×

জাতীয়

করোনাকালে অশ্রুবর্ষণের আষাঢ় এলো

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২০, ০২:২৯ পিএম

করোনাকালে অশ্রুবর্ষণের আষাঢ় এলো

বর্ষার কদম ফুল

করোনাকালে অশ্রুবর্ষণের আষাঢ় এলো

বর্ষার নস্টালজিক ছবি। সংগ্রহ।

করোনাকালে অশ্রুবর্ষণের আষাঢ় এলো

আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান

করোনাকালে অশ্রুবর্ষণের আষাঢ় এলো

বর্ষায় ধেয়ে আসা মেঘ

প্রতিবছর আষাঢ় এলেই কবিরা ভাবালুতায় মুখর হয়ে ওঠেন। আলসে কবিতার ঝড় ওঠে ডায়েরির পাতায় পাতায়। নস্টালজিক সুখে কাতর হয়ে পড়েন ভাবে বিমুগ্ধ কবিরা। আর নগরের সুখ বিলাসীরা অট্টালিকার জানালা খুলে আকাশ দেখেন। মাইক্রোস্কোপ দিয়ে খুঁজে বেড়ান আষাঢ়ের রাবীন্দ্রিক সৌন্দর্যকে। সেসব বিলাসীদের জন্যই গণমাধ্যমে নীপবনের ছবি ভেসে ওঠে। নাগরিক মনকে আষাঢ়ের ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দিতে ঢাউস নিউজ করা হয়। কখনও ভিডিও ক্যামেরায় আষাঢ়কে ধরার প্রাণপণ চেষ্টা চলে। আর ব্যাকগ্রাউন্ডে বেজে ওঠে কবিগুরুর আবেগময় গান- বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান, আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান। মেঘের ছায়ায় অন্ধকারে রেখেছি ঢেকে তারে এই যে আমার সুরের ক্ষেতের প্রথম সোনার ধান। আজ এনে দিলে, হয়তো দিবে না কাল রিক্ত হবে যে তোমার ফুলের ডাল। এ গান আমার শ্রাবণে শ্রাবণে তব বিস্মৃতি স্রোতের প্লাবনে ফিরিয়া ফিরিয়া আসিবে তরণী বহি তব সম্মান।। [caption id="attachment_225953" align="aligncenter" width="1200"] বর্ষার নস্টালজিক ছবি। সংগ্রহ।[/caption] তবে শুধু কি ক্যামেরাতেই থাকে শ্রাবণের দৃশ্যপট? প্রিন্ট মিডিয়াতে আষাঢ়ের ঢলের গভীরে ডুব দেয়াটা আরো বেশি করে চোখে পড়ে। মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের এক্রোস্টিক কবিতার সেই ধ্রুপদী পঙক্তি উঠে আসে পত্রিকার পাতায় পাতায়- গভীর গর্জন সদা করে জলধর, উথলিল নদ-নদী ধরণী উপর। রমণী রমণ লয়ে, সুখে কেলি করে দানবাদি দেব যক্ষ সুথিত অস্তরে। সমীরণ ঘন ঘন ঝন ঝন রব, বরুণ প্রলয় দেখি প্রবল প্রভাব। স্বাধীন হইয়া পাছে পরাধীন হয়। কলহ করয়ে কোন মতে শাস্ত নয়। [caption id="attachment_225954" align="aligncenter" width="512"] আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান[/caption] কথিত আছে, বর্ষা ঋতু তার বৈশিষ্ট্যের কারণেই স্বতন্ত্র। বর্ষা কাব্যময়, প্রেমময়। বর্ষার প্রবল বর্ষণে নির্জনে ভালোবাসার সাধ জাগে, চিত্তচাঞ্চল্য বেড়ে যায়। শত ঘটনার ভিড়েও কোথায় যেন মেলে এক চিলতে বিশুদ্ধ সুখ। আষাঢ়েই শোনা যায় রিমঝিম বৃষ্টির ছন্দ। তবে এখন আর নবধারা জলে ভিজে শীতল হওয়ার আহ্বান থাকে না প্রকৃতিতে। সব রুক্ষতাকে বিদায় জানিয়ে বাংলার মাটি নরম কোমল হয়ে উঠার প্রবণতাও কেমন দূরাগামী। বর্ষায় নতুন প্রাণের আনন্দে গাছপালার অঙ্কুরিত হওয়া, মাঠে মাঠে কৃষকের মুখে হাসি ফুটে ওঠার ঘটনা যেন সত্যিই ইতিহাস। [caption id="attachment_225955" align="alignleft" width="263"] বর্ষায় ধেয়ে আসা মেঘ[/caption] রবীঠাকুরের সেই ভাষা ‘ঐ আসে ঐ ঘন গৌরবে নব যৌবন বরষা, শ্যাম গম্ভীর সরসা…’। বর্ষার রাবীন্দ্রিক সেই রূপ-ঐশ্বর্য এখন শুধু বইয়ের পাতা কিংবা পত্রিকার পাতাতেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। তবুও আজ আষাঢ় এসেছে অনেক বৃষ্টি নিয়ে। সেই বৃষ্টি কখনও বর্ষণ, কখনও অতিবৃষ্টি, কখনও প্লাবন কিংবা ভয়ঙ্কর বন্যা। বিশ্ব এখন করোনা বিপর্যয়ে বিপর্যস্ত। নগর এখন ভীত, সন্ত্রস্ত। কখনও জনশূন্য। সৌন্দর্যের কোনো আহ্বান নেই। শুধু কান্নার হাহাকার। এর মধ্যেই কখন যে আষাঢ় এলো জানে না কেউ। তবুও আষাঢ়কে তো ফেরানো যায় না আমাদের এই অশ্রুবর্ষণের দিনে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App