 

এই আসনে লোক দেখানো অন্য প্রার্থীরা হলেন- মো. সৈয়দ হোসেন (সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ), মো. আলী হোসেন (তৃণমূল বিএনপি), মো. মুরাদ হোসেন জামাল (জাকের পার্টি), মো. সেলিম আহমেদ (বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি), মো. হাবিবুর রহমান (ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ), মো. শহীদ উন নবী (ন্যাশনাল পিপলস পার্টি), গোলাম মোর্শেদ রনি (বাংলাদেশ কংগ্রেস) তাদের কোনো প্রকার গণসংযোগ বা প্রচারণা দেখেনি এই আসনের ভোটাররা।রাজনীতিবিদ হিসেবে এদের অনেকের নাম আগে কেউ শুনেননি। 

একই পরিস্থিতি নারায়ণগঞ্জ- (সদর-বন্দর) আসনে। এখানে এবারো আওয়ামী লীগ তাদের প্রার্থী দেয়নি। জাতীয় পার্টির মনেনীত প্রার্থী শামীম ওসমানের বড় ভাই বর্তমান সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শক্ত কোনো প্রার্থী নেই। ফলে শামীম ওসমানের মতো খোশমেজাজে রয়েছেন তিনি। তবে প্রচারণা চালিয়েছেন ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য। 

এখানেও অন্য প্রার্থীরা মূলত লোক দেখানো।তারা হলেন- এএমএম একরামুল হক (ইসলামি ফ্রন্ট বাংলাদেশ), মো. আব্দুল হামিদ ভাষানী ভূঁইয়া (তৃণমূল বিএনপি), শামসুল ইসলাম (বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি) তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকলেও রহস্যজনক কারণে গণসংযোগ বা প্রচারণা চালাননি তেমন একটা।

টাইমলাইন: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

আরো পড়ুন

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App