×

জাতীয়

বেপারি-ইজারাদার হতাশ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০২০, ০৯:২৪ এএম

বেপারি-ইজারাদার হতাশ

গরু হাট/ফাইল ছবি।

সরেজমিন : রাজধানীর পশুর হাট, বিক্রি বাড়ার সম্ভাবনা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা

ভাটারার সাইদনগর হাটে কুষ্টিয়া থেকে ৭টি বড় সাইজের দেশী গরু বিক্রির জন্য এনেছেন মো. মোস্তফা। ৬ মাস আগে নেয়া প্রতিটি গরু সাড়ে ৩ লাখ টাকা দরে কিনেছেন। উদ্দেশ্য কুরবানির ঈদে ঢাকায় এনে তা সাড়ে ৪ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকায় বিক্রি করবেন। কিন্তু ঢাকায় এসে দেখেন সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র। কাক্সিক্ষত দর তো দূরের কথা, কেনা দরও করছেন না কেউই। যেসব ক্রেতা এসেছেন, তাদের কেউ কেউ একেকটি গরুর দাম করেছেন ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা করে। এ পর্যন্ত ৩ লাখ টাকাও দাম করেননি কেউ। তাই হতাশ ও বিমর্ষ কুষ্টিয়ার এই গরুর বেপারি। তিনি বলেন, করোনা শুরুর এক থেকে দেড় মাস আগে যে দামে গরু কিনেছি এখন তার চেয়েও এক লাখ টাকা কম দাম করছেন। এই দামে বিক্রি করলে ভয়াবহ লোকসান হবে। তার ওপর কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় আনতে খরচ হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার টাকা। ৩ দিন ধরে নিজের খাওয়াসহ অন্যান্য খরচ তো আছেই। বিক্রি না হলে পরিস্থিতি কি হবে তা বলাই মুশকিল। আগামী ২ দিনে ক্রেতা আরো আসবে এমন আশা করলেও কাক্সিক্ষত দরে বিক্রি করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে তার। শুধু মোস্তফাই নন ঝিনাইদহ, সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর, পাবনা থেকে নিজের পালা গরু এনেছেন যেসব বেপারি, তারাও হতাশ ও বিমর্ষ। তাদের ধারণাই ছিল না করোনার কারণে এরকম পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হবে। এখন লাভ তো দূরের কথা চালান নিয়েই টানাটানি। তার ওপর ঢাকায় আনা-নেয়ার খরচ ও নিজেদের খাবারসহ অন্যান্য খরচ কিভাবে পূরণ করবেন সেটাও তাদের অজানা। ঢাকা দক্ষিণ সিটির পুরান ঢাকার হাটগুলোতে পশুর সংখ্যা তুলনামূলক কম দেখা গেলেও উত্তর সিটির হাট ও দক্ষিণের বেশ কয়েকটি হাটে দেখা গেছে পর্যাপ্ত পশু। কিন্তু ক্রেতার সংখ্যা খুবই নগণ্য। যদিও বিক্রি শুরুর দ্বিতীয় দিন ছিল গতকাল বুধবার। বাকি থাকল আজ বৃহস্পতি ও আগামীকাল

শুক্রবার। এই ২ দিনে কিছুটা বিক্রি হওয়ার আশা করছেন ইজারাদাররা। তবে তাদের মধ্যেও শঙ্কা বৈশি^ক মহামারি করোনা ভাইরাস, তার ওপর বন্যা ও ঢাকায় বৃষ্টি- এর সবকিছুর প্রভাব পড়ছে কুরবানির হাটে। এবার ঢাকার মানুষও কুরবানি দিতে খুব একটা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। কারণ হিসেবে ইজারা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার মানুষ ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। তার নানা কারণের মধ্যে গরু জবাই করার পর্যাপ্ত লোক পাওয়া যাবে না। আর করোনা আতঙ্ক তো আছেই। অনেকেই পশু কেনার জন্য হাটে আসছেন না। এছাড়া অনেক বাড়িওয়ালার বাড়ি বর্তমানে খালি আছে। ফলে আর্থিক সংকটও রয়েছে কারো কারো মধ্যে। তবে হাটের সংখ্যা যেহেতু এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় কম। সেহেতু শেষের ২ দিন এমনকি ঈদের দিন সকালেও কিছু ক্রেতা আসবেন। এবার বড় সাইজের গরু নিতে চাইছেন না অনেকেই। সবার দৃষ্টি মাঝারি ও ছোট সাইজের গরুর প্রতি। অন্যান্য বছর এই সময় ঢাকার রাস্তায় হাট থেকে গরু নিয়ে বাড়ি যাওয়ার পথে দেখা যায় সারি সারি গরু। কিন্তু এবার সেই চিত্র খুব একটা নেই। ঢাকা দক্ষিণের মেরাদিয়া পশুরহাটেও দেখা যায় একই দৃশ্য। হাটটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে গরু উঠলেও ক্রেতার সংখ্যা খুবই সীমিত। বৃষ্টির ফলে কাঁদায় পরিপূর্ণ পুরো হাট। কাদা ও পানি মাড়াই দিয়েই সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে ও বসে আছে গরুগুলো। পাশেই বসে থেকে আড্ডায় মগ্ন বেপারিরা। ক্রেতা না থাকায় প্রায় সবার চোখেমুখেই হতাশার ছাপ। ঝিনাইদহ থেকে দুজন মিলে গত রবিবার ৯টি মাঝারি সাইজের গরু এনেছেন আজিজুল ইসলাম। গতকাল দুপুর পর্যন্ত ৫৫ হাজার টাকায় মাত্র ১টি বিক্রি করেছেন। বাকিগুলো বিক্রি হবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে তিনি। তবে ৫৫ হাজার টাকায় বিক্রি করলেও তাতে খুব একটা লাভ হয়নি তার। একই অবস্থা মানিকগঞ্জ থেকে আসা আবু তাহের, সিরাজগঞ্জ থেকে আসা আবুল কাসেম ও মো. হাছানসহ আরো অন্যান্য বেপারিদের। হাটটিতে দেখা গেছে, শুধু গরুর বেপারিরাই নন, চিন্তিত হাটের ইজারাদাররা। কেননা ইজারা মূল্যের পাশাপাশি হাটের প্রস্তুতি, স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী ও অন্যান্য খরচ তারা ওঠাতে পারবেন কিনা। দেখা গেছে, স্বেচ্ছাসেবক টিমের সদস্য ও হাসিল কাউন্টারে খুব একটা ব্যস্ততা নেই। গতকাল দুপুর পর্যন্ত ১৮টি গরু বিক্রি হয়ে হাটটিতে। বলা যায়, কিছুটা অলস সময় পার করছেন তারা। এই অবস্থা রাজধানীর অন্যান্য হাটগুলোতেও। এবার দুটি স্থায়ী হাট বাদে ঢাকা উত্তরে ৫টি ও দক্ষিণে ১১টি, মোট ১৬টি অস্থায়ী হাট বসানো হয়েছে। এর মধ্যে উত্তরের হাটগুলো ছাড়া দক্ষিণের শুধু পুরান ঢাকার হাটগুলোতে পশুর সংখ্যা তুলনামূলক কম। তবে সব হাটেই ক্রেতার সংখ্যা খুবই কম। আগামী ২ দিন কিছুটা বিক্রি বাড়ার আশা করছেন বেপারি ও ইজারাদাররা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App