×

জাতীয়

পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ায় সরকারকে দোষারোপ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০১৯, ০১:৫৬ পিএম

পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ায় সরকারকে দোষারোপ
পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি দীর্ঘ ২২ বছর ও পুরোপুরি বাস্তবায়িত না হওয়ায় সরকারকে দোষারোপ করলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (ওরফে সন্তু লারমা)। তিনি একইসঙ্গে ইউপিডিএফকে রাজাকারের সাথে তুলনা করেন। রোববার(১ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর হোটেল সুন্দরবনে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির ২২ বছর উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ সব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি। সন্তু লারমা বলেন, শান্তিপূর্ণ ও শোষণ-নিপীড়ন মুক্ত একটি নিরাপদ জীবন পাওয়ার আশায় পার্বত্যবাসীরা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল। কিন্তু দীর্ঘ ২২ বছর অপেক্ষা করেও পার্বত্যবাসীর আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে দেওয়া হয়নি, সেটি আজ সুদূর পরাহত। তিনি আরো বলেন, জনসংহতি সমিতির তথা জুম্ম জনগণের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তাদের আর পেছনে যাওয়ার কোনো পথ নেই। জুম্ম জনগণ ২২ বছর ধরে চুক্তি বাস্তবায়ন অপেক্ষা করেছে। জুম্ম জনগণ সরকার তথা শাসকগোষ্ঠীকে অনেক সময় দিয়েছে। জুম্ম জনগণ সকল ক্ষেত্রে দুর্বলতর পশ্চাত্পদ তাই বলে তারা অবহেলা উপেক্ষার পাত্র হতে পারে না। তিনি আরো বলেন, জুম্ম জনগণ অধিকারকামী ও মুক্তিকামী। আর এটাই তাদের একমাত্র সম্বল। এমন ক্রান্তিকালীন পরিস্থিতিতে পার্বত্য অঞ্চলের জুম্ম জনগণ তাদের জাতীয় অস্তিত্ব ও জন্মভুমির অস্তিত্ব সংরক্ষণে বদ্ধপরিকর। জনগণ ও সমমর্যাদা নিয়ে বাঁচতে চায়। তাই পার্বত্য অঞ্চলে বিরাজমান পরিস্থিতি পেক্ষাপটে তারা আজ গভীরভাবে ভাবতে বাধ্য হচ্ছে তাদের করণীয় কি হতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের পর ২২ বছর অতিক্রান্ত হলেও সরকার চুক্তির মৌলিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ অবাস্তবায়িত অবস্থায় রেখে দিয়েছে। বলাবাহুল্য পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি এই সরকারের আমলে স্বাক্ষরিত হয়েছিল সেই আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার বর্তমানে একনাগাড়ে ১১ বছর ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকলেও চুক্তিসমূহ বাস্তবায়নে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। পক্ষান্তরে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তিসহ জুম্ম জাতিসমূহের জাতীয় অস্তিত্ব চিরতরে বিলুপ্তির ষড়যন্ত্র অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। সন্তু লারমা বলেন, বর্তমান সরকার ১১ বছর ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার পরও শান্তি চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়নে এগিয়ে না আসার কারণে  পার্বত্যবাসীর মধ্যে চরম হতাশা, অসন্তোষ ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। আর অন্যদিকে নিরাপত্তাহীন এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য শঙ্কিত হয়ে পড়েছে চুক্তি মোতাবেক বহিরাগত সেটেলারদের পার্বত্য চট্টগ্রামে বাইরে সম্মানজনক পুনর্বাসন প্রদান না করে এবং পার্বত্য চুক্তির দুই-তৃতীয়াংশ অবাস্তবায়িত রেখে সরকার উল্টো ৭২ টির মধ্যে ৪৮ টি ধারা সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হয়েছে বলে অব্যাহতভাবে অসত্য, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন প্রচার দেশে-বিদেশে চালিয়ে যাচ্ছে। চুক্তি বাস্তবায়নে সরকার আন্তরিক' পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন করা হবে চুক্তির অবশিষ্ট বিষয়সমূহ পর্যায়ক্রমে ধীরে ধীরে বাস্তবায়ন করা হবে' মর্মে বিগত ১১ বছর ধরে সরকার প্রতিশ্রুতি প্রদান কালক্ষেপণ করে চলেছেন। তিনি আরও বলেন পার্বত্য অঞ্চলের পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক জুম্ম জনগণ অকল্পনীয় দমন-পীড়ন নিরাপত্তাহীনতা ও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মধ্যে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে। যে রাজনৈতিক দল পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার একটা সুষ্ঠু রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল সেই রাজনৈতিক দল পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতিকে সরকার একটি সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ দল হিসেবে চিহ্নিত করে পার্বত্য চুক্তি করে দিতে বদ্ধপরিকর। আমরা চাই অচিরেই চুক্তি বাস্তবায়নে। চুক্তি বাস্তবায়ন না হলে আমাদের অস্তিত্ব চরম সংকটের মধ্যে পড়বে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক ড. মেসবাহ কামাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক উ উইন মং জলি প্রমুখ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App