×

জাতীয়

জগলুল আহমেদ চৌধূরী ছিলেন সাংবাদিকতার পণ্ডিত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০১৯, ০৭:২৭ পিএম

জগলুল আহমেদ চৌধূরী ছিলেন সাংবাদিকতার পণ্ডিত
জগলুল আহমেদ চৌধূরী ছিলেন সাংবাদিকতার পণ্ডিত

সাংবাদিকতায় জগলুল আহমেদ চৌধূরী ছিলেন একজন পণ্ডিত। সময়ে-দুঃসময়ে যারা সাহসীভাবে কলম ধরেছেন জগলুল তাদেরই একজন। আন্তর্জাতিক বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিভিন্ন বিশ্লেষণধর্মী কলাম লিখেছেন। তার এই আন্তর্জাতিক বিশ্লেষণধর্মী লেখা তরুণ প্রজন্মের সাংবাদিকদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস।

দেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক জগলুল আহমেদ চৌধূরীর পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত স্মরণ সভায় বক্তারা এভাবেই তার জীবন ও কর্মের কৃতিত্ব তুলে ধরেন।

দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতির বিশ্লেষক প্রয়াত জগলুল আহমেদকে স্মরণ করতে গিয়ে বক্তারা আরো বলেছেন, সাংবাদিকতার প্রতি তার নিষ্ঠা, সংস্কৃতির প্রতি তার আকর্ষণ, দেশের প্রতি তার ভালোবাসার তুলনা হয় না। তিনি ছিলেন বিনয়ী, স্পষ্টবাদী, বন্ধুবৎসল, উদার মনের মানুষ।

সাংবাদিক জগলুল আহমেদ চৌধূরী স্মৃতি ট্রাস্টের মহাসচিব ও ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্তের সঞ্চালনায় স্মরণ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম। তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন, জগলুল আমার প্রিয় বন্ধু ছিলো। রাজনৈতিক সহকর্মী ছাড়া আমার বন্ধুর সংখ্যা কম। সেই কমের মধ্যেই জগলুল প্রিয় বন্ধু আমার। সে বাস থেকে নামতে গিয়ে চাপায় মারা গেলো। তাৎক্ষণিকভাবে যে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো সেখানে চিকিৎসাও পায়নি। আমি তখন মন্ত্রী ছিলাম। সেই হাসপাতাল আমি বন্ধ করে দিয়েছিলাম। এখন সেটা আবার চালু হয়েছে।

সাংবাদিক জগলুল আহমেদ চৌধূরী স্মৃতি ট্রাস্টের সভাপতি অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের সভাপতিত্বে স্মরণসভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ইকবাল বাহার চৌধুরী, ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম, সাবেক রাষ্ট্রদূত ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ওয়ালীউর রহমান, বিশিষ্ট সাংবাদিক স্বপন কুমার সাহা, সাংবাদিক আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া, সংবাদের সম্পাদক খন্দকার মুনীরুজ্জামান, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম মুকুল, জগলুল আহমেদ চৌধূরীর বড় ভাই রোকন উদ্দিন চৌধূরী, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বনানী সোসাইটির সভাপতি শওকত আলী ভূঁইয়া প্রমুখ।

জগলুল আহমেদকে সাহসী সাংবাদিক ও বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করে অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, জগলুল তখন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার দিল্লি প্রতিনিধি। সরকারি চাকরি করেন। ক্ষমতায় ছিলেন জিয়াউর রহমান। ওই সময়ে তিনি দিল্লি থেকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। তিনি সাহসী ছিলেন। জগলুলকে সবসময় হাসিখুশি থাকতে দেখেছি। এরকম প্রাণখোলা মানুষ আমরা আর পাব না।

জগলুল আহমেদের স্মৃতি ধরে রাখার প্রসঙ্গে অ্যাডভোকেট কামরুল বলেন, আমরা ইতোমধ্যে জগলুলের নির্বাচিত কলাম নিয়ে বই প্রকাশ করেছি। তার লেখা নিয়ে আরও বই করতে চাই। ট্রাস্ট থেকে প্রতি বছর তিনজন সাংবাদিককে ফেলোশিপ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জগলুল আহমেদকে আমরা বাঁচিয়ে রাখতে চাই। এজন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেন।

