×

জাতীয়

প্রচণ্ড শীত উপেক্ষা করে মুসল্লিদের ঢল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২০, ১১:৩৮ এএম

প্রচণ্ড শীত উপেক্ষা করে মুসল্লিদের ঢল

ইজতেমা মাঠে দেশ-বিদেশের মুসল্লিরা আসতে শুরু করেছেন। ছবি: টঙ্গী ইজতেমা মাঠ, ভোরের কাগজ।

ঢাকার অদূরে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে আগামীকাল শুরু হচ্ছে বিশ্ব মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমাবেশ। তিনদিনের এই ইজতেমার আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে রবিবার। এ উপলক্ষে দেশবিদেশ থেকে দলে দলে মুসল্লিরা আসছেন। বাস, ট্রাক, পিকআপ ও ট্রেনসহ বিভিন্ন যানবাহনে চড়ে, কনকনে শীত উপেক্ষা করে লাখো মুসল্লির ঢল এখন তুরাগ তীরের বিশ্ব ইজতেমা ময়দান। বিভিন্ন বয়েসী মুসল্লি ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মিলনস্থল এখন এটি। এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে ইজতেমা ময়দানে বিদেশি মুসল্লি ছাড়াও দেশের ৬৪ জেলার মুসল্লিদের জেলাওয়ারি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। যাদের প্রতিটিকে খিত্তা বলা হয়। এবার পুরো ময়দানকে ৮৭ খিত্তায় বিভক্ত করে মুসল্লিদের অবস্থান নিশ্চিত করেছেন আয়োজকরা।

বিশ্ব ইজতেমার মুরুব্বি প্রকৌশলী মেজবাহ উদ্দিন বলেন, এ পর্বে দেশীয় মুসল্লিদের জন্য পুরো ইজতেমা ময়দানকে ৮৭টি খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। এসব খিত্তায় সারাদেশের তাবলিগী মুসল্লিরা অবস্থান নেবেন। কোন জেলার মুসল্লি কোন খিত্তায় অবস্থান নেবেন তা নির্দিষ্ট করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ১নং খিত্তায় (টঙ্গী বাদে) গাজীপুর জেলা, ২নং খিত্তায় টঙ্গী-১, ৩নং খিত্তায় টঙ্গী-২, ৪নং খিত্তায় টঙ্গী-৩, ৫নং খিত্তায় মিরপুর-১, ৬নং খিত্তায় মিরপুর-২, ৭নং খিত্তায় সাভার-১, ৮নং খিত্তায় সাভার-২, ৯নং খিত্তায় মোহাম্মদপুর, ১০নং খিত্তায় কাকরাইল-৩, ১১নং খিত্তায় কেরানীগঞ্জ-১, ১২নং খিত্তায় কেরানীগঞ্জ-২, ১৩নং খিত্তায় কাকরাইল-১, ১৪নং খিত্তায় কাকরাইল-২, ১৫নং খিত্তায় ডেমরা, ১৬নং খিত্তায় কাকরাইল-৪, ১৭নং খিত্তায় কাকরাইল-৫, ১৮নং খিত্তায় কাকরাইল-৬, ১৯নং খিত্তায় কাকরাইল-৭, ২০নং খিত্তায় রাজশাহী, ২১ নং খিত্তায় নওগাঁ,২২নং খিত্তায় নাটোর, ২৩নং খিত্তায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ২৪নং খিত্তায় যাত্রাবাড়ী-২, ২৫নং খিত্তায় যাত্রাবাড়ী-১, ২৬নং খিত্তায় সিরাজগঞ্জ, ২৭নং খিত্তায় ঢাকার দোহার, ২৮নং খিত্তায় ঢাকার নবাবগঞ্জ, ২৯নং খিত্তায় মানিকগঞ্জ, ৩০নং খিত্তায় টাঙ্গাইল, ৩১নং খিত্তায় নড়াইল, ৩২নং খিত্তায় ঢাকার ধামরাই, ৩৩নং খিত্তায় রংপুর, ৩৪নং খিত্তায় নীলফামারী, ৩৫নং খিত্তায় কুড়িগ্রাম, ৩৬নং খিত্তায় লালমনিরহাট, ৩৭নং খিত্তায় গাইবান্ধা, ৩৮নং খিত্তায় মুন্সীগঞ্জ, ৩৯নং খিত্তায় মাগুরা, ৪০নং খিত্তায় ঝিনাইদহ, ৪১নং খিত্তায় বগুড়া, ৪২নং খিত্তায় নারায়ণগঞ্জ, ৪৩নং খিত্তায় ফরিদপুর, ৪৪নং খিত্তায়

