×

জাতীয়

মতিঝিলের ক্যাসিনোপাড়া মাদকসেবীদের স্বর্গরাজ্য

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২০, ১০:৪৯ এএম

মতিঝিলের ক্যাসিনোপাড়া মাদকসেবীদের স্বর্গরাজ্য

প্রতীকী ছবি

রাজধানীর মতিঝিল ক্লাবপাড়া ক্যাসিনোর কারণে এক সময় দিন-রাত জমজমাট থাকলেও এখন পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের পর থমকে গেছে সবকিছু। এর মধ্যে বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে ওই এলাকায় বিরাজ করছে নীরবতা। তবে এ সুযোগে ক্লাবগুলো ঘিরে গড়ে উঠেছে মাদকসেবীদের আখড়া। ক্যাসিনো মামলায় চিহ্নিত ক্লাবগুলো পুলিশের সিলগালা অবস্থায় থাকলেও কতিপয় মাদক ব্যবসায়ী ও সেবীরা ওই এলাকায় অবাধে বিচরণ করছে। তাদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে ওই এলাকা। পুলিশও ব্যস্ত সময় পার করছে করোনা প্রতিরোধে মানবিক ডিউটি পালনে। বন্ধ থাকা ক্লাবগুলোতে সেভাবে নজর দিতে পারছে না তারা। এই সুযোগে স্থানীয় মাদকসেবীরা ক্লাবগুলোর ছাদ ও আশপাশের দেয়াল সংলগ্ন এলাকা দখলে নিয়েছে। আশপাশের বাসিন্দাদের কাছে এ দৃশ্য এখন নিত্যদিনের।

এ প্রসঙ্গে মতিঝিল থানার ওসি ইয়াসির আরাফাত খান বলেন, আদালতের নির্দেশে ক্লাবগুলোতে তালা মেরে সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। ক্লাবের নিরাপত্তায় পুলিশ টহল ডিউটি দেয়। তবে ক্লাবগুলোর আশপাশে মাদকসেবীদের আড্ডার বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। ক্লাবগুলোর কর্মকর্তারা তথ্য দিয়ে পুলিশের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।

গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে বদলে যাওয়া ক্লাবপাড়ার পুরো দৃশ্যপট এখনো স্বাভাবিক হয়নি। সামনে সাইনবোর্ড থাকলেও প্রতিটি ক্লাবের দরজা সিলগালা করা। ঝুলছে পুলিশের লাগানো তালা। দিন-রাত কোলাহল লেগে থাকা ক্লাবঘর আর চত্বর এখনো নীরব-নিস্তব্ধ। ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেড, ফকিরেরপুল ইয়ংমেনস ক্লাব, ভিক্টোরিয়া ক্লাব, আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ, আজাদ স্পোর্টিং ক্লাব, সোনালি অতীত ক্রীড়াচক্র, দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাব, ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়াচক্র, ধানমন্ডি ক্লাব, কলাবাগান ক্রীড়াচক্র এখন নীরবতায় ডুবে আছে। একমাত্র ওয়ারী ক্লাব ছাড়া বাকি সব ক্লাবের ফটকে পুলিশের লাগানো তালা ঝুলছে।

গত শুক্রবার সকালে পুলিশ মতিঝিলের আরামবাগ ক্লাবের ছাদ থেকে সাইফুল ইসলাম নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে। এলাকাবাসী জানায়, মৃত সাইফুল ক্লাবপাড়ায় ইয়াবাসেবী ছিলেন। লাশ উদ্ধারের আগের দিন দুপুর থেকে সাইফুলসহ আরো ৪/৫ জন ছাদের ওপর বসে ইয়াবা সেবন করেছেন। আশপাশের বাড়ির জানালা দিয়ে বাসিন্দারা এমন দৃশ্য সব সময়ই দেখেন।

আরামবাগ ক্লাবের আশপাশের একাধিক বাসিন্দা বলেছেন, ক্লাবের ভেতরে যখন মাদক সেবন হয় তখন পুলিশের খোঁজ থাকে না। পুলিশের সোর্স জুলহাস এখন ক্লাব পাড়ার ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদকের বড় ডিলার। তার সহযোগী সেন্টু, রনি, জাফরসহ আরো অন্তত ২০ থেকে ৩০ জন ইয়াবা কারবারে জড়িত। এলাকায় খুচরা ইয়াবা, গাঁজা ও ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক বিক্রি করে তারা।

মতিঝিলের ক্লাবপাড়ার ইমরান আহমেদ নামে এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, করোনার কারণে সন্ধ্যার পর ক্লাব পাড়া অনেকটা জনমানব শূন্য হয়ে পড়ে। এলাকায় ভুতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয়। দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। এই সুযোগে মাদকসেবীরা ক্লাবগুলোর দেয়াল প্রাচীর টপকে ভেতরে আড্ডা দেয়। ইয়াবা সেবন করে।

শুধু এলাকাবাসী নয়, ক্লাবগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে কথা বলেও একই ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে। তারা বলছেন, ক্যাসিনো অভিযানের পর ক্লাবগুলোতে এখনো পুলিশের তালা ঝুলছে। এর মধ্যে দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়ে উঠেছে। এই সুযোগে ক্লাবগুলোতে চুরিও হচ্ছে। তিন মাস আগে মতিঝিলের আরামবাগ ক্লাবে পুলিশের তালা মারা দরজা ভেঙে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের তিনটি যন্ত্রসহ বেশ কিছু মালামাল চুরি হয়ে গেছে। ক্লাবগুলোতে এখন মাদক সেবনের জমজমাট আসর বসে।

লোকজনের অভিযোগ প্রসঙ্গে আরামবাগ ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব আলী বলেন, ক্যাসিনো অভিযানের পর ক্লাবগুলোতে তালা মেরে চাবি পুলিশ নিয়ে গেছে। সামনে খেলাধুলার দলবদল হবে। এ অবস্থায় সামনে ক্রীড়াঙ্গনের কী পরিস্থিতি হবে সেটা নিয়ে নীতি নির্ধারকদের আগেই চিন্তা করতে হবে। যতদিন ক্লাবের তালা খুলে কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে না দেবে ততদিন এর নিরাপত্তার দায় দায়িত্ব পুলিশেরই।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়ে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত চলা ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান দেশে আলোচনার ঝড় তুলে। সমালোচিত হন দেশের অনেক স্বনামধন্য ব্যক্তি ও রাজনৈতিক নেতা। গ্রেপ্তার হন অনেকে। ক্যাসিনো কাণ্ডে গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে মোহামেডান ক্লাবের লোকমান হোসেন ভূঁইয়া কাশিমপুর-১ কারাগার থেকে মুক্তিপান গত ১৯ মার্চ। কলাবাগান ক্লাবের শফিকুল আলম ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান ১ জানুয়ারি। গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে তেজগাঁওয়ের মণিপুরীপাড়ার বাসা থেকে লোকমান হোসেন ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর রাতে শফিকুল আলমকে কলাবাগান ক্রীড়াচক্র থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটকে আটকের পর সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। তিনি ও যুবলীগের আরেক বহিষ্কৃত নেতা খালিদ মাহমুদ ভূূঁইয়াসহ প্রায় একডজন ব্যক্তি ক্যাসিনোকাণ্ডে গ্রেপ্তারের পর কারাবন্দি আছেন। এসব ঘটনায় দায়ের করা মামলার মধ্যে বেশ কয়েকটির চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হয়েছে। কয়েকটি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App