×

জাতীয়

মোটা টাকা হাতানোই ছিল সাবরিনা দম্পতির টার্গেট

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ জুলাই ২০২০, ০৯:২৬ এএম

মোটা টাকা হাতানোই ছিল সাবরিনা দম্পতির টার্গেট

করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাব দেখার পর থেকেই সরকার তা প্রতিরোধে সর্বাত্মকভাবে কাজ শুরু করে। এ সংকট নিরসনে কোভিড-১৯ নমুনা পরীক্ষাসহ নানা কাজ সমাধানে নেয়া প্রকল্পে অর্থও বরাদ্দ করা হয়। আর এ সংকটকালীন সময়টিকে কাজে লাগিয়েই বিরাট অঙ্কের টাকা মেরে দেয়ার পরিকল্পনা ছিল হঠাৎ করেই উদয় হওয়া জোবেদা খাতুন হেলথ কেয়ার (জেকেজি) নামের প্রতিষ্ঠানটির। আর এ পরিকল্পনা স্বার্থক করতেই জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক ডা. সাবরিনা তার পরিচিতিকে কাজে লাগিয়ে জেকেজির প্রধান নির্বাহী (সিও) স্বামী আরিফুল হক চৌধুরীকে কাজ পাইয়ে দিতে তোড়জোড় শুরু করেন। একপর্যায়ে লাইসেন্স না থাকলেও কাজ পেয়ে যায় ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের ওই প্রতিষ্ঠানটি। আর এসব কাজে সহায়তা করে স্বাস্থ্য বিভাগ সংশ্লিষ্ট কিছু অসাধু চক্র। সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে। সূত্র জানায়, লেনেদেনের ভাগের বিষয়টিও তারা ঠিক করেছিল। টার্গেট ছিল শতাধিক কোটি টাকা মেরে দেয়ার। দ্রুততম সময়ে টাকা হাতিয়ে নিতেই বেপরোয়া হয়ে উঠে জেকেজি। করোনা পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহের অনুমতি পেলেও রিপোর্ট দেয়া শুরু করে টাকার বিনিময়ে। তবে তিতুমীর কলেজের ঘটনা গণমাধ্যমে আসার পর তারা নজরদারিতে পড়েন। পুলিশ তদন্তে নানা অনিয়ম পায়। টাকা ছাড়ের আগেই গ্রেপ্তার হন তারা। গতকাল শনিবার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে। কোভিড-১৯ পরীক্ষার ফলাফল জালিয়াতির ঘটনায় এখন জেকেজির চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা ও সিও আরিফুল হক চৌধুরী ডিএমপি গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) রিমান্ডে রয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদে এ দম্পতিগতকাল পর্যন্ত তিনবার মুখোমুখি হয়েছেন। শুরুতে দুজনকে দোষারোপ করলেও পরেরবার তারা এক অপরের সমর্থনেই অনেক কথা বলেছেন। ডা. সাবরিনার আচরণ ছিল সহযোগিতামূলক। তিনি স্বাভাবিক আছেন। সকালে ও রাতে রুটি সবজি খাচ্ছেন। গতকাল শনিবার দুপুরে ভাত খেয়েছেন ইলিশ মাছ দিয়ে। এ দম্পতির কাছ থেকে পাওয়া তথ্য ক্রসচেকের জন্য জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে। আজ রবিবার ডা. সাবরিনাকে পুনরায় রিমান্ডে নেয়ার দুদিন শেষ হবে। জেকেজি কোভিড-১৯ পরীক্ষা জালিয়াতির ঘটনায় গ্রেপ্তার ডা. সাবরিনার নেপথ্যে কারা রয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি ডিবির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, কোথাও না কোথাও তো তিনি সহযোগিতা পেয়েছেন। তা না হলে এ কাজগুলো করার কথা না। তবে তদন্তের জন্য যারা সংশ্লিষ্ট তাদের সবাইকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করব। তিনি আরো বলেন, তদন্তের একপর্যায়ে ডা. সাবরিনা আগে যে তথ্যগুলো দিয়েছিল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আসলে ডা. সাবরিনা মূলত তার ফেসভ্যালু এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন জায়গায় তার পরিচিতিটাই ব্যবহার করেছেন। স্বামী আরিফুলও তার সঙ্গে মূলত সে বিষয়টি ক্যাপিটালাইজড করে বিভিন্ন প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন। যেমন প্রাথমিকভাবে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় একটি প্রজেক্ট তৈরি করেছিল যেখানে স্যাম্পল সংগ্রহ ও কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা করার কথা ছিল- যা তারা করেনি। আসলে বিষয়টি এখনো তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্তে তার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পাওয়া গেলে তা আমরা আমলে নেব। এছাড়া অনিয়ম পাওয়া গেলে স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তা জানানো হবে। তারা পরে নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন। প্রসঙ্গত, সরকারের কাছ থেকে বিনামূল্যে নমুনা সংগ্রহের অনুমতি নিয়ে বুকিং বিডি ও হেলথ কেয়ার নামে দুটি সাইটের মাধ্যমে টাকা নিচ্ছিল এবং নমুনা পরীক্ষা ছাড়াই ভুয়া সনদ দিত জেকেজি। এ বিষয়ে রাজধানীর কল্যাণপুরের একটি বাড়ির কেয়ারটেকারের অভিযোগের সত্যতা পেয়ে গত ২২ জুন জেকেজির সাবেক গ্রাফিক ডিজাইনার হুমায়ুন কবীর হিরু ও তার স্ত্রী তানজীন পাটোয়ারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরদিন প্রতিষ্ঠানটির সিইও আরিফুলকেও গ্রেপ্তার করা হয়। জেকেজির নমুনা সংগ্রহের যে অনুমোদন ছিল, তাও ২৪ জুন বাতিল করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ওই ঘটনায় করা মামলায় সাবরিনা, আরিফুল ও সাঈদ ছাড়াও হুমায়ুন কবীর হিরু, তানজীন পাটোয়ারী, জেকেজির কর্মী মামুনুর রশিদ ও বিপ্লব গ্রেপ্তার রয়েছেন। এদের মধ্যে হিরু ও তার স্ত্রী তানজীন পাটোয়ারী আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App