×

জাতীয়

একাধিকবার ধর্ষণ করা হয় ঢাবি ছাত্রীকে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২০, ০১:১৪ পিএম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় রাজধানীসহ দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় বইছে। এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা একজনকে আসামি করে গতকাল সোমবার ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি মামলা হয়েছে। মামলাটির তদন্তভার ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) হস্তান্তর করা হয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ধারণা-ওই ছাত্রী একাধিকবার ধর্ষণের শিকার হলেও ধর্ষক একজনই ছিলেন।

ঢাবি ছাত্রীর ফরেনসিক পরীক্ষায় প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের আলামত মিলেছে। তবে একাধিকবার ধর্ষণের বিষয়টি আরো পরীক্ষার পর নিশ্চিত হয়ে বলা যাবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। ধর্ষণের শিকার ঢাবি ছাত্রীর কয়েকজন ঘনিষ্ঠজন ও শিক্ষকদের বরাতে জানা যায়, ধর্ষণের সময় ধর্ষক বারবার তার পরিচয় জানতে চায়। তখন মেয়েটি আন্দাজ করছিল, ঢাবি ছাত্রীর পরিচয় পেলে তাকে মেরে ফেলা হতে পারে। তাই তিনি মুখ খোলেননি।

বান্ধবীর বাসা রাজধানীর শেওড়ায় যাওয়ার সময় ভুল করে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের কাছে বাস থেকে নেমে পড়েছিলেন ওই ছাত্রী। আর সেখানেই কোনো একটি স্থানে ধর্ষণের শিকার হন তিনি। তবে পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল থেকে বের হয়ে বাঁ দিকে যেতে একটি ঝোপের মধ্যে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ওই স্থান থেকেই ভিকটিমের ইনহেলার, ক্লাসের নোটবুক, লেকচার শিট, চাবির রিংসহ জুতা ও কালো রঙের একটি জিনস প্যান্ট পাওয়া গেছে।

হাসপাতালে ভর্তির আগে ও পরে ঘনিষ্ঠজন এবং শিক্ষকদের কাছে ওই ছাত্রী বলেছেন, গত রবিবার সন্ধ্যা ৭টায় কুর্মিটোলা বাসস্ট্যান্ডে ভুল করে নামার পর সেখান থেকে গন্তব্যস্থল বন্ধুর বাসায় শেওড়ার উদ্দেশে রওনার সময়ই ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে তিনি জ্ঞান হারান। ঠিক কতক্ষণ অজ্ঞান ছিলেন তা বলতে পারেননি। তবে জ্ঞান ফিরে আসার পর বুঝতে পারেন, ঘণ্টা দুয়েক পার হয়েছে ও ধর্ষক তখনও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল সিরিয়াল কিলার। এর মধ্যেই ছাত্রীকে জোর করে পোশাক পরিবর্তন করিয়ে আবার ধর্ষণ করে ওই নরপিশাচ।

পালিয়ে আসার বিষয়ে তিনি জানান, ধর্ষক পেছন ফিরে তার (ছাত্রীর) ব্যাগ থেকে কিছু বের করার চেষ্টা করছিল। এই সুযোগে তিনি ওই স্থান থেকে পালিয়ে আসেন। ধর্ষক ছিল দাম্ভিক প্রকৃতির এবং তাকে পেছন থেকে ধরে নিয়ে যায় সে। ধর্ষকের অবয়ব সম্পর্কে পুলিশকে বিস্তারিত জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী।

ঢাবি কর্তৃপক্ষ ভুক্তভোগীকে মামলাসহ সব রকমের সহায়তা দেবে বলে জানিয়েছেন ভিসি অধ্যাপক আখতারুজ্জামান। গতকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে ধর্ষণের শিকার ছাত্রীকে দেখে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি) থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় এ কথা জানান তিনি। ভিসি বলেন, আমরা খুবই মর্মাহত। এটি চরম দুঃখজনক ও অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। তার সঙ্গে কথা হয়েছে। মনোবল শক্ত ও ভালো আছে সে। ঢাবি কর্তৃপক্ষই এখন তার অভিভাবক। তার পরিবারের সদস্যরাও তার সঙ্গে রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, পুলিশ তৎপর আছে। তারা হাসপাতাল থেকেই মামলা নিয়েছে। ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করেছেন। তাদের অনুরোধ করেছি নরপিশাচকে শনাক্ত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনার জন্য। এখন আমাদের প্রধান কাজ হচ্ছে তাকে মানসিক সমর্থন দিয়ে স্বাভাবিক করে তোলা। ঢাবি কর্তৃপক্ষ তাকে সব ধরনের সহায়তা দেবে।

ভুক্তভোগী ছাত্রীর শারীরিক অবস্থার বিষয়ে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন জানান, হাসপাতালের ওসিসিতে তার সব ধরনের চিকিৎসা চলছে। তার মেন্টালি ট্রমা রয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তার চিকিৎসা দিচ্ছেন। হাসপাতালের গাইনি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপিকা ডা. সালমা রউফকে প্রধান করে ফরেনসিক বিভাগ, নাক কান গলা বিভাগ, রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগসহ ৭ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।

গতকাল বিকেল ৩টার দিকে ঢামেক ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, ফরেনসিক পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত মিলেছে। তিনি এখন আশঙ্কামুক্ত হলেও মেন্টালি কনফিউজড। তার গলা, গাল, পাসহ শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাকে গলাটিপে ধরা হয়েছিল, সেই চিহ্নও রয়েছে। তার হাতেও কোনো কিছু দিয়ে আঘাত বা লাথি দেয়ার কারণে জখম হয়েছে। তবে মাথায় কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। আশা করি দুই একদিনের মধ্যে সেরে উঠবেন তিনি।

এ ঘটনায় ঢাবি কর্তৃপক্ষ শাহবাগ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছে বলে জানিয়েছেন প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রব্বানী। গতকাল দুপুর পৌনে ১টার দিকে ঢামেক হাসপাতালে সাংবাদিকদের তিনি জানান, মেয়েটির বাবা বাদী হয়ে ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি মামলা করেছেন। আর বিশ্ববিদ্যালয় শাহবাগ থানাধীন হওয়ায় ঢাবি কর্তৃপক্ষ শাহবাগ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। প্রয়োজনে আরো একাধিক আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরো বলেন, মামলার অগ্রগতি হলো, পুলিশ ঘটনার জায়গাটি চিহ্নিত করেছে, আলামতও সংগ্রহ করেছে।

ঘটনাস্থলের আশপাশ থেকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ১৫ ধরনের আলামত সংগ্রহ করেছে। নাম প্রকাশ না করলেও সিআইডির ক্রাইমসিন ইউনিটসহ তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের প্রধান ফটক থেকে বায়ের দিকে ১০০ গজ যেতেই ফুটপাতের সৌন্দর্যবর্ধনের ফুল গাছের ঝোপে তাকে জোর করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে তার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ব্যবহৃত সামগ্রী ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখে নিজেকে বাঁচাতে ধর্ষকের সঙ্গে তার ধস্তাধস্তি হয় বলে ধারণা করছেন তারা। বাধা দেয়া হলেও তাকে আঘাত করা হয়। ফরেনসিক পরীক্ষায় সে আলামতও মিলেছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) সুদীপ চক্রবর্তী ভোরের কাগজকে বলেন, ঘটনাস্থলের আশপাশের সড়কটি ব্যস্ততম হলেও এই ফুটপাতে মানুষের যাতায়াত কম থাকে। সিসিটিভি ব্যবস্থাও অপ্রতুল। তবে যে জায়গায় ছাত্রীটি নেমেছিল সেখানকার একটি সিসিটিভি ফুটেজ আমরা সংগ্রহের চেষ্টায় রয়েছি। এ ছাড়াও মামলাটি এখন থেকে ডিবি তদন্ত করবে। গতকাল রাতে ধর্ষণকারীকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তির রোধে ব্যবস্থা নিতে কাউন্টার রেইপ এন্ড ভায়োলেন্স এগেইন্সট উইমেন সেল গঠনসহ ৪ দফা দাবি জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি জমা দিয়েছে ডাকসু।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App