×

জাতীয়

মন্ত্রণালয়ের ঢিলেমিতে আটকে আছে এমপিওভুক্তির তালিকা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২০, ১১:১৪ এএম

মন্ত্রণালয়ের ঢিলেমিতে আটকে আছে এমপিওভুক্তির তালিকা

শিক্ষা মন্ত্রণালয়

ছয় মাসেও নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির তালিকা ঠিকঠাক করতে পারেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কবে নাগাদ এমপিওভুক্তির শুদ্ধ তালিকা প্রকাশ করা হবে? এ প্রশ্নেরও স্পষ্ট কোনো উত্তর নেই মন্ত্রণালয়ের। এ কারণে নতুন করে বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদানের অনুমোদন ও একাডেমিক স্বীকৃতি আটকে আছে। অথচ আরো দুমাস আগে হয়ে যাওয়া এক সভায় কোন কোন প্রতিষ্ঠান পাঠদান ও একাডেমিক স্বীকৃতি পাবে তা চূড়ান্ত করে দেয় সংশ্লিষ্ট কমিটি।

একাডেমিক স্বীকৃতি পাওয়ার পর একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নতুন এমপিওর জন্য আবেদন করতে পারে। মন্ত্রণালয়ের বেসরকারি মাধ্যমিক শাখা বলছে, এমপিওর শুদ্ধ তালিকা প্রকাশের আগে পাঠদান ও একাডেমিক স্বীকৃতির চিঠি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে দেয়া হবে না। এর ফলে বহু প্রতিষ্ঠানে ভর্তিসহ অন্যান্য কাজ আটকে আছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এমন ঢিলেমির কারণে দেশজুড়ে শিক্ষক-কর্মচারীর মাঝে বিরাজ করছে চরম হতাশা।

প্রায় ১০ বছর পর গত বছরের ২৩ অক্টোবর দুই হাজার ৭৩৬টি নয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করে আদেশ জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তালিকা প্রকাশের পরই দেখা যায়, নীতিমালার দোহাই দিয়ে সরকারি হওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি, যুদ্ধাপরাধীর নামে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। ট্রাস্ট পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ভুঁইফোঁড় প্রতিষ্ঠানও এমপিওভুক্ত হয়েছে। এ নিয়ে চারদিকে তীব্র বিতর্ক হলে গত বছরের নভেম্বরে শিক্ষামন্ত্রী নতুন

এমপিও হওয়া প্রতিষ্ঠানকে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য দুটি কমিটি করেন। কমিটি যাচাই-বাছাই শেষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠানোর পর দেড়শ দিন পরও সেটি আলোর মুখ দেখেনি।

সূত্র জানায়, কমিটি তাদের প্রতিবেদনে এমপিওভুক্ত হওয়া প্রতিষ্ঠানের কি কি তথ্য রয়েছে কেবল সেসব বিষয় উল্লেখ করেছে। স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধীদের নামে থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ভাড়াবাড়িতে পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিষয়ে কমিটি বলছে, এ ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন শিক্ষামন্ত্রী।

জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাদ্রাসা ও কারিগরি বিভাগের সচিব মুনশী শাহাবুদ্দিন আহমেদ ভোরের কাগজকে বলেন, শিগগিরই যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শেষে নতুন আদেশ জারি করা হবে। কতদিন লাগতে পারে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হয়ে যাবে। একটু অপেক্ষা করুন। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোমিনুর রশিদ আমিন ভোরের কাগজকে বলেন, সব কাজ শেষ। এখন পুরো নথি মন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। আশা রাখি, কয়েকদিনের মধ্যেই এমপিওভুক্তির কাজ শেষ হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এমপিওভুক্তির আগের তালিকায় সরকারি যেসব প্রতিষ্ঠান ঢুকেছিল নতুন তালিকায় সেগুলো বাদ যাচ্ছে। ট্রাস্ট পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো আবেদন করে বলেছে, তাদের এমপিওভুক্তির দরকার নেই। নতুন তালিকা থেকে সেগুলোও বাদ যেতে পারে। ভুঁইফোঁড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নতুন এমপিওর তালিকায় থাকছে না। তবে স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীর নামে যেসব স্কুল এমপিওভুক্ত হয়েছে তাদের ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিটির একজন সদস্য বলেন, এমপিওভুক্তির আগের তালিকায় ঢুকে পড়া নানা অসঙ্গতিতে ভরপুর বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চিহ্নিত হয়েছে। তবে কীভাবে, কোন পদ্ধতিতে, কার ভুলে এসব প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত হয়েছে তা সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত হয়নি। তার বদলে মোটামুটি ভুল বা যুদ্ধাপরাধীদের নামে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান এবং সরকারিকরণ ও ইতোমধ্যে এমপিওভুক্ত হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পর্কে একটা সারাংশ তৈরি করা হয়েছে। এসব ভুল প্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরিতে সহায়তা করেছেন জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা। এই সারাংশটি এখন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির কাছে দেয়া হবে।

জানা গেছে, নীতিমালা অনুসারে প্রথম দফায় গত বছরের ২৩ অক্টোবর ২ হাজার ৭৩০ ও ২য় দফায় গত ১২ নভেম্বর আরো ৬টি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির আদেশ জারি করা হয়। তবে, আদেশে শর্ত হিসেবে বলা হয়েছিল, তথ্যের সঠিকতা সাপেক্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তি আদেশ কার্যকর হবে। আর কোনো প্রতিষ্ঠানের কোনো তথ্য ভুল বা অসত্য হলে তথ্যদাতাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অন্যদিকে গত ২৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, এমপিওভুক্তির জন্য যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত হয়েছে এবং তার মধ্যে যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নামের সঙ্গে বিতর্কিত কিংবা স্বাধীনতাবিরোধী কোনো ব্যক্তির নামের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে যে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু এই বক্তব্যের দুমাস পার হলেও এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দীর্ঘ ১০ বছর পর বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হলেও বিএনপি-জামায়াতপন্থি অসাধু কিছু কর্মকর্তার ভুলের খেসারত দিচ্ছে সরকার। জনপ্রতিনিধিদের মতামতকে উপেক্ষা করে শিক্ষা অধিদপ্তর ও শিক্ষা বোর্ডকে বাইরে রেখে এমপিওর কাজ করতে গিয়েই বেঁধেছে তালগোল। যোগ্য প্রতিষ্ঠান বাদ দিয়ে অযোগ্য ভুঁইফোঁড় প্রতিষ্ঠানের এমপিও, যুদ্ধাপরাধীর নামে প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হওয়ায় হতাশ হয়েছেন সাংসদরাই। পরিস্থিতি সামাল দিতে যে গ্যাঁড়াকলে পড়েছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা বোর্ড ও শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা সেই পরিস্থিতি থেকে আজো বেরিয়ে আসতে পারছেন না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App