যশোর, ৪৫নং খিত্তায় সাতক্ষীরা, ৪৬নং খিত্তায় বাগেরহাট, ৪৭নং খিত্তায় নরসিংদী, ৪৮নং খিত্তায় ভোলা, ৪৯নং খিত্তায় জামালপুর, ৫০নং খিত্তায় ময়মনসিংহ-১, ৫১নং খিত্তায় ময়মনসিংহ-২, ৫২নং খিত্তায় মেহেরপুর, ৫৩নং খিত্তায় চুয়াডাঙ্গা, ৫৪নং খিত্তায় নেত্রকোণা, ৫৫নং খিত্তায় কিশোরগঞ্জ, ৫৬নং খিত্তায় গোপালগঞ্জ, ৫৭নং খিত্তায় বরিশাল, ৫৮নং খিত্তায় বাজবাড়ি, ৫৯নং খিত্তায় শেরপুর, ৬০নং খিত্তায় শরীয়তপুর, ৬১নং খিত্তায় মাদারীপুর, ৬২নং খিত্তায় সিলেট, ৬৩নং খিত্তায় কক্সবাজার, ৬৪নং খিত্তায় রাঙ্গামাটি, ৬৫নং খিত্তায় খাগড়াছড়ি, ৬৬নং খিত্তায় বান্দরবন, ৬৭নং খিত্তায় ফেনী, ৬৮নং খিত্তায় নোয়াখালী, ৬৯নং খিত্তায় লক্ষ্মীপুর, ৭০নং খিত্তায় চাঁদপুর, ৭১নং খিত্তায় বি.বাড়িয়া, ৭২নং খিত্তায় খুলনা, ৭৩নং খিত্তায় পটুয়াখালী, ৭৪নং খিত্তায় বরগুনা, ৭৫নং খিত্তায় চট্টগ্রাম, ৭৬নং খিত্তায় কুমিল্লা, ৭৭নং খিত্তায় পিরোজপুর, ৭৮নং খিত্তায় ঝালকাঠি, ৭৯নং খিত্তায় সুনামগঞ্জ, ৮০নং খিত্তায় হবিগঞ্জ, ৮১নং খিত্তায় মৌলভীবাজার, ৮২নং খিত্তায় পাবনা, ৮৩নং খিত্তায় ঠাকুরগাঁও, ৮৪নং খিত্তায় পঞ্চগড়, ৮৫নং খিত্তায় দিনাজপুর, ৮৬নং খিত্তায় জয়পুরহাট এবং ৮৭নং খিত্তায় কুষ্টিয়া।

এ ছাড়া মূল ইজতেমা ময়দানের উত্তর-পশ্চিম অংশে (দোয়া মঞ্চের পাশে) বিদেশিদের জন্য আধুনিক সুবিধাসহ কয়েকটি প্যান্ডেল রয়েছে। এবারের ইজতেমা রেকর্ড সংখ্যক মানুষের উপস্থিতির সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় বিশ্ব ইজতেমার মাঠের পরিধি আরো বাড়ানো হয়েছে। আগের খিত্তাগুলোর সঙ্গে এবার অতিরিক্তি ১৪টি খিত্তা যোগ করা হয়েছে।

এদিকে মুসল্লিদের সুবিধার্থে তুরাগ তীরের পশ্চিমপাড়েও বিস্তৃত হয়েছে ইজতেমা ময়দানের কলেবর। এখানে সামিয়ানা টাঙ্গিয়ে অবস্থান নিয়েছেন মুসল্লিরা। তবে মুসল্লিদের পারাপারের জন্য যে পন্টুন ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে তার পশ্চিম অংশে তুরাগপাড়ে বাড়িঘর থাকায় মুসল্লিরা নির্বিঘে্ন যাতায়াত করতে পারছেন না।

ইজতেমার মুরুব্বি ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজ জানান, মুসল্লিদের সমাগম বেশি হওয়ায় সরকার তুরাগ তীরের পশ্চিমপাড় ইজতেমার ময়দানের জন্য দিয়েছে, এতে এখন ময়দানের ব্যাপ্তি প্রায় ৩০০ একর। অনেক মুসল্লি রাজউকের এই এলাকা দিয়ে পশ্চিমপাড় হয়ে পন্টুন ব্রিজ ব্যবহার করে ইজতেমা ময়দানে আসেন। কিন্তু বিআইডব্লিউটিএ তুরাগ পাড় উচ্ছেদ করলেও পশ্চিমপাড়ে এখনো বেশ কিছু বসতি রয়েছে যা নদীর সীমানায় থাকার কথা নয়। ফলে অবৈধ বসতবাড়ির কারণে ইজতেমায় আগত মুসল্লিরা স্বাচ্ছন্দ্যে পশ্চিমপাড় থেকে সেনাবাহিনী নির্মিত পন্টুন ব্রিজ ব্যবহার করতে পারছেন না। এ কারণে অবিলম্বে এসব অবৈধ বসতবাড়ি উচ্ছেদের জন্য তিনি বিআইডব্লিউটিএর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

আসছেন দেশবিদেশের লাখো মুসল্লি : দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইজতেমা ময়দানে এরই মধ্যে মুসল্লিদের আগমন শুরু হয়েছে। বাস, মিনিবাস, ট্রেনে চড়ে দলে দলে আসছেন মুসুল্লিরা। এছাড়া ভারত, পাকিস্তান, সৌদি আরব, মরক্কো, সুদান, মিসর, ইরাক ও ইরানসহ বিভিন্ন দেশের মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে আসতে শুরু করেছেন। এসব দেশ থেকে এবার সহস্রাধিক মুসল্লি অংশ নেবেন বলে আশা আয়োজকদের।

