×

জাতীয়

প্রণোদনার টাকায় কিছুই হবে না বিমানের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৯:৪৭ এএম

প্রণোদনার টাকায় কিছুই  হবে না বিমানের

সঠিক পরিকল্পনা জরুরি

সরকারি প্রণোদনার হাজার কোটি টাকা ঋণ পেলেও তা দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা নেই রাষ্ট্রায়ত্ত উড়োজাহাজ সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের। কর্মীদের বেতন, উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণ আর ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতেই সব টাকা শেষ হচ্ছে তাদের। বিশাল ব্যয় নির্ভর এই সংস্থাটির খরচ কমিয়ে আনতে কিছু পদক্ষেপ নেয়া হলেও তা খুব একটা কাজে আসেনি। কৌশলগত করণীয় নির্ধারণেও দেখা যায়নি দক্ষতার ছাপ। ফলে করোনা পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে সংস্থাটির আর্থিক সংকট চরম আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।

করোনা ভাইরাসের বিস্তারের কারণে বিশ্বজুড়েই এভিয়েশন খাতে ব্যাপক ধস নেমে আসে। বাংলাদেশেও এর ধাক্কা লাগে। গত মার্চ থেকে বন্ধ হয়ে যায় অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটের প্রায় সব ফ্লাইট। এ পরিস্থিতিতে দেশের যাত্রীবাহী ৪ উড়োজাহাজ সংস্থার মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়ে। কেননা, সরকার মালিকানাধীন এ সংস্থাটির উড়োজাহাজ সংখ্যা ও জনবল যেমন বেশি, তেমনি তাদের ব্যয়ও বেশি। পাশাপাশি দুর্নীতি ও পরিচালনায় অদক্ষতার অভিযোগও রয়েছে সংস্থাটির বিরুদ্ধে। ফলে প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়া আয় ও অন্যদিকে প্রতিমাসে বিশাল অঙ্কের ব্যয় মেটাতে গিয়ে হিমশিম অবস্থা দেখা দেয় বিমানে।

সম্প্রতি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া এক হিসেবে বিমান জানায়, গত মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা আয় কমেছে তাদের। আর প্রতি মাসে ৬২৮ কোটি টাকা নির্ধারিত খরচ রয়েছে সংস্থাটির। এর মধ্যে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতনভাতাসহ পরিচালন ব্যয় ২০৩ কোটি টাকা, উড়োজাহাজের ঋণের কিস্তি ৬১ কোটি, উড়োজাহাজ ভাড়ার কিস্তি ৯৮ কোটি ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ খরচ হয় ২৬৬ কোটি টাকা।

অত্যাধুনিক ড্রিমলাইনারসহ মোট ১৮টি উড়োজাহাজের বিশাল বহরের এ সংস্থার আয় আসত মূলত ৩টি খাত থেকে। এর মধ্যে ১৭টি আন্তর্জাতিক রুট, হজ ফ্লাইট ও শাহজালালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং রয়েছে। কিন্তু করোনায় এসব আয় বন্ধ হয়ে যায়। শুধু হজ ফ্লাইট থেকে এ মৌসুমে ৯৪৭ কোটি টাকা আয় করার কথা ছিল বিমানের।

এ অবস্থায় কর্মীদের বেতন কমানো, ওভারটাইম ও বিভিন্ন ভাতা সুবিধা বাতিলসহ খরচ কমানোর কিছু পদক্ষেপ নেয় সংস্থাটি। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে দেড় হাজার কোটি টাকা ঋণ পেতে সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করে তারা। পরে ১ হাজার কোটি টাকা মঞ্জুর করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এত কিছুর পরও বিমানের আর্থিক সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন এ খাতের বিশ্লেষকরা। বিষয়টা অনেকটা মরুভূমিতে জল ঢালার মতোই উল্লেখ করেন তারা। দ্য বাংলাদেশ মনিটরের সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় শুরু থেকেই অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে বিমান। বিশ্বের অন্যান্য বিমান সংস্থাগুলো সময় উপযোগী বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে তাদের ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে এনেছে। আর বিমানের ক্ষেত্রে দেখা গেছে দায়সারা গোছের কিছু পদক্ষেপ। যেগুলো থেকে তেমন সুফল আসেনি। তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন এয়ারওয়েজ পরিস্থিতি বুঝতে পেরে এপ্রিল-মে মাসেই অনেক কর্মীকে বিনা বেতনে ছুটি দিয়েছে, কর্মী ছাটাই করেছে। অন্যদিকে বিমানকর্মীদের বেতনের কিছু অংশ কমানোর ঘোষণা দিলেও সেখানে বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। আবার অনেক কর্মকর্তার বেতনই কমানো হয়নি।

ফ্লাইট পরিচালনা ও বিপণন কৌশল নির্ধারণেও বিমানের ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, যাত্রী পরিবহন বন্ধ থাকলেও পণ্য পরিবহনে এয়ারক্রাফ্টগুলো ব্যবহার করতে পারত বিমান। এমিরেটস বা মালিন্দো এয়ার যেমনটি করেছে। সেটি না করে তারা শুধু বসিয়ে বসিয়ে বিমানের পেছনে খরচ করছে। মাঝে মধ্যে দুয়েকটি চার্টার্ড ফ্লাইট পরিচালনা করেছে। তিনি বলেন, ভাড়া করা এয়ারক্রাফ্টগুলো দ্রুত ফেরতের ব্যবস্থা করতে পারলে বিমানের লোকসান কমে আসত। এতে যদি এককালীন কিছু জরিমানা দিতে হতো, সেটাও ভালো ছিল। বসিয়ে রেখে বিমান রক্ষণাবেক্ষণ খাত থেকে একটি চক্র লাভবান হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, সংস্থাটির দুর্নীতি বন্ধ করে দক্ষ হাতে হাল ধরতে না পারলে করোনার ধাক্কা সামলে ওঠা সত্যিই কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

দেশের বেসরকারি একটি এয়ারলাইন্সের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, জনবল সঠিকভাবে কাজে লাগানো গেলে আরো কম লোক দিয়েই ভালো সেবা দেয়া যেত। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, বিমানে কর্মী ছাটাইও এখন সম্ভব নয়। আমরা ১০ বছর আগে ব্যয় সংকোচনের যেসব নিয়ম চালু করেছি, তারা করোনাকালীন সময়ে সেগুলো প্রয়োগ করেছে। উদাহারণ দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের কেবিন ক্রুদের আনা-নেয়ার খরচ ও সময় কমানোর জন্য তাদের উত্তরা এলাকায় থাকতে হয়। আর বিমান সম্প্রতি এ নিয়ম চালু করেছে। অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে বেসরকারি এয়ারলাইনগুলো দূরদর্শী সিদ্ধান্ত নিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এতে যাত্রীদের আস্থা তৈরি হচ্ছে। প্রথম দিকের তুলনায় এখন যাত্রী সংখ্যা অনেক বেড়েছে। রক্ষণাবেক্ষণ খরচটা উঠে আসছে। কিন্তু এ নিয়ে বিমানের আগ্রহ নেই।

এসব নিয়ে কথা বলতে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. মোকাব্বির হোসেনকে কয়েক দফা ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। ফোন ধরেননি জনসংযোগ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক তাহেরা খন্দকারও। পরে তাদের দুজনকেই হোয়াটসঅ্যাপে ক্ষুদেবার্তা পাঠানো হলেও তারা প্রতিউত্তর দেননি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App