×

জাতীয়

দ্রুত ছড়াচ্ছে সংক্রমণ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল ২০২০, ১১:১৪ এএম

দেশে হু হু করে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা, বাড়ছে মৃত্যুও। গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড সংখ্যক ১৮২ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এরমধ্যে আটজন চিকিৎসকও রয়েছেন। সব মিলিয়ে ৪১ জন চিকিৎসক এই রোগে ভুগছেন। গতকাল সোমবার পর্যন্ত দেশে শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮০৩ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৫ জন। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৩৯ জনের। নতুন করে তিনজন সুস্থ হয়ে ফিরেছেন। সব মিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন ৪২ জন। এর আগে গত রবিবার একদিনে ১৩৯ জন করোনা রোগী শনাক্তের কথা জানানো হয়েছিল। রবিবার পর্যন্ত মোট মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৩৪। দেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়। এরপর ধাপে ধাপে বাড়তে থাকে শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা। এলাকাভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকার বাসাবো ও মিরপুরে বেশি সংক্রমণ হয়েছে।

অনলাইন ব্রিফিংয়ে হাজির হয়ে সোমবার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে এসব তথ্য জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলায় করোনায় যারা সংক্রমিত হয়েছেন তাদের বেশিরভাগই ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের। এ বিষয়ে আমাদের আরো বেশি কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। লকডাউন জোরদার করতে হবে। বিশেষ করে সংক্রমিত এলাকাগুলোতে। তিনি বলেন, আমাদের ইতোমধ্যেই ‘কমিউনিটি সংক্রমণ’ হয়ে গেছে। সেটি যাতে না বাড়ে সেদিকে আমাদের খেয়াল করতে হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, কমিউনিটি সংক্রমণ হলো ভাইরাসটির তৃতীয় পর্যায়ের সংক্রমণ। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার বক্তব্য অনুসারে কমিউনিটি সংক্রমণ হলে শৃঙ্খলের মাধ্যমে নিশ্চিত রোগীদের সংখ্যা নিরূপণ করা যায় না। নমুনা পরীক্ষায় নিশ্চিত রোগীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। সহজ ভাষায়, ভাইরাস এখন কমিউনিটির মধ্যে ছড়াবে। যাদের সংক্রমিত স্থানে ভ্রমণের ইতিহাস নেই বা সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শেও আসেননি, তারাও সংক্রমিত হতে থাকবেন। এ ধরনের সংক্রমণ যখন শুরু হবে, তখন সম্পূর্ণ কঠিন লকডাউনের প্রয়োজন হবে, কারণ এই সময়ে প্রতিটি মানুষই সংক্রমণ ছড়াতে পারেন। যার জন্য এই ভাইরাস মোকাবিলার কাজ আরো কঠিন হয়ে পড়বে।

কোরিয়া মডেলে নমুনা সংগ্রহের জন্য ৪৪টি বুথ : দক্ষিণ কোরিয়ার মডেল অনুসরণ করে নমুনা সংগ্রহ করার জন্য সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে বুথ স্থাপন করা হচ্ছে। গতকাল ঢাকায় আটটি, নারায়ণগঞ্জে আটটিসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মোট ৪৪টি বুথ স্থাপন করা হয়েছে। যাদের করোনা ভাইরাসের নানা উপসর্গ রয়েছে, তারা এসে এসব বুথে পরীক্ষার জন্য নমুনা দিতে পারবেন। স্বাস্থ্য বিধি মেনে কর্মকর্তারা এখানে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠাবেন। পর্যায়ক্রমে সারাদেশে ৩২০টি বুথ স্থাপন করা হবে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সন্দেহভাজন করোনা রোগীদের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহের জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলের একটি হাসপাতাল এইচ প্লাস ইয়াংজিতে, সর্বপ্রথম বুথের মাধ্যমে এধরনের পরীক্ষা সুবিধা চালু হয়। দেশটিতে সফল ফলাফলের পর ভারতের কেরালা রাজ্যেও চালু করা হয় পদ্ধতিটি। এবার বেসরকারি সংস্থা জেকোজি হেলথ কেয়ারের সহায়তায় আমাদের দেশেও চালু হয়েছে করোনার নমুনা সংগ্রহের এ পদ্ধতি। কাচে ঘেরা কেবিনের মতো দেখতে বুথটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে, স্বাস্থ্যকর্মীরা যেখানে অবস্থান করেন সেখানকার পরিবেশ সবসময় জীবাণুমুক্ত থাকে। সন্দেহভাজন যে কেউ নির্ধারিত বুথে গিয়ে পরীক্ষা করতে পারবেন। বার বার হটলাইনে ফোন করতে হবে না বলে এ পদ্ধতি জনগণের ভোগান্তি কমাবে। এ পদ্ধতিতে স্কুল ও কলেজ প্রাঙ্গণে নমুনা সংগ্রহের বুথ স্থাপন করা হবে। যা অনেক মানুষের মধ্য থেকে স্বাস্থ্যকর্মী ও হাসপাতালকে সুরক্ষিত রাখবে। নমুনা সংগ্রহের পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিজস্ব পরীক্ষাগারে এসব নমুনা পরীক্ষা করা হবে।

এছাড়া করোনা ভাইরাস চিকিৎসার জন্য দেশে নতুন হাসপাতাল যোগ হয়েছে। প্রত্যেকটি জেলায় মেডিকেল কলেজ ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজকে করোনা ভাইরাস চিকিৎসার অনুমতি দিচ্ছে সরকার। এছাড়া ঢাকায় বেশ কয়েকটি হাসপাতাল প্রস্তুত করার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, পঙ্গু হাসপাতালের পুরাতন ভবন, ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটের ৩০০ শয্যা রয়েছে। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ভবন তৈরি করা হচ্ছে করোনা ভাইরাসের চিকিৎসার জন্য। বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে শাহাবুদ্দিন হাসপাতাল ও আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল যোগ হচ্ছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, নতুন তিনটি কোয়ারেন্টাইন সেন্টার তৈরি হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টার, নর্থ সিটি করপোরেশনের পুরনো ভবন ও দিয়াবাড়ীতে পুরনো ভবন।

সর্বোচ্চ পরীক্ষা : দেশে করোনা ভাইরাসে গত রবিবার থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৫৭০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। সর্বোচ্চ সংখ্যক এই পরীক্ষায় ১৮২ জনের শরীরে করোনার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ আগের দিনের চেয়ে ৩৮ শতাংশ বেশি এবং ১৭ শতাংশ বেশি পরীক্ষা করা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় হোম কোয়ারেন্টাইনে গেছেন আরো ৫ হাজার ৬৮৪ জন। এখন পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন ৮৫ হাজার ৪৯৮ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৮৪ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২ হাজার ১৮৯ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টাইন মুক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৪৫ জন এবং এখন পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইন মুক্ত হয়েছেন ৬৩ হাজার ২৭৬ জন। আর আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৮৪ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ২৯৯ জন। আর গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে মুক্ত হয়েছেন ১৭ জন।

দেশে করোনায় আক্রান্ত ৪১ চিকিৎসক : দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ছে। আক্রান্ত হয়েছেন ৪১ জন চিকিৎসকও। এর মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশনের (বিডিএফ) প্রধান সমন্বয়ক নিরূপম দাশ এ তথ্য জানিয়ে বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছে আটজন চিকিৎসক। গত রবিবার পর্যন্ত ৩৩ জন চিকিৎসক এ রোগে আক্রান্ত ছিলেন। গতকাল একজন চিকিৎসক মারা যান। তবে তিনি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন রাজধানী ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের চিকিৎসকরা। এ ব্যাপারে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সুলতানা শাহানা বানু বলেন, চিকিৎসকদের আক্রান্তের খবর আমাদের ভাবিয়ে তুলছে। চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিতে আমাদের আরো সচেতন হতে হবে। না হয় আমরা ভয়াবহ স্বাস্থ্য সংকটে পড়ে যাব। পিপিই যতটা গুরুত্বপূর্ণ তার সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার ও সুরক্ষিত আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করাটাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। দেশের এ স্বাস্থ্য সংকট মোকাবিলায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। তবে কোভিড-১৯ রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে দেশের অনেক চিকিৎসক ও নার্স এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। তাদের ‘কোভিড যোদ্ধা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

করোনায় পিছিয়ে যাচ্ছে এমবিবিএস প্রফেশনাল পরীক্ষা : করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে পিছিয়ে যাচ্ছে এমবিবিএস প্রফেশনাল পরীক্ষা। কর্তৃপক্ষ বলছে, এক্ষেত্রে দীর্ঘ ছুটির কারণে শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতির কিছুটা সমস্যা হবে। তাই টেকনিক্যাল বাড়িয়ে থিউরিটিক্যাল কমিয়ে দিয়ে কোর্সটা শেষ করার চেষ্টা করা হবে। তবে সব কিছুই নির্ভর করবে করোনা পরিস্থিতির ওপর। রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মো. নওজেশ আলী বলেন, রোজা পর্যন্ত এমবিবিএস প্রফেশনাল পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। রোজার পরে কারোনা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App