ইজতেমা ময়দানে আগত মুসল্লিরা জানান, আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালের নাজাতের আশায় তারা ময়দানে এসেছেন। এখানে ইজতেমার মুরব্বিরা দীন ও আখেরাতের নাজাতের উপায় নিয়ে আলোচনা করেন। ঈমান, আমল-আখলাকসহ ছয় উসুল নিয়ে আলোচনা হবে। দীনের দাওয়াতের আলোচনা হবে। মুরব্বিদের পরামর্শ ও নির্দেশনায় শত শত স্বেচ্ছাসেবক ইতোমধ্যে ইজতেমা ময়দানে সামিয়ানা টাঙানো, চট সেলাই-মেরামত, বাঁশের খুঁটি পোঁতা, ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার, রাস্তা মেরামত, বিদ্যুতের লাইন টানানো, পয়ঃনিস্কাশন ও পানি সরবরাহের কাজ সম্পন্ন করেছেন। প্রচণ্ড শীত ও কনকনে হিমেল হাওয়াকে উপেক্ষা করেই মুসল্লিরা দলে দলে ভাগ হয়ে তাদের নিজ নিজ খিত্তায় অবস্থান নিয়েছেন।

এদিকে, লাখ লাখ মুসল্লির সমাগমকে সামনে রেখে ইজতেমা ময়দানে গতবারের চেয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো বাড়ানো হয়েছে। স্থায়ী সিসিটিভি বসানোসহ থাকছে ওয়াচ টাওয়ার, পুলিশ ও র‌্যাবের আলাদা কন্ট্রোল রুম।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আনোয়ার হোসেন বলেন, ইজতেমা উপলক্ষে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ৫ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এবার ইজতেমায় সাড়ে ৮ হাজার পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবে। এ ছাড়াও সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ইজতেমা ময়দান ও এর আশপাশের এলাকায় পর্যাপ্ত ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। বিদেশি মেহমানখানায় সাদা পোশাকে পুলিশ কাজ করবে। আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশির ব্যবস্থা থাকবে। থাকবে নৌ টহলও যাতে ময়দানের পশ্চিম পাশ দিয়ে কোনো দুস্কৃতকারী প্রবেশ করতে না পারে।

গাজীপুর সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেন বলেন, বিশ্ব ইজতেমার সার্বিক কার্যক্রম মনিটরিং করার জন্য সিটি করপোরেশন কন্ট্রোলরুম স্থাপন করেছে। ইজতেমার মুুরব্বিদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। তাদের যে কোনো সমস্যা সমাধানে সক্রিয় রয়েছে সিটি কর্তৃপক্ষ। এ জন্য ২ হাজার কর্মী মাঠে কাজ করছে। ইজতেমা ময়দান ও এর আশাপাশের এলাকায় প্রয়োজনীয় ফগার মেশিন দিয়ে মশক নিধন করা হবে। এ ছাড়া ইজতেমা ময়দানের চারপাশে বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বিশ্ব ইজতেমায় ভারতের যেসব মুরব্বি অংশগ্রহণ করবেন : বিশ্ব ইজতেমার মূল আকর্ষণই থাকে ভারতের শীর্ষস্থানীয় আলেমদের অংশগ্রহণ। গত কয়েক বছর ধরে নিজামুদ্দিন মারকাজের মুরব্বি মাওলানা সাদ কান্ধলভীর সঙ্গে বাংলাদেশ ও ভারতসহ অনেক দেশের আলেমদের বিরূপ মনোভাব ও সহিংসতার পর সাদ কান্ধলভিসহ ভারতের অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় আলেমও আসতে পারেননি। তবে এবারের বিশ্ব ইজতেমায় ভারতের মুরব্বিরা অংশগ্রহণ করবেন বলে একটি বিশ্বস্তসূত্রে জানা যায়। সাধারণত ভারতের শীর্ষস্থানীয় আলেমরাই থাকেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। তাই এবারের ইজতেমায় ভারত থেকে যাদের অংশগ্রহণে সম্ভাবনা বেশি, তারা হলেন- মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা, মাওলানা আহমদ লাট, মাওলানা জুহাইরুল হাসান, মাওলানা খোবাইবুল হাসান, মাওলানা ইসমাইল গোধরা, ডক্টর সানাউল্লাহ খান, হাকিম আব্দুল মান্নান, মাওলানা আব্দুর রহমান রাবিয়ানা, মো. ফারুক, ব্যাঙ্গালোর থেকে প্রফেসর আব্দুর রহমান মাদ্রাসী, দিল্লি থেকে সানোয়ার, আলী গড়ের মাওলানা আহমদ হুসাইন গোধরা, মাওলানা আকবর শরীফ, মুম্বাই থেকে মাওলানা ইউনুস এবং মাওলানা উসমান কাকুসি।

এদিকে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে ১৭ জানুয়ারি। আর ১৯ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App