জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সানোয়ার সিরাজের বিরুদ্ধে এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় বিভাগীয় সভাপতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্নাতকোত্তর শ্রেণির ওই ভুক্তভোগী ছাত্রী। তবে এর আগে বিভাগীয় সভাপতি বরাবর একই অভিযোগ করে কোনো প্রতিকার পাননি বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী ছাত্রী উল্লেখ করেন, তৃতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষায় ওই শিক্ষকের কোর্সে (জিপি-৩০৩) কম নম্বর পাই। ওই কোর্সের মানোন্নয়ন পরীক্ষা দেয়ার জন্য আমি কোর্স শিক্ষকের শরণাপন্ন হই। এ সময় তিনি আমার মোবাইল নম্বর নিয়ে যে কোনো প্রয়োজনে আমাকে ফোন দিতে বলেন। মানোন্নয়ন পরীক্ষার দিন রাতে (গত বছরের ১২ মার্চ) তিনি ফোন করে পরীক্ষার বিষয়ে জানতে চান। ওই রাতে তিনি আবারো ম্যাসেঞ্জারে যোগাযোগ করেন এবং আমার সঙ্গে ঘোরাফেরা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। হঠাৎ শিক্ষকের এ ধরনের আচরণে আমি বিস্মিত হই। পরবর্তী সময়ে আমি বিভাগে গিয়ে তার কাছে জানার চেষ্টা করি যে, তার ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়েছিল কিনা? কিন্তু তিনি নিশ্চিত করেন যে, আইডি হ্যাক নয় বরং তিনিই এ ম্যাসেজ প্রদান করেছেন। এ সময় ওই শিক্ষক আরো বলেন, আমার প্রতি তিনি তীব্র শারীরিক আকর্ষণ বোধ করেন, আমার সঙ্গে সময় কাটাতে চান, ঘুরতে চান। আমি ধারাবাহিকভাবে শিক্ষকের এমন আচরণে খুব বিব্রতবোধ করি। ফলে বারবার ফেসবুক আইডি ডিএক্টিভ করছিলাম। কিন্তু তিনি রেগুলার আমাকে উত্ত্যক্ত করে যাচ্ছিলেন। অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী আরো উল্লেখ করেন, আমি এ ঘটনার জন্য তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করার ইচ্ছা পোষণ করি। কিন্তু আসন্ন স্নাতকোত্তর পরীক্ষার কারণে অভিযাগ না দেয়ার জন্য অনেকে আমাকে পরামর্শ দেন। এ অবস্থায় আমি তার আচরণে হতাশ হয়ে পড়ি। পরবর্তী সময়ে তিনি আমাকে আবারো কল করে ড্রেস গিফট করা, ঢাকা এবং সাভারের রেস্টেুরেন্টে খাওয়া, রাতে একসঙ্গে ঘুরতে যাওয়া এবং তার বাসায় যাওয়ার প্রস্তাব দেন। এ সময় তিনি আরো কিছু অশালীন কথাবার্তা ও কুপ্রস্তাব দেন। আমি তার ধারাবাহিক অত্যাচারে মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি এবং একাধিক ডাক্তার ও মনোবিজ্ঞানীর সাহায্য নিতে বাধ্য হই। পরে সানোয়ার সিরাজের যৌন নিপীড়নমূলক কথাবার্তা, ফোনকল রেকর্ড ও ম্যাসেঞ্জারের চ্যাটের প্রমাণ বিভাগের তৎকালীন সভাপতি শামসুন্নাহার খানমের কাছে হস্তান্তর করি। কিন্তু তার আমলে কোনো প্রতিকার পাইনি। তাই নতুন বিভাগীয় সভাপতির কাছে লিখিত অভিযোগ দিচ্ছি। এ বিষয়ে বিভাগের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক শামসুন্নাহার খানম বলেন, আমাকে কোনো ধরনের লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তাই ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি। গত ১৯ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত শিক্ষকের নাম উল্লেখ করে যৌন হয়রানির বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন সরকার ও রাজনীতি বিভাগের বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক নাসরিন সুলতানা। তিনি বলেন, আমি অভিযোগপত্র পেয়ে গত বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সেটি বিশ^বিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়নবিরোধী সেলে পাঠিয়ে দিয়েছি।বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল’-এর প্রধান অধ্যাপক রাশেদা আখতার বলেন, আমি অভিযোগপত্রটি হাতে পেয়েছি। তদন্ত প্রক্রিয়াধীন। আর তদন্ত চলাকালে তদন্তের বিষয়ে কোনো কথা বলার এখতিয়ার আমাদের নেই। তবে তদন্ত শেষে আমরা সবকিছুই জানাব। এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে অভিযুক্ত সহকারী অধ্যাপক সানোয়ার সিরাজের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। এ ছাড়া গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে ওই ছাত্রী ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বলে জানিয়েছেন তার সহপাঠিরা। তারা বলেন, অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ সেবনের কারণে সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসা নেয়ার পর সে এখন শঙ্কামুক্ত।