×

জাতীয়

ক্ষতি পোষাতে বিদ্যুৎ বিভাগেরই কারসাজি!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ জুন ২০২০, ০৯:৫২ এএম

ক্ষতি পোষাতে বিদ্যুৎ বিভাগেরই কারসাজি!
মিটার রিডাররা অনুমাননির্ভর হয়ে বিল করার কারণেই ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিলের সৃষ্টি হয়েছে- বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তরা এমন দাবি করলেও আসল কারণ ভিন্ন বলে মনে করেন সাধারণ গ্রাহকরা। করোনাকালের ক্ষতি পোষাতেই লাগামছাড়া বিল চাপিয়ে দেয়া দেয়া হয়েছে বলে মনে করেন তারা। বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোর এমন দায়িত্বহীন আচরণের কারণেই সরকারকে কঠিন সমালোচনার মধ্যে পড়তে হয়েছে। অস্বাভাবিক বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে গ্রাহকের ভোগান্তি বেড়েছে। এ পরিস্থিতিতে অস্বাভাবিক বিল সমন্বয় করার ঘোষণার পরও অনেক গ্রাহকেরই বিল সমন্বয় করা হয়নি। আবার কোনো কোনো এলাকায় ভুতুড়ে বিল কমিয়ে দেয়ার কথা বলে মিটার রিডাররা দুর্নীতির আশ্রয় নিচ্ছে বলেও অভিযোগ মিলেছে। জানা গেছে, গত ৩ মাসে রাজধানীসহ সারাদেশের সবগুলো বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে গ্রাহকদের ভুতুড়ে বিল দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। বিতরণ কোম্পানিগুলোও অভিযোগের সত্যতা মেনে নিয়ে সমন্বয়ের আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু অনেক গ্রাহক অভিযোগ করেছেন, ‘চলতি মাসে তারা যে বিল হাতে পেয়েছেন তাতে বিল সমন্বয় করা হয়নি। ইতোমধ্যেই অনেক গ্রাহক বিল পরিশোধ করেছেন। তাদের বিল আদৌ সমন্বয় করা হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েই গেছে।’ অন্যদিকে হঠাৎ ভুতুড়ে বিলের কারণে অনেক গ্রাহক এখন পর্যন্ত বিল পরিশোধ করতে পারেননি। রাজধানীতে বিদ্যুৎ বিতরণকারী কোম্পানি ডিপিডিসি ও ডেসকোর কর্মকর্তারাও ভুতুড়ে বিলের অভিযোগ আমলে নিয়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ বোর্ড (আরইবি), ওয়েস্টজোন পাওয়ায় ডিস্টিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো), নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) কর্মকর্তারাও ভুতুড়ে বিলের সত্যতা স্বীকার করে সমন্বয়ের আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু তারপরও ভুতুড়ে বিলের পেছনের রহস্য কী তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গেছে। অনেক গ্রাহক অভিযোগ করেছেন, বিল নিয়ে বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর দুর্নীতি নতুন কিছুই না। করোনার মধ্যেও অনেক এলাকার মিটার রিডাররা দুর্নীতির আশ্রয় নিচ্ছে। অস্বাভাবিক বিল কমিয়ে দেয়ার কথা বলে ঘুষ দাবি করছে। এতে বোঝা যায়, মিটার রিডাররা এ ধরনের বাড়তি আয়ের জন্য বিলে অস্বাভাবিক টাকার অঙ্ক বসিয়ে দিয়েছে। এখন ঘুষ নিয়ে তা কমানোর আশ্বাস দিচ্ছে। অনেকেই মিটার রিডারদের এই প্রলোভনে সায় দিয়েছে, আবার অনেক গ্রাহক এই প্রস্তাব মেনে না নিয়ে স্বাভাবিকভাবে সমন্বয়ের অপেক্ষায় রয়েছেন। আবার কেউ কেউ বিদ্যুৎ বিভাগের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে বলেন, করোনার কয়েক মাসে বিদ্যুতের ব্যবহার কমে যায়। যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে তা বিক্রি না হওয়ায় বিদ্যুৎ বিভাগ লোকসানের মুখে পড়েছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতেই গ্রাহকদের পকেট কাটতে বিদ্যুৎ বিভাগের অঘোষিত নির্দেশে ভুতুড়ে বিল তৈরি করা হয়েছে। অনেকেই অভিযোগ করেন, বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের জরিমানা আদায় বাবদ বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো মোটা অঙ্কের অর্থ আয় করে। কিন্তু করোনাকালে সরকার বিলম্বে বিল পরিশোধের জরিমানা মওকুফ করে। এর ফলে কোম্পানিগুলোর অনেক টাকা আয়ের স্বাভাবিক পথ বন্ধ হয়ে যায়। এই ক্ষতি পোষাতে কোম্পানিগুলো ইচ্ছে করেই বিদ্যুৎ বিলে ভুত ঢুকিয়ে দিয়েছে। করোনার দুর্যোগকালে সরকার দেশের মানুষকে যেটুকু সুবিধা দিয়েছিল, ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিলের কারণে সরকারের সেই ভালো উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে। মগবাজার এলাকার বাসিন্দা অভিষেক অভিযোগ করেন, আমি প্রতি মাসের বিদ্যুৎ বিল নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই পরিশোধ করি। স্বাভাবিক সময়ে দেড় হাজার টাকার মতো বিদ্যুৎ বিল আসে। কিন্তু করোনাকালে প্রতি মাসেই সাড়ে ৩ হাজার টাকার বেশি বিল এসেছে। সংক্রমণ থেকে বাঁচতে এবং যেহেতু বিল পরিশোধ হয়ে গেছে তাই অভিযোগ নিয়ে অফিসে যাইনি। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমার বাসার ভুতুড়ে বিল সমন্বয় করা হয়নি। এ ধরনের বিলের রহস্য কী? রাজধানীর রায়েরবাজার এলাকার বাসিন্দা জুয়েল অভিযোগ করেন, তার ছোট বাসায় ৮০০-১০০০ টাকা বিল আসে। গত ৩ মাসে দ্বিগুণ হারে বিল এসেছে। ভুতুড়ে বিলের রহস্য কী জানতে চাইলে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান ভোরের কাগজকে বলেন, এখানে রহস্যের কিছুই নেই। পরিস্থিতির কারণে এমনটা হয়েছে। করোনা মহামারির কারণে সারাবিশ্বের মানুষ মৃত্যুভয়ে আতঙ্কিত। ডিপিডিসির লোকজনও এর বাইরে না। সংক্রমণ এড়াতে আমাদের মিটার রিডাররা গ্রাহকদের বাসায় বাসায় গিয়ে মিটার দেখতে পারেনি। এ কারণে বিগত মাসের বিলগুলো পর্যালোচনা করেই অনুমাননির্ভর বিল করেছে। এতে কোথাও কোথাও অতিরিক্ত বিল হয়েছে বলে অভিযোগ আমরা পেয়েছি। অতিরিক্ত বিল সমন্বয় করা হয়েছে। যাদের এখনো অভিযোগ রয়েছে তারা নিজ নিজ এলাকার বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে বিল সমন্বয় করিয়ে নিতে পারবেন। ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাওসার আমির জানান, করোনার কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। মিটার না দেখে অনুমাননির্ভর বিল করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। গড় বিল দেয়া হয়েছে। আমরা পরিস্থিতি উত্তরণের ব্যবস্থা নিয়েছি। ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিলের বিষয়টিকে ভিন্নভাবে দেখছে ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাব। ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, এভাবে বিল করা বাঞ্ছনীয় নয়। এই দুর্যোগ মানুষের সঙ্গে এ ধরনের তামাশা করা ঠিক হয়নি। বিদ্যুৎ বিভাগ তাদের দুর্নীতি বন্ধ করছে না। অথচ ভোক্তাদের কাঁধে ভর করে টাকা আদায়ের চেষ্টা করছে। পাওয়ার সেলের একাধিক কর্মকর্তা জানান, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিদ্যুৎ খাত চতুর্মুখী ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। চাহিদা কমে যাওয়ায় উৎপাদন, সঞ্চালন, বিতরণ ও বিল আদায় সব দিকেই ক্ষতির মুখে বিদ্যুৎ খাত। পাওয়ার সেলের হিসাব অনুযায়ী করোনার কারণে চলতি বছরের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ৩৫ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। এতে ভর্তুকি বাড়বে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App