×

জাতীয়

তদন্তে ইউনাইটেডের গাফিলতিরই ইঙ্গিত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ জুন ২০২০, ০১:৪৯ এএম

৪৪ জনের জবানবন্দী, আগামী সপ্তাহেই প্রতিবেদন, মামলা দায়ের

রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানের ইউনাইডে হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ড ও পাঁচ করোনা আক্রান্ত রোগী পুড়ে মারা যাওয়ার ঘটনাসংশ্লিষ্ট তদন্তের কাজ প্রায় গুছিয়ে এনেছে ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভি ডিফেন্স অধিদপ্তর। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, এখন পর্যন্ত তারা ১৯ জনের জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের করা তদন্ত কমিটির সঙ্গে তদন্ত কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য আগামী সপ্তাহেই বসবেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, হাসপাতালটি নিজস্ব সিস্টেমে আগুন নেভাতে সমর্থ হয়নি। ফায়ার সার্ভিস কর্মীদেরই গিয়ে আগুন নেভাতে হয়। ফায়ার হাইড্রেন্ট থাকলেও তা চালু হয়নি। এছাড়াও অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র মেয়াদোত্তীর্ণ ছিল। এগুলো হাসপাতালেরই গাফিলতিরই ইঙ্গিত দেয়।

এদিকে, ইউনাইডে হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত মুক্তিযোদ্ধা ভেরনন এ্যান্থনী পলের (৭৪) জামাতা রোনাল্ড মিকি গোমেজ বাদি হয়ে গুলশান থানায় মামলা করেছেন। গত বুধবার সন্ধ্যায় অবহেলাজনিত ও তাচ্ছিলপূর্ণ কাজের অভিযোগে হাসপাতালটির চেয়ারম্যান, এমডি, সিইও, পরিচালক, সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক, নার্স, সেফটি ও সিকিউরিটির দায়িত্বে থাকা প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন তিনি।

তদন্তে কী পাওয়া গেল সে বিষয়ে কিছু না জানালেও ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের উপপরিচালক দেবাশীষ বর্ধন ভোরের কাগজকে বলেন, ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এ কাজে অনেকদূর অগ্রসর হয়েছি। এখন পর্যন্ত ১৯ জনের জবানবন্দী নেয়া হয়েছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই দ্রুত রিপোর্ট দেয়া সম্ভব হবে। এর মধ্যে আমরা পুলিশের তদন্ত কমিটির সঙ্গেও বসবো।

অপরদিকে, ডিএমপির গুলশান বিভাগের তদন্ত প্রধান এডিসি গুলশান আবদুল আহাদ ভোরের কাগজকে বলেন, যথাসময়েই তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়া হবে। তদন্তের প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট ২৫ জনের জবানবন্দী নিয়েছি আমরা। এছাড়াও গত বুধবার দগ্ধ হয়ে নিহত ভেরনন এ্যান্থনী পলের জামাতার দায়ের করা মামলাটিও আমরা খতিয়ে দেখবো।

মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, গত ২৫ মে তার শ্বশুর মুক্তিযোদ্ধা ভারনন এ্যান্থনী পলকে ব্রেন স্ট্রোকজনিত কারণে চিকিৎসার জন্য ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যান। কোভিড-১৯ পরীক্ষার নেগেটিভ রিপোর্ট নিয়ে গেলেও সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানান, এরপরেও হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসা নিতে হবে। পরে আধঘণ্টা চেকআপ শেষে সেখানকার ৩ নাম্বার বেডে শ্বশুরকে ভর্তি করা হয়। পরেরদিন দুপুর ১টার দিকে করোনার স্যাম্পল নেয়ার সময় বলা হয় সন্ধ্যায় পরীক্ষার ফল চলে আসবে।

তবে ওইদিন রিপোর্ট পাওয়া না গেলেও পরেরদিন ২৭ মে বেলা ১১টা থেকেই রিপোর্ট পাওয়ার জন্য খোঁজ খবর নেয়া হয়। পরে বিকেলে শ্যালকসহ ল্যাবে খোঁজ করতে গেলে মৌখিকভাবে জানা যায় রেজাল্ট নেগেটিভ এসেছে। তখন বিষয়টি কর্তব্যরত চিকিৎসককে জানালে তিনি বলেন রিপোর্ট সিস্টেমে ও সফট কপিতে তিনি দেখেছেন তবে হার্ড কপি পাওয়া গেলেই কনসালটেন্ট প্রফেসর ডা. মো. ওমর ফারুকের সঙ্গে কথা বলেই রোগীকে মূলভবনে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

কিন্তু সাড়ে ৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন ইউনিটের সামনে দাঁড়িয়ে থেকেও শ্বশুরকে মূলভবনে স্থানান্তরের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি। এর মধ্যেই শীততাপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র (এসি) থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। সে সময় ওয়ার্ড বয়কে দ্রুত একটি ফায়ার এক্সটিংগুইশার নিয়ে এসে আগুন নেভাতে বলা হলেও, সেখানে কোনো ফায়ার এক্সটিংগুইশার নেই বলে জানানো হয়। এছাড়াও তখন কর্তব্যরত ওয়ার্ড বয়, চিকিৎসক ও নার্স সবাই রোগীদের মুভেবল বেড বের করা কক্ষের দরজা খোলার কোনো চেষ্টা না করেই যে যার মতো সামনের দরজা দিয়ে বের হয়ে যায়।

মামলার এজাহারে আরো উল্লেখ করা হয়, রোগীদের আইসোলেশন কক্ষটিতে কোনো ফায়ার এক্সিট ছিল না ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগী বের করার কোনো প্রকার উদ্যোগ নেয়নি ও সহযোগিতাও করেনি। পরবর্তীতে জানা যায়, হাসপাতাল প্রাঙ্গণে অস্থায়ীভাবে নির্মিত আইসোলেশন ইউনিটটি বৈধ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ও ফায়ার এপ্রুভাল ছিল না। তাছাড়া স্থাপনার কাঠামোগুলোতে অতিমাত্রায় দাহ্য ছিল।

এছাড়াও লাশ হস্তান্তরে অসহায়তা, মর্গের বিল ছাড়াও প্রায় দেড় লাখ টাকার একটি বিল ধরিয়ে দেয়া হয়। তাই অবহেলাজনিত ও তাচ্ছিল্যপূর্ণ কাজের মামলা করা হলো বলে উল্লেখ করা হয়।

বিগত ২০০৬ সালে রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানে ৩৫০ শয্যার ইউনাইটেড হাসপাতাল যাত্রা শুরু করে। হাসপাতালটির চেয়ারম্যান হাছান মাহমুদ রাজা, ভাইস চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ এবং পরিচালক হলেন ফরিদুর রহমান খান। ইউনাইটেড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মইনুদ্দিন হাসান রশিদ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App