×

জাতীয়

রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলো করোনা সংক্রমণের হটস্পট

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২০, ০৯:৩৭ এএম

রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলো করোনা সংক্রমণের হটস্পট

করোনা ভাইরাসের ভয়াবহ প্রকোপের মধ্যেও ‘সামাজিক দূরত্ব’ বজায় রাখার নির্দেশনা মানছেন না কেউই। সংক্রমণের তীব্র ঝুঁকি নিয়েই চলছে বিকিকিনি। ছবিটি ১২ এপ্রিল কেরানীগঞ্জের আগানগর থেকে তোলা -ভোরের কাগজ

সামাজিক দূরত্ব রাখার বালাই নেই

রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে করোনা সতর্কতার বালাই নেই। পুলিশের নির্দেশনার তোয়াক্কা করছে না কেউই। প্রতিদিন সকালে কাঁচাবাজারগুলোতে দেখা যায় শত শত মানুষের উপচেপড়া ভিড়। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বাজার করার জন্য নির্দিষ্ট দূরত্বে গোলদাগ কেটে রাখলেও অধিকাংশ মানুষ সেটা না মেনে একজন আরেকজনের ঘাড়ের ওপর নিঃশ্বাস ফেলে দরদাম করছেন। সামাজিক দূরত্ব মানছেন না কেউই। গা ঘেঁষাঘেষি করে বাজার করলেও মুখে মাস্ক নেই বেশির ভাগেরই। জনসাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাজারগুলোতে জনসমাগম কমাতে না পারলে জ্যামিতিক হারে বাড়তে থাকবে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। এদিকে আইন না মানার এই বিষয়টি নজরে এনেছে সরকার। কয়েকবার দিয়েছে হুঁশিয়ারিও। কিন্তু কাজে আসেনি। গতকাল রবিবার বেলা ১১টা। রাজধানীর মালিবাগ রেললাইন সংলগ্ন মাছ ও কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, সহস্র মানুষের ভিড়। একজন আরেকজনের ঘাড়ের ওপর নিঃশ্বাস ফেলে কেনাকাটায় ব্যস্ত। দোকানে দোকানে মানুষের জটলা। অনেকে ভিড় ঠেলে দরদাম করছেন। সামাজিক দূরত্বের লেশমাত্র নেই। বিক্রেতা ও ক্রেতাদের অধিকাংশের মুখে মাস্ক নেই। ঘটনাস্থলে উপস্থিত শাজাহানপুর থানার পুলিশ কর্মকর্তা শফিক আহমেদ জানান, শত চেষ্টা করেও সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা যাচ্ছে না। অনেকেই বাজার করার নামে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তিনি বলেন, প্রতিদিন একটি দোকান বন্ধ করে পাশের দোকানটি খোলা রাখার পদ্ধতি নিলে জনসমাগম কিছুটা কমবে। এর আগে হাতিরপুল বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সেনাবাহিনীর একটি গাড়ি থেকে বাজারের ক্রেতাদের উদ্দেশ্য করে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বাজার শেষ করে দ্রুত ঘরে ফিরে যেতে অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু এরপরও কাঁচাবাজার, ফলের দোকান, মাছ ও মাংসের দোকানে ক্রেতাদের গা ঘেঁষে বাজার করতে দেখা যায়। দুপুর ১২টায় কাওরানবাজারের সামনে রিকশা প্রাইভেটকার, ভ্যান ও মোটরসাইকেলের জট। রাস্তায় ভাসমান ভ্যানওয়ালা উচ্চৈঃস্বরে- ‘... এই মিষ্টি তরমুজ বড়টা ২৫ আর ছোটটা ২০ টাকা’ বলে হেঁকে চলেছেন। রাস্তার পাশেই মাটিতে বিছিয়ে তরমুজ বিক্রি করছেন আরেক বিক্রেতা। প্রচণ্ড রোদে টপটপ করে ঘাম ঝরে পড়ছে তরমুজের ওপর। ওই তরমুজ দরদামে ব্যস্ত কয়েকজন শ্রমজীবী মানুষ। একটু ভেতরে কাঁচাবাজারে ছিল মানুষের উপচেপড়া ভিড়। এখানেও গা ঘেঁষাঘেষি করে লোকজন কেনাকাটা করছেন। রাজধানীর শান্তিনগর বাজারে গিয়েও দেখা যায় একই চিত্র। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম কোভিড ১৯ রোগী শনাক্ত হয়। গত এক মাস দুই দিনে সারাদেশে মোট ৪৮২ জন রোগী শনাক্ত হয়। এর মধ্যে ২৫৪ জনই ঢাকার বাসিন্দা। সেই হিসেবে রাজধানী ঢাকা এমনিতেই করোনা সংক্রমণের দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বারবার জনসমাগম এড়িয়ে চলতে নিষেধ করলেও নগরবাসী তা মানছে না। এক্ষেত্রে রাজধানীর বাজারগুলো করোনা ভাইরাস সংক্রমণের হটস্পট হয়ে উঠেছে। এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) মো. সোহেল রানা বলেন, মানুষের জীবনকে সচল রাখার জন্য নিত্যপণ্যের অবাধ সরবরাহ রেখেছে সরকার। সরকার প্রদত্ত এই সুবিধার জন্য সাধারণ মানুষ দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে বাজার করতে গিয়ে অনিয়ন্ত্রিতভাবে লোক সমাগম ঘটছে এবং সে ক্ষেত্রে করোনা সংক্রমণ ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। তাই কাঁচাবাজারগুলোতে একমুখী প্রবেশ চালু করা শুরু করেছে পুলিশ। আমরা পরামর্শ দিচ্ছি সব কাঁচাবাজারে যেন একমুখী প্রবেশ মানা হয়। সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করছি বাজারে ঢুকে যতটুকু সম্ভব দূরত্ব বজায় রাখার জন্য।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App