×

জাতীয়

করোনায় চাপা ডেঙ্গুর শঙ্কা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ মার্চ ২০২০, ১০:০৮ এএম

করোনায় চাপা ডেঙ্গুর শঙ্কা

প্রতীকী ছবি

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে ডেঙ্গু নিয়ে আলোচনা তেমন নেই। মশক নিধন কার্যক্রমও খুব একটা দৃশ্যমান নয়। তবে সিটি করপোরেশন বলছে, পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে করোনা ও ডেঙ্গু প্রতিরোধ কার্যক্রম চলছে সমানতালে।

এডিস মশার মৌসুমেই দেশে ঢুকে পড়েছে করোনা। যদিও বছরের শুরু থেকেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, গত বছর এ সময়ে যত রোগী ছিল এ বছর তা বেড়েছে প্রায় চারগুণ। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২১ মার্চ পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২৬৬ জন। গত বছরের প্রথম তিন মাসে এ সংখ্যা ছিল মাত্র ৭৩ জন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিষয়টি উদ্বেগের। এখনই মশক নিধনে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া না হলে ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ নেবে।

এদিকে ডেঙ্গু নিয়ে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মনোযোগ কমে গেছে। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে শহরের বিভিন্ন জায়গা জীবাণুমুক্ত করছেন করপোরেশনের কর্মীরা। মশার ওষুধ ছিটানো ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে ধীরগতি দেখা যাচ্ছে। কাউন্সিলররা জানান, সিটি কপোরেশন থেকে তাদের কাছে করোনা মোকাবিলায় সক্রিয় থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তাই মশক নিধন কার্যক্রমে ঢিলেঢালা ভাব এসেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে বছরব্যাপী মশক নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা তৈরি করে। ৫ মাস মন্ত্রণালয়ে পড়ে থাকার পরে মার্চ মাসের প্রথম দিকে এর কার্যক্রম শুরুর অনুমোদন পায়। এর পরপরই কিউলেক্স ও এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে গত ৭ মার্চ থেকে ১১টি তদারকি দল দিয়ে মশক নিধন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছে। এসব দল পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে পর্যবেক্ষণ করছেন। তবে বেশিরভাগ এলাকায় দেখা গেছে, করোনা আতঙ্কের কারণে মশক নিধনকর্মীরা ঠিকমতো উপস্থিত থাকছেন না। যে পরিমাণ ওষুধ দেয়ার কথা তা ঠিকমতো ছিটানো হচ্ছে না।

করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে বলে ভোরের কাগজকে জানান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোমিনুর রহমান। তিনি বলেন, করোনার কারণে ডেঙ্গু প্রতিরোধ কার্যক্রম যেন চাপা না পড়ে এ জন্য আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। করপোরেশনের পক্ষে থেকে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে সচেতন করার চেষ্টা করা হয়েছে।

মোমিনুর রহমান বলেন, আগে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবাদানের সঙ্গে জড়িতদের দিয়ে ডেঙ্গু বিষয়ে সচেতনতামূলক কাজ করানো হতো। এখন তাদের করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় যুক্ত করা হচ্ছে। এরপরও পরিচ্ছন্ন কর্মীরা ডেঙ্গু প্রতিরোধে কাজ করছেন। করোনা থেকে নিরাপদ থাকতে তাদের মাস্ক, পিপিইসহ সব ধরনের মেডিকেল সাপোর্ট দেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

বছরব্যাপী ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা কম জানিয়ে তিনি বলেন, গত বছরের অক্টোবর থেকেই জমাটবদ্ধ পানি অপসারণে কাজ করা হয়েছে। তবে বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন স্থানগুলোতে পানি আটকে থেকে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে বাড়ে। সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টরা যদি নিজ উদ্যোগে জমাটবদ্ধ পানি পরিষ্কার করেন তাহলে ঝুঁকির সম্ভাবনা কমে আসবে।

এ ছাড়াও গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কর্মপরিকল্পনা নিয়ে সভা হয়। এতে মশক নিধন ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের বছরব্যাপী কর্মপরিকল্পনা জমা দেয় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন।

দুই সিটি করপোরেশনের কর্মপরিকল্পনা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ডেঙ্গুর প্রাক মৌসুম হিসেবে মার্চ মাসে যেসব কর্মসূচি পালন করার কথা, সেগুলোর অধিকাংশই করা হয়নি। যেমন প্রতিটি ওয়ার্ডে স্থানীয় সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, শিক্ষক, ইমামদের নিয়ে পরামর্শ ও অবহিতকরণ সভা করার কথা ছিল। বলা হয়েছিল, কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে প্রতি সপ্তাহে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরামর্শ সভার আয়োজন করা হবে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর তথ্য সংগ্রহের জন্য সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের প্রতিনিধিদের নিয়ে সভা করা হবে। মার্চ মাসে এ রকম কোনো সভা হয়নি।

তবে করোনা ভাইরাস ও মশা নিয়ন্ত্রণে সমানভাবে কাজ করা হচ্ছে বলে দাবি করেন ডিএনসিসির প্যানেল মেয়র জামাল মোস্তফা। তিনি বলেন, এখন সময়টা ক্রিটিক্যাল (জটিল)। সবাই ভয়ে আছে। তবু সিটি করপোরেশনের কর্মীরা মাঠে আছেন।

ডেঙ্গু মৌসুম শুরুর আগেই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দেশের সিটি করপোরেশনগুলোকে নিয়ে একাধিক প্রস্তুতিমূলক সভা হয়েছে বলে জানান স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, মশার ওষুধ সংগ্রহ, মশার ঘনত্ব নিয়ে জরিপ চালানোসহ বিভিন্ন কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মশা নিধন ও জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে।

মশাবিষয়ক গবেষক অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, মশক নিয়ন্ত্রণে যারা কাজ করেন, তারাও যেন করোনামুখী না হয়ে যান, সেদিকে দুই সিটি করপোরেশন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মনোযোগ দিতে হবে। তা না হলে কিছুদিনের মধ্যে করোনার মতো ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টারের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার বলছেন, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আমরা সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ করে যাচ্ছি, তবে এখন জনগণকেও আমাদের কাজে সাহায্য করতে হবে। বাসার বাইরে যেগুলো থাকবে সেগুলো আমরা করলেও বাসার ভেতরে যা থাকবে তা নিজেদের পরিষ্কার করতে হবে। তাহলে মশার উপদ্রব অনেকটাই কমে যাবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App