×

জাতীয়

বাংলাদেশের বিমানবন্দর ব্যবহারে আগ্রহী ভারত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০২০, ০৯:৪৬ এএম

বাংলাদেশের বিমানবন্দর ব্যবহারে আগ্রহী ভারত
বাংলাদেশের সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আধুুনিকায়নের কাজ করতে চেয়েছিল ভারত। কিন্তু সেই কাজটি পেয়েছে চীনের একটি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। এতে ভারত কিছুটা মনোক্ষুণ্ণ হয়েছে। তবে এখন সৈয়দপুর বিমানবন্দর উন্নয়নের কাজ করার আর্জি জানিয়েছে তারা। শুধু সৈয়দপুর নয়; বাংলাদেশের বিমানবন্দরগুলোর আধুনিকায়ন ও ব্যবহারে আগ্রহ দেখিয়েছে প্রতিবেশী এই দেশটি। সচিবালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীর সঙ্গে তার দপ্তরে সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের বিদায়ী হাইকমিশনার শ্রীমতি রিভা গাঙ্গুলি দাশ। এ সময় তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন বিমানবন্দর উন্নয়ন ও ব্যবহারে তার দেশের আগ্রহের কথা জানান। বৈঠকটি দুপুর ১২টা থেকে শুরু হয়ে সাড়ে ১২টার দিকে শেষ হয়। বৈঠক শেষে বিমান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত একটি সূত্র এসব তথ্য ভোরের কাগজকে জানিয়েছে। জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী ভোরের কাগজকে বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দীর্ঘ দিনের। মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় জনগণের অবদানের কথা বাংলাদেশ সবসময়ই কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ২ বন্ধু রাষ্ট্রের জনগণের মধ্যে আরো সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করছেন। এ প্রসঙ্গে ভারতীয় হাইকমিশনার বলেছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক শক্তিশালী ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। দিন দিন এই সম্পর্ক আরো শক্তিশালী হচ্ছে। শক্তিশালী সম্পর্ক দুদেশের জনগণের কল্যাণে ভ‚মিকা রাখবে। বাংলাদেশের এভিয়েশন খাতের উন্নয়নে কাজ করার ব্যাপারে ভারতের আগ্রহের কথাও হাইকমিশনার জানিয়েছেন বলে প্রতিমন্ত্রী জানান। সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকের শুরুতেই ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু প্রণব মুখার্জির রোগমুক্তি কামনা করা হয়। এরপরই হাইকমিশনার বিমানবন্দর উন্নয়নের কাজের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। বিশেষ করে সিলেট বিমানবন্দর আধুনিকায়নে ভারতীয় নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের কাজ না পাওয়ার বিষয়টি বিমান প্রতিমন্ত্রীকে জানান রিভা গাঙ্গুলি দাশ। সিলেট বিমানবন্দর উন্নয়নে ভারতীয় নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কেন কাজ পেল না এমন অনুযোগের জবাবে প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী স্পষ্ট কিছু না জানালেও তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক দরপত্র প্রক্রিয়ায় চীনা প্রতিষ্ঠান কাজ পেয়েছে। তবে সিলেট বিমানবন্দরকে এখন ভারতীয়রাও ব্যবহার করতে পারে বলে প্রতিমন্ত্রী হাইকমিশনারকে জানান। প্রতিমন্ত্রী বলেন, সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সিলেট-লন্ডন সরাসরি বিমান চলাচল দ্রুত শুরু হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে যুক্তরাজ্যে ভ্রমণের ক্ষেত্রে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর অধিবাসীদের জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার অনেক বেশি সুবিধাজনক হবে। এ বিষয়টির বিস্তারিত জানতে চাইলে মাহবুব আলী বলেন, ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলো থেকে যারা লন্ডন যেতে চান তাদের দিল্লি গিয়ে ফ্লাইটে উঠতে হয়। সেক্ষেত্রে তারা যদি সিলেট বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের যাত্রী হন তাহলে কষ্ট কম হবে। যাত্রীদের যেমন কমসময় এবং কম খরচ লাগবে তেমনি বাংলাদেশও মুনাফা পাবে। প্রতিমন্ত্রীর কাছ থেকে এমন প্রস্তাবে ভারতীয় হাইকমিশনার একমত পোষণ করেছেন। এরপরই হাইকমিশনার জানান, সৈয়দপুর বিমানবন্দর এবং কক্সবাজার বিমানবন্দর আধুনিকায়নে কাজ করতে চায় ভারত। এর জবাবে মাহবুব আলী বলেন, কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়নে চীনা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কাজ পেলেও পরে সেটি বাতিল করা হয়েছে। এখন নতুন করে আন্তর্জাতিকভাবে টেন্ডার ডাকা হবে। কাজ পেতে হলে সেই টেন্ডারে অংশ নিতে হবে। সৈয়দপুর বিমানবন্দর উন্নয়নেও ভারতীয় প্রতিষ্ঠান কাজ করতে চায় জানালে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সেখানেও আন্তর্জাতিক টেন্ডার হবে। সেই টেন্ডারে যদি কোনো ভারতীয় প্রতিষ্ঠান বিমানবন্দর উন্নয়নের কাজ পায় তাহলে আমার আপত্তি থাকবে না। এর জবাবে রিভা গাঙ্গুলি দাশ প্রতিমন্ত্রীকে বলেন, ভারতের বিমানবন্দর যেভাবে আধুনিকায়ন করা হয়েছে, ভারতীয় প্রতিষ্ঠান কাজ পেলে বাংলাদেশের বিমানবন্দরও ঠিক সেভাবেই করে দেয়া হবে। তবে বৈঠকে সূত্র জানিয়েছে, সিলেট বিমানবন্দর উন্নয়নের কাজ না পেয়ে ভারত ভীষণ হতাশ হয়েছে। একারণে তারা সৈয়দপুর বিমানবন্দর আধুনিকায়নের কাজটি পেতে জোরাল চেষ্টা করছে। কারণ সৈয়দপুর বিমানবন্দরের গুরুত্ব অপরিসীম। পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গ সীমান্ত লাগোয়া বাংলাদেশের সৈয়দপুর বিমানবন্দর আধুনিকায়নের কাজে অন্যকোনো দেশ যাতে ঢুকতে না পারে তার চেষ্টা শুরু করেছে ভারত। এছাড়া সৈয়দপুর বিমানবন্দর উন্নয়ন কাজ শেষ হওয়ার পর সব নীতিমালা মেনে নেপাল ও ভুটান এটি ব্যবহার করার দাবি জানিয়েছে। এরফলে, বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটান ৪ দেশ এই বিমানবন্দরটিকে ব্যবহার করবে। করোনা মহামারির কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধ হয়ে যাওয়া বিমান যোগাযোগ আবারো চালু করার প্রস্তাবও দিয়েছে ভারত। একইসঙ্গে ভারতের প্রস্তাবিত ‘এয়ার বাবলে’ যুক্ত হতেও প্রস্তাব করেছে দেশটি। এর জবাবে প্রতিমন্ত্রী বিমান যোগাযোগ আবারো চালু করার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে একমত পোষণ করেন। বৈঠক শেষে মাহবুব আলী ভোরের কাগজকে বলেন, দুদেশের সিভিল এভিয়েশন পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে। এছাড়া এয়ার বাবল চালু হওয়ার সঙ্গে ভারত থেকে ভিসা দেয়াও শুরু হবে বলে প্রতিমন্ত্রী জানান। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, করোনার কারণে আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল শুরু করতে পাকিস্তান বাদে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে এয়ার বাবল করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে ভারত। বাণিজ্যিক বিমান চালু করার উদ্দেশ্যে আন্তঃরাষ্ট্রীয় এয়ার বাবল তৈরি করতে শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে এয়ার বাবল তৈরির প্রস্তাব দিয়েছে দেশটি। এদিকে, বৈঠক শেষে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলা হয়, কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে এ অঞ্চলের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্র প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। প্রতিবেশী বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রগুলোর জনগণের পারষ্পরিক ভ্রমণের মাধ্যমে এই অঞ্চলের পর্যটনশিল্প কোভিড-১৯ এর কারণে সৃষ্ট বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে। পর্যটন ও এভিয়েশন খাতে পারষ্পরিক সহযোগিতা উভয়ের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে। এ সময় রিভা গাঙ্গুলি বাংলাদেশে অবস্থানকালে তার সুন্দরবন ভ্রমণের চমৎকার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, বাংলাদেশ পর্যটনের অপার সম্ভাবনার একটি দেশ। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পর্যটন সম্পর্ক উন্নয়নের সম্ভাবনাও প্রচুর। ভারতীয় অনুদানে রবীন্দ্র স্মৃতিবিজড়িত কুষ্টিয়ার শিলাইদহ কুঠিবাড়ির অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে। এ কাজ সমাপ্তির পর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিশাল সংখ্যক মানুষ তা দেখতে বাংলাদেশ ভ্রমণ করবে। বাংলাদেশে অবস্থানকালে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয়ে পারষ্পরিক সহযোগিতার জন্য বিদায়ী হাইকমিশনারকে প্রতিমন্ত্রী ধন্যবাদ জানান। পাশাপাশি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) হিসেবে রিভা গাঙ্গুলি দাশের পদায়ন হওয়ায় অভিনন্দন ও শুভকামনা জানান তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App