×

জাতীয়

যুদ্ধাস্ত্রের পেছনে কারা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০১৯, ১১:৫৯ এএম

যুদ্ধাস্ত্রের পেছনে কারা
রাজধানীতে পৃথক কয়েকটি অভিযানে অত্যাধুনিক অস্ত্র উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এসব অস্ত্রের মধ্যে বিদেশে তৈরি একে-২২ অটোমেটিক রাইফেল মিলেছে বেশ কয়েকটি। গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা ছাড়া দেশের কোথাও এমন অস্ত্রের ব্যবহার দেখা যায়নি। এ ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেশ কয়েকটি অভিযানে জঙ্গিদের কাছ থেকে এমন রাইফেল উদ্ধার হয়েছে। সম্প্রতি একে-২২ রাইফেলের বেশ কয়েকটি চালান উদ্ধারের পর প্রশ্ন উঠেছে, জঙ্গি নাকি পেশাদার সন্ত্রাসী গ্রুপ বিদেশ থেকে অবৈধভাবে রাজধানীতে এসব অস্ত্রের চালান আনছে? বারবার মারণাস্ত্রের চালান আটকের পর বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদেরও ভাবিয়ে তুলেছে। দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির কোনো অপচেষ্টা আছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। সর্বশেষ গত শুক্রবার রাতে রাজধানীর খিলগাঁও থানাধীন ২৬৯/এ/ক, সিপাহীবাগ (চারতলা গলি, বায়তুল হুদা মসজিদ সংলগ্ন), ফাইভ স্টার নিবাসের সামনে অভিযান চালিয়ে খান মো. ফয়সাল, জিয়াউল আবেদীন ওরফে জুয়েল ও জাহেদ আল আবেদীন ওরফে রুবেল নামে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশের পূর্ব বিভাগ। তাদের কাছ থেকে একটি একে-২২ রাইফেল, ৪টি বিদেশি পিস্তল, একটি বিদেশি রিভলবার ও মোট ৪৭ রাউন্ড বিভিন্ন অস্ত্রের গুলি জব্দ করা হয়। রাজধানীর ওয়ারী এলাকা থেকে গত ১৯ জুলাই একসঙ্গে ৬টি অত্যাধুনিক ও বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১২৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধারসহ রাজু গাজী, সাখাওয়াত ও মিনহাজুল নামে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা কেউ অস্ত্রের মালিক নয়। তারা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় অস্ত্র পৌঁছে দেয়ার কাজ করেছে। এই অস্ত্রগুলো রাজনৈতিক ক্যাডারদের কাছে যাচ্ছিল বলে তারা ধারণা করছেন। অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শ্যামপুর থানার এসআই মীর মোজাহারুল ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া তিন আসামিকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। শ্যামপুরের অস্ত্র উদ্ধারের আগে গত মাসের শুরুতে পুরান ঢাকা থেকে একটি একে-২২ অটোমেটিক রাইফেল হাত বদলের সময় উদ্ধার করে ডিএমপির সিটিটিসি ইউনিট। এ সময় হাতেনাতে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় নেতৃত্ব দেয়া সিটিটিসির একজন কর্মকর্তা জানান, অস্ত্রটি চট্টগ্রামের বাবুল ও সাদেক নামে দুই সন্ত্রাসীর কাছ থেকে হাত বদল হয়ে কুমিল্লার হাসিব ও কিবরিয়া নামে দুই ব্যক্তিকে পৌঁছে দেয়ার কথা ছিল। একইভাবে গত ৬ মাসে আরো তিনটি একে-২২ রাইফেল হাত বদল হয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলায় একে-২২ রাইফেল ব্যবহার করেছিল জঙ্গিরা। হামলার পর সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযান শেষে সেখানে ৩টি একে-২২ রাইফেল, ৫টি নাইন এমএম পিস্তল ও ১১টি হ্যান্ড গ্রেনেড পাওয়া যায়। ওই হামলায় অংশ নেয়া জঙ্গি রোহানের কাঁধে যে অস্ত্রটি ঝুলতে দেখা যায় সেটিও ছিল একে-২২ রাইফেল। রাজধানীর কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানায় ২০১৬ সালের ২৬ জুলাই অভিযান শুরুর আগে একে-২২ নিয়ে পালিয়ে যায় এক জঙ্গি। নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ার জঙ্গি আস্তানায় অভিযান শেষেও দেখা যায় জঙ্গিদের মৃতদেহের সঙ্গে একে-২২ রাইফেল। একে-২২ নামের যে সেমিঅটোমেটিক রাইফেলটি গুলশানের হলি আর্টিজান থেকে জব্দ করা হয়েছিল ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে ঠিক একই ধরনের ৮টি একে-২২ রাইফেল চট্টগ্রামের হামজা ব্রিগেডের কাছ থেকে জব্দ করেছিল র‌্যাব সদস্যরা। এর আগে আরেকটি জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে ২০১৫ সালের শেষের দিকে একই এলাকা থেকে ৯টি একে-২২, একটি একে-৪৭ ও বিদেশি ৪৪টি রিভলবার জব্দ করেছিল র‌্যাব। ২০১৬ সালের শুরুর দিকে বগুড়ার দুটি জঙ্গি আস্তানা থেকেও একে-২২ রাইফেল, জার্মানির তৈরি এসএমজি, পিস্তল, হাতে তৈরি গ্রেনেড ও বিপুল বিস্ফোরক জব্দ করে র‌্যাব। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, চলতি বছরের মার্চ মাসেই একটি ডাকাত চক্রের ১২ সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য দিয়ে রামপুরায় অভিযান চালানো হয়। ওই অভিযানে হাফিজ ওরফে খালিদ ওরফে ইব্রাহীম গাজী ও মামুনুর রশিদ ওরফে বাচ্চু মোল্লা নামে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী- বাংলাদেশ (হুজিবি) এর ২ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে গোয়েন্দা পুলিশ একটি অত্যাধুনিক একে-২২ অটোমেটিক রাইফেল, একটি পাইপগান, ৪১ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছিল। অবশ্য গোয়েন্দা কর্মকর্তারা মনে করছেন, ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকাগুলোতে গরুর হাটের ইজারা নিয়ে পেশিশক্তির প্রদর্শন হয়ে থাকে। এ কারণেও সন্ত্রাসীরা অস্ত্র মজুত করে থাকতে পারে। এ ছাড়া আগের মতো শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আধিপত্য না থাকলেও এখন রাজনৈতিক দলের ক্যাডারদের উৎপাত রয়েছে। এদের অনেকেই নিজ নিজ এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয়। তবে অটোমেটিক রাইফেলগুলো উদ্ধার করা নিয়ে তারা কিছুটা চিন্তিত। এসব অস্ত্র কোনোভাবেই রাজনৈতিক ক্যাডারদের ব্যবহার করার কথা নয়। জঙ্গিদের নানাভাবে তৎপর হওয়ার চেষ্টা ও ঢাকার চারটