×

জাতীয়

ডব্লিউটিসির অনিয়মে ক্ষুব্ধ জাহাজ মালিকরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২০, ১০:০১ এএম

ডব্লিউটিসির অনিয়মে ক্ষুব্ধ জাহাজ মালিকরা

ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য পরিবহন নিয়ে লাইটারেজ জাহাজ মালিকদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তাদের অভিযোগ, সিরিয়ালের নিয়ম না মেনেই কিছু জাহাজকে পণ্য পরিবহনের সুযোগ দিচ্ছে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল (ডব্লিউটিসি)। আর মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও সুযোগ পাচ্ছেন না অনেকে। মানা হচ্ছে না সরকারি নির্দেশনা। নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও পণ্য পরিবহন করছে বালুবাহী জাহাজ। এসব অনিয়ম বন্ধ না হলে আগামী ১ জুলাই থেকে দেশে জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। নৌপথে পণ্য পরিবহনে শৃঙ্খলা আনার জন্য ২০০৫ সালে জাহাজ মালিকদের ৩ সংগঠনের (কোয়াব, বিসিভোয়া, আইভোয়াক) প্রতিনিধি, পণ্যের এজেন্ট ও লোকাল এজেন্টদের নিয়ে গঠন করা হয় ডব্লিউটিসি। চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে ও ঢাকায় এর অফিস রয়েছে। মূলত কোনো জাহাজ কখন বন্দরে পণ্য লোড-আনলোড করতে পারবে, প্রতিদিন এর সিরিয়াল নির্ধারণ করে তালিকা প্রকাশ করে ডব্লিউটিসি। ডব্লিউটিসির এই তালিকা ছাড়া বন্দর কর্তৃপক্ষ কোনো জাহাজে পণ্য লোড-আনলোডের অনুমতি দেয় না। কিন্তু এ তালিকা করতে গিয়েই অনিয়ম করা হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে সংস্থাটির বিরুদ্ধে। কোস্টাল শিপ ওনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) সাবেক সভাপতি মাহবুব উদ্দীন আহমেদ (বীরবিক্রম) বলেন, প্রতি বছর কার্গো জাহাজে প্রায় আড়াই কোটি টন পণ্য পরিবহন করা হয়। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ পণ্য পরিবহন করা হয় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে। নিয়ম অনুযায়ী, ডব্লিউটিসির সিরিয়ালের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে জাহাজে পণ্য পরিবহন করার কথা। কিন্তু ডব্লিউটিসির কয়েক অসাধু কর্মকর্তা ও পণ্যের এজেন্ট মিলে দুর্নীতির বলয় তৈরি করেছেন। কিছু জাহাজকে তারা মাসে ২-৩টি ট্রিপের সুযোগ করে দিচ্ছেন। আর সাধারণ জাহাজ মালিকেরা ২-৩ মাসে একটি ট্রিপও পাচ্ছেন না। এ কারণে বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে প্রায় ৮০০ লাইটারেজ জাহাজ অলস বসে আছে। তিনি বলেন, সম্প্রতি নৌপরিবহন অধিদপ্তর চিঠি ইস্যু করে নিয়ম লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বললেও ডব্লিউটিসি কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এ পরিস্থিতিতে জাহাজ মালিকরা সম্প্রতি একটি সম্মিলিত সংগ্রাম কমিটি গঠন করেন। ওই কমিটির মুখপাত্র মো. রকিবুল আলম দিপু বলেন, বারবার আলোচনা করেও বিষয়গুলোর কোনো সুরাহা হয়নি। উল্টো পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। তাই আন্দোলনে নামার বিকল্প নেই বলে আমরা মনে করি। ডব্লিউটিসির কমিটির মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এরপরও ওই কমিটি কাজ করে যাচ্ছে। এভাবে নৈরাজ্য চলতে থাকলে এ খাত মুখ থুবড়ে পড়বে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে আমাদের প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। যদি সবাই সমান সুযোগ না পাই, তাহলে অনেককে ব্যাংক খেলাপি হতে হবে। এক সময় ব্যবসা ছেড়ে দিতেও বাধ্য হবেন অনেকে। তাই অনিয়মের প্রতিবাদ ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে আমরা একটি সম্মিলিত সংগ্রাম কমিটি গঠন করেছি। এতে বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল ওনার্স এসোসিয়েশনের (বিসিভোয়া) সভাপতি মো. ইকবাল হোসেনকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। মাহবুব উদ্দীন আহমেদ বীরবিক্রম এই কমিটির প্রধান উপদেষ্টা। এমন পরিস্থিতিতে গত বৃহস্পতিবার জাহাজ মালিক, এজেন্ট ও ডব্লিউটিসির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর সৈয়দ আরিফুল ইসলাম। আলোচনা শেষে বিসিভোয়ার সাধারণ সম্পাদক নুরুল হক জানান, আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে যদি বিদেশ থেকে আসা মাদার ভেসেলের পণ্য খালাসে সিরিয়ালের সমস্যা সমাধান না হয় তাহলে ১ জুলাই থেকে জাহাজ চলাচল বন্ধ করে আন্দোলনে যাবেন তারা। এ প্রসঙ্গে কমডোর সৈয়দ আরিফুল ইসলাম বলেন, ডব্লিউটিসির বিরুদ্ধে নীতিমালা ভাঙার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি আগামী ৩০ জুনের মধ্যে সব অবৈধ জাহাজ বন্ধ ও সিরিয়াল অনুযায়ী, জাহাজ চলাচলের নির্দেশ দিয়েছেন। বাল্কহেডে যেন অবৈধভাবে পণ্য পরিবহন করা না হয়, সেজন্য নৌপথে ৪-৫টি চেকিং পয়েন্ট করা হবে বলে জানান তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App