×

জাতীয়

করোনাকালে মানসিক সমস্যা বেড়েছে পাঁচগুণ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ জুলাই ২০২০, ০৯:০৬ পিএম

করোনাকালে মানসিক সমস্যা বেড়েছে পাঁচগুণ

অনলাইন মিটিং প্লাটফর্ম জুম এ পরিচালিত ‘কভিড-১৯ ও মানসিক স্বাস্থ্য’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে এই গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।

করোনাকালে মানসিক সমস্যা বেড়েছে পাঁচগুণ

করোনাকালে মানসিক সমস্যা বেড়েছে।

করোনাকালে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে পাঁচগুণ বেশি মানুষ বিষন্নতাজনিত রোগে এবং দশগুণ মানুষ উৎকণ্ঠাজনিত রোগে ভুগছেন। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা আর্ক ফাউন্ডেশন পরিচালিত এক অনলাইন গবেষণায় দেখা গেছে করোনাকালে ৩২ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ বিষন্নতাজনিত রোগে ভুগছে। ২০১৯ সালে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ মেন্টাল হেলথ পরিচালিত একটি জরিপ যা ছিলো মাত্র ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। একইসাথে ৪৭ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ উৎকণ্ঠাজনিত রোগে ভুগছেন যা আগে ছিলো মাত্র ৪ দশমিক ৫ শতাংশ।

গবেষণায় দেখা যায় পুরুষদের তুলনায় নারীরা মানসিক সমস্যায় বেশি ভুগছেন। গবেষণায় অংশগ্রহণকারী পুরুষদের ২৩ দশমিক ৬ শতাংশ সামগ্রীক মানসিক সমস্যায় ভুগলেও নারীদের মধ্যে এর হার ৩৩ দশমিক ১ শতাংশ। অন্যদের তুলনায় শিক্ষার্থী ও চাকরিহীনরা বেশি মানসিক সমস্যায় ভুগছে।

শনিবার (১৮ জুলাই) সন্ধ্যায় অনলাইন মিটিং প্লাটফর্ম জুম এ পরিচালিত ‘কভিড-১৯ ও মানসিক স্বাস্থ্য’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে এই গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্রাইমারি হেলথ কেয়ারের সাবেক পরিচালক ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ড. খালেদা ইসলাম। আর্ক ফাউন্ডেশন ও সেন্টার ফর ল এন্ড পলিসি এ্যফেয়ার্স (সিএলপিএ) যৌথভাবে এই ওয়েবিনারের আয়োজন করে।

আর্ক ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হকের সঞ্চলনায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যার মানসিক স্বাস্থ্যের আঞ্চলিক উপদেষ্টা ড. নাজনীন আনোয়ার, মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ড. হেলাল উদ্দীন আহমেদ, ইউনিসেফের প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত এইচআইভি ও এইডস বিশেষজ্ঞ লাজিনা মুনা, সেন্টার ফর ল এন্ড পলিসি এ্যফেয়ার্সের সেক্রেটারি ও নীতি বিশ্লেষক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

আমরা সবাইকে করোনার বার্তা ভালোভাবে পৌঁছাতে পারছি না। সবাইকে বলছি আপনারা ঘরে থাকুন। কিন্তু তারা যে বাসায় থেকেও জরুরি প্রয়োজনে এক ঘণ্টার শরীরচর্চার জন্য নিরাপদে বাইরে যেতে পারে সেটার নিশ্চয়তা দিতে পারছি না। ফলে এ সময় নানা কারণেই মানসিক সমস্যা তৈরি হচ্ছে। কিন্তু সেগুলো থেকে বের হবার পথ সাধারণ মানুষ জানে না।

[caption id="attachment_232752" align="aligncenter" width="700"] অনলাইন মিটিং প্লাটফর্ম জুম এ পরিচালিত ‘কভিড-১৯ ও মানসিক স্বাস্থ্য’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে এই গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।[/caption]

হেলাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, করোনা মহামারির মধ্যে মানসিক সমস্যা বেড়েছে। সবাই এই সমস্যায় না ভুগলেও অনেকের মধ্যেই নমুনা দেখা যাচ্ছে। এই সময়টাতে এক ধরনের অনিয়ম তৈরি হয়েছে। তরুণরা রাতে ঘুমাচ্ছে কম, এতে তাদের মধ্যে এক ধরনের খিটখিটে স্বভাব তৈরি হচ্ছে। এ সমস্যা থেকে বের হয়ে আসতে হলে অন্যান্য রোগের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি দরকার। মানসিক রোগ নয় মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।

ড. নাজনীন আনোয়ার বলেন, করোনার এ সময়ে বিশ্ব ব্যাপী মানসিক রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তাদের মধ্যে নানা ধরনের বিষন্নতা তৈরি হচ্ছে। করোনা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে এক ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নিয়ে কাজ করছে। এ জন্য আমাদের প্রচুর তথ্য প্রয়োজন। মানুষের কীভাবে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা কমিয়ে আনা যায় আমরা তার জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি।

লাজিনা মুনা বলেন, গবেষণায় মানসিক স্বাস্থ্যের যে ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে তা আসলেই উৎকণ্ঠার। সবসময়েই নারী এবং তরুণরা মানসিক সমস্যায় বেশি ভোগেন। রাষ্ট্র, পরিবার, সমাজের সবার উচিত তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া। সারাবিশ্বেই করোনার কারণে এ সমস্যা ক্রমেই বাড়ছে। আমরা চেষ্টা করছি কীভাবে মানুষকে সহায়তা করা যায়। আশা করি এ সমস্যা থেকেও মুক্তি পাবো।

সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক যে আইন আছে সেটি মানসিক সমস্যা হবার পর কি হবে তা নিয়ে। মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয় তেমন নেই। মানসিক রোগের আইন কাঠামো সংস্কার দরকার। লোকাল গভর্নমেন্ট আইনে কোথাও মানসিক স্বাস্থ্যের কথা বলা নেই। স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্য, পারিবারিক ও শিক্ষাসংশ্লিষ্ট আইনসহ অন্যান্য আইনে পরিবর্তন করে মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়সমূহ যুক্ত করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App