×

জাতীয়

ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধে ইউএনও'র ব্যতিক্রম উদ্যোগ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০১৯, ১১:২৪ এএম

ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধে ইউএনও'র ব্যতিক্রম উদ্যোগ

গাজীপুরের কালীগঞ্জে স্থানীয় ভিক্ষুকদের পূনর্বাচন করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শিবলী সাদিক নিয়েছেন ব্যতিক্রমধর্মী এক উদ্যোগ। পর্যায়ক্রমে নেয়া হচ্ছে ভিক্ষুকদের সাক্ষাৎকার। আর সাক্ষাৎ দিতে আসা ভিক্ষুকরা পাচ্ছেন টিএ/ডিএ। প্রশাসনসহ স্থানীয়দের প্রত্যাশা খুব শীঘ্রই এ উপজেলা হবে ভিক্ষুক মুক্ত।

জানা গেছে, এ উপজেলায় ২১০জন ভিক্ষুক তালিকাভুক্ত হয়েছে। তাদের পুনর্বাসন করার লক্ষ্যে কালীগঞ্জকে ভিক্ষুকমুক্ত করার প্রত্যয় নিয়ে ইউএনও তার অফিসে পর্যায়ক্রমে ২৯ জন ভিক্ষুক নারী-পুরুষের সাক্ষাৎ গ্রহন করেছেন। আর এই কাজটিতে ইউএনও মো. শিবলী সাদিককে সহযোগীতা করছেন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. শাহাদাৎ হোসেন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আবু নাদির সিদ্দিকী, আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের উপজেলা কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান। কেন? কি কারণে তারা ভিক্ষা করেন, কি করলে তারা ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে দিবেন? ভিক্ষুকদের এমন নানা সমস্যার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন ইউএনও।

সাক্ষাৎকার গ্রহন করা উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের নারগানা গ্রামের ইয়াকুব আলী (৭৫)। দুই ছেলের এক ছেলে স্থানীয় একটি জুট মিলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। অন্যটি এলাকায় ব্যাটারি চালিত রিকশা চালান। তারা বউ নিয়ে অন্যত্র থাকলেও বাবা-মাকে দেখভাল করেন না। বৃদ্ধ ইয়াকুব ভাঙ্গা একটি একচালা ঘরে বৃদ্ধা স্ত্রীকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আর সে কারণে তিনি জীবন ও জীবিকার তাগিদে মানুষের দ্বারে দ্বারে হাতপাতা শুরু করেন। তবে কোন মতো চলার ব্যবস্থা থাকলে ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে দিবেন বলে জানালেন বৃদ্ধ ইয়াকুব আলী।

ওই গ্রামের আরেক ভিক্ষুক মো. ছাদেক আলী (৭৭)। তার এক ছেলে সেটাও মানসিক বিকারগ্রস্থ। ভেবে ছিলেন ছেলেকে বিয়ে দিলে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু তা আর হলো না। বিয়ের কয়েক বছর যেতেই এক ছেলে জন্মের পর তাকে রেখে চলে যায় ছেলের বউ। জরাজীর্ণ একটি ঘরে স্ত্রী, মানসিক বিকারগ্রস্থ ছেলে ও নাতিকে নিয়ে চলছে মানবেতর জীবন। নিজের পৈত্তিক ভিটা ৫ শতাংশ জমির ওপর একটি ঘর ও একটি গরুর ব্যবস্থা হলে তিনি এই পেশাটি ছেড়ে দিতেন।

সাক্ষাৎকার নেওয়া হয় নারগানা গ্রামের ভিক্ষুক মো. মস্তফা মিয়ার (৮০)। দুই ছেলের একজন এলাকায় ব্যাটারি চালিত রিকশা চালান। বিয়ে করে স্ত্রী নিয়ে তিনি এখন আলাদা। তবে বাবা-মায়ের কোন খোঁজ-খবর নেন না। অন্যজন একটি দূর্ঘটনায় পঙ্গুত্ব বরণ করছেন। তবে সেই ছেলেটির নগদ কিছু পুঁজি দিয়ে একটি ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করে দিলে হয়তো তার সংসারের অভাব গোচত। তাহলে হয়তো তিনি ভিক্ষার পেশাটি ছেড়ে দিতে পারতেন।

জামালপুর গ্রামের গোলমহনের (৭০) উপযুক্ত চার ছেলে থাকার পরও ভিক্ষা করছেন। তিন ছেলে তাদের নিজেদের সংসার নিয়ে ব্যস্ত মায়ের কোন দেখভাল করেন না তারা। এক ছেলে বাউল শিল্পী গান বাজনা করে যা আয় করেন, তা দিয়ে স্ত্রী ও মাকে নিয়ে কোন রকম দিনাতিপাত করছেন। ছেলের বউই তাকে দেখভাল করেন। তাই ছেলের বউকে একটি কাজের ব্যবস্থা করে দিলে হয়তো তাকে আর ভিক্ষা করতে হতো না।

এছাড়া জামালপুর এলাকার ভিক্ষুক আকলিমা, নূরজাহান বেগম, হালিমা বেগম, শাহিদা বেগম, আমেনা বেগম, সামসুন নাহার, খোশেদা খাতুন, ফাতেমা বেগম কেউই অভিশপ্ত ভিক্ষাবৃত্তি করতে চাননা। অভাবের সংসার কিন্তু উপযুক্ত ছেলেরা ভরণ-পোষণ করেন না বিধায় ভিক্ষাবৃত্তিতে তারা জড়িয়ে পড়েছে। বয়সের ভারে তারা ক্লান্ত তারাও ভিক্ষাবৃত্তি করতে চান না। তাদের সংসার চলার মতো কোনো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে তাদের পুনর্বাসন হলে মানুষের কাছে তারা আর হাত পাতবেন না। তবে তাদের চাওয়া তাদের কারো ছেলেকে চায়ের দোকান, কাউকে একটি রিকশা ও কাউকে কোনো কাজের ব্যবস্থা করে দিলে ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে দিবেন বলে সাক্ষাতের সময় ইউএনও’র কাছে প্রতিশ্রুতি দেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শিবলী সাদিক বলেন, এ উপজেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত করার লক্ষ্যে ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন করার জন্য তাদের সমস্যা ও সমাধানকল্পের সাক্ষাৎকার নেওয়া হচ্ছে। ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন করতে সরকার সার্বিকভাবে সহযোগিতা করবেন। স্থানীয় কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা হয়েছে, তারা আন্তরিক এ বিষয়ে। সাহায্য-সহযোগিতা আশ্বাস দিয়েছেন। তাই ভিক্ষুকদের ডেকে এনে তাদের সমস্যার কথা শোনে সমাধানের পথ খোঁজা হচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App