জগলুলকে দেশিপ্রেমিক ও সংস্কৃতিপ্রেমী হিসেবে উল্লেখ করে সাংবাদিক ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, সাংবাদিকতার প্রতি তার নিষ্ঠা, সংস্কৃতির প্রতি তার আকর্ষণ, দেশের প্রতি তার ভালোবাসার তুলনা হয় না। তার কলাম ছিল বেশ উঁচু মানের। বক্তব্য শেষে রবীন্দ্রনাথের ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন।

ডেইলি স্টার সম্পাদক ও সম্পাদক পরিষদের সভাপতি মাহফুজ আনাম বলেন, জগলুল ছিলো অত্যন্ত ভদ্র, আন্তরিক, সজ্জন। তার কথা শুনলেই শক্তি পেতাম। হাসিখুশি থাকতো। তার স্ত্রীও আমার বন্ধু। জগলুল অত্যন্ত অতিথি পরায়ণ ছিলো। সে আপাদমস্তক একজন সাংবাদিক ছিলেন। ফুলটাইম সাংবাদিকতা করেছে। বিদেশি সংবাদ সংস্থার প্রতিনিধি ছিলো। জগলুল দেখিয়েছে সাংবাদিকতা করেও স্বচ্ছল জীবন-যাপন করা যায়। সে আন্তরিকতা দিয়ে মানুষের মন জয় করতো।

দৈনিক সংবাদ সম্পাদক খন্দকার মুনীরুজ্জামান বলেন, জগলুল কখনো নিজের কথা ভাবেনি। পরোপকারী ছিলো। আমার জীবনে জগলুলের অবদান আছে। গর্ব করে বলি আমরা জগলুলের বন্ধু।

প্রথম আলো’র যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম বলেন, জগলুল আহমেদের লেখা, ব্যক্তিত্ব দুটিই খুব উন্নমানের ছিলো। তার অসুখ ছিলো কিন্তু তিনি বুঝতে দিতো না। হাসিখুশি থাকতো। যাকে দেখে আমার মধ্যে প্রাণসঞ্চার হতো। আমি আছি অথচ সেই বন্ধুটি নেই।

জগলুল আহমেদের গুণের বর্নণা দিতে গিয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমান বলেন, সে কখনো ইনিয়ে বিনিয়ে কথা বলতো না। তার একটা বড় গুণ ছিলো সে সবসময় শিখতে চাইতো। জানতে চাইতো। দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি, কূটনীতি নিয়ে তার জ্ঞান ছিলো। তার মৃত্যুর পর আর কেউ দক্ষিণ এশিয়া নিয়ে এরকম লিখে না। তার মতো করে একজনকেও আমরা তৈরি করতে পারিনি।

সাংবাদিক স্বপন কুমার সাহা বলেন, জগলুল আহমেদ অতিথি পরায়ণ ছিলেন। খাওয়াতে পছন্দ করতেন। আড্ডা দিতে পছন্দ করতেন। গুন গুন করে রবীন্দ্র সংগীত গাইতেন। ব্যক্তি জীবনে স্ত্রী তাজিন চৌধুরীকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন। স্ত্রী অসুস্থ ছিলেন, তাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিতেন জগলুল।

গণফোরামের কার্যনির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকে সুব্রত চৌধুরী বলেন, জগলুল রাজনীতি বিশ্লেষক ছাড়াও আর্ন্তজাতিক-কূটনৈতিক বিশ্লেষক ছিলেন। নিজেকে উপস্থাপনে ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী। তার মধ্যে কোনো অহংকার ছিলো না। তার বাবা অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন চৌধুরী ছিলেন পাকিস্তানের মন্ত্রী। তা কোনোদিন জগলুল বলেননি। এমনকি তার ভাই ছিলেন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি, সেটাও কোনোদিন বলেননি জগলুল। তার বাবার মৃত্যুর পর জেনেছি তিনি একসময় মন্ত্রী ছিলেন। জগলুল আহমেদ ছিলেন প্রচার বিমুখ।

স্মরণ সভায় বনানী সোসাইটির সভাপতি শওকত আলী দিলন বলেন, এই যুগে তার মতো এতো ভদ্রলোক হয় না। তিনি অত্যন্ত সাধারণ ছিলেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App