×

জাতীয়

প্রস্তুতিতে ফাঁকফোকর

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ মার্চ ২০২০, ১০:৩৪ এএম

প্রস্তুতিতে ফাঁকফোকর

 চীন ছাড়িয়ে করোনা ভাইরাস ভারতসহ ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের প্রায় ৮৫টি দেশে। বাংলাদেশেও যে কোনো সময় থাবা বসাতে পারে এই ভাইরাস। প্রাণঘাতী এই ভাইরাস মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। তবে এসব প্রস্তুতির মাঝেও রয়ে গেছে কিছু ফাঁকফোকর। বিমানবন্দরে বিদেশ ফেরত যাত্রীদের স্ক্রিনিং করার জন্য তিনটি মেশিনের মধ্যে দুটি স্ক্যানারই নষ্ট। সরকারিভাবে না চললেও বেসরকারিভাবে এখনো চলছে বাংলাদেশ-চীন ফ্লাইট। রাজধানীর অভিজাত এলাকা ও বিভাগীয় শহরের বড় বড় শপিং মল, বিপণিবিতান, আবাসিক হোটেল, যেখানে জনসমাগম ঘটে, সেখানে এ বিষয়ে সতর্কতামূলক কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। আর চিকিৎসা ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে রাজধানী কেন্দ্রিক।

বিদেশ গমনাগমনের দিক থেকেও উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা যে ২৫টি দেশের নাম উল্লেখ করেছে, সেখানেও রয়েছে বাংলাদেশের নাম। ইতোমধ্যে এই ভাইরাস নিয়ে দেশজুড়ে গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। কেউ কেউ বলছেন, দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মিলেছে। দেশে করোনা মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিয়েও অসন্তোষ রয়েছে জনমনে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে দেশে এ পর্যন্ত করোনা ভাইরাস আক্রান্ত কারো সন্ধান মেলেনি। গুজবে কান না দিয়ে বারবারই সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। দাবি করা হচ্ছে করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

এদিকে করোনা ভাইরাসের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানাতে প্রতিদিনই সংবাদ সম্মেলন করছে রোগতত্ত¡, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। কিন্তু তবুও শঙ্কা কাটছে না। এই উদ্বেগ থেকেই গতকাল বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট করোনা প্রতিরোধে সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে তা জানতে চেয়েছে। বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে আগামী সোমবারের মধ্যে এ সংক্রান্ত তথ্য উপস্থাপনের নির্দেশ দেয়। পরে আদালত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে তিনটি মৌখিক নির্দেশনা দেয়।

এর আগে বুধবার এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন, বাংলাদেশের প্রায় সবগুলো প্রতিবেশী দেশে করোনা ভাইরাস আক্রান্তের তথ্য পাওয়া গেছে। করোনা আক্রান্ত ভারত এবং মধ্যপ্রাচ্য থেকে এ দেশে মানুষের অবাধ যাতায়াত রয়েছে। এসব কারণে বাংলাদেশও করোনার আক্রমণ-প্রাদুর্ভাবের ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়া করোনা প্রতিরোধে এবং চিহ্নিতকরণে নেয়া পদক্ষেপও যথেষ্ট ও সন্তোষজনক নয়। সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকেও যেভাবেই হোক করোনা প্রতিরোধ করতে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। এদিকে

কুয়েতসহ কয়েকটি দেশে প্রবেশের ক্ষেত্রে করোনামুক্ত সনদের শর্ত দিলেও, বাংলাদেশে এ ধরনের সনদ দেয়ার কোনো নির্ধারিত প্রতিষ্ঠান নেই। ফলে বিপাকে পড়েছেন ছুটি শেষে কাজে ফিরতে যেতে চাওয়া শতশত প্রবাসী। গতকাল সন্ধ্যায় কুয়েত দূতাবাস এক নির্দেশনায় জানায়, তাদের অনুমোদিত ঢাকায় ২৬ এবং চট্টগ্রামে ১২, মোট ৩৮টি হাসপাতাল থেকে করোনা মুক্তির এ সনদ নিতে পারবেন প্রবাসী কর্মীরা।

এই ভাইরাস মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতি সম্পর্কে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ জানান, জাতীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে তিন স্তরে আন্তঃমন্ত্রণালয়, সমন্বয় ও টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশের কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া করোনার উপসর্গ রয়েছে এমন রোগীদের কোয়ারেন্টাইনে রাখার জন্য হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে আইসোলেশন ইউনিট প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সারাদেশে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ওই পর্যায়ে করোনায় আক্রান্ত রোগীর কীভাবে চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা দেয়া হবে সে বিষয়ে নির্দেশান দেয়া হয়েছে। করোনার কোনো ধরনের লক্ষণ দেখা গিলে হট লাইনে (০১৯২৭ ৭১১ ৭৮৪, ০১৯২৭ ৭১১ ৭৮৫, ০১৯৩৭ ০০০ ০১১, ০১৯৩৭ ১১০ ০১১) যোগাযোগ করার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। করোনা শনাক্তের জন্য নমুনা সংগ্রহ করার পর ফলাফলের জন্য ৪৮ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। আর কয়েকদিন পরই র‌্যাপিড টেস্টের সব ধরনের ফ্যাসিলিটিজ দেশে চলে আসবে। তখন ২৪ ঘণ্টাতেই নমুনা পরীক্ষার ফল জানা যাবে। ওষুধ, কিট, মাস্ক, গাউনের কোনো সঙ্কট নেই বলে দাবি আইইডিসিআর কর্তৃপক্ষের।

করোনা মোকাবিলায় সারাদেশে কী ধরনের প্রস্তুতি আছে এমন প্রশ্নের উত্তরে বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ভারতে যেহেতু করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে তাই আমাদের আরো বেশি সতর্ক হতে হবে। বিমান, নৌ ও স্থলবন্দরগুলোতে স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা আরো জোরদার করতে হবে। সব জায়গায় চিকিৎসাসেবা দেয়া যাবে না। মানুষ ভয়ও পাবে। ডাক্তার-নার্সরাও ভয় পেতে পারেন। সেজন্য ঢাকাতেই করোনার চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ব্যক্তিগত সুরক্ষা দিয়ে চিকিৎসক টিম গঠন করা হচ্ছে।

কেউ আক্রান্ত হলে কীভাবে চিকিৎসা চলবে এমন প্রশ্নের উত্তরে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মিরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, করোনা ভাইরাসের আলাদা কোনো চিকিৎসা নেই। সাধারণ জ্বরের চিকিৎসাই করা হয়ে থাকে। তবে এক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তিকে আলাদা রাখা বেশি জরুরি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি আছি। তবে বিশাল কর্মযজ্ঞেও কিছুটা ফাঁকফোকর থাকে। তবে সরকারের উদ্যোগের পাশাপাশি ব্যক্তিগত সচেতনতাও এক্ষেত্রে জরুরি। কেননা, পরিবারের পরিজনরাও আক্রান্ত ব্যক্তির মাধ্যমে আক্রান্ত হতে পারেন।

নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে আইইডিসিআর পরিচালক গতকাল বলেন, মংলা বন্দরে একটি জাহাজে বেশ কয়েকজন যাত্রী আছেন, তাদের তিনজনের মধ্যে লক্ষণ দেখা গেছে। তবে সেটি এখনো বন্দরে এসে পৌঁছায়নি। তাদের গভীর সমুদ্রে রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যেই তাদের নমুনা সংগ্রহ করার প্রক্রিয়া নেয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত ১০৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে কোনো নমুনাতেই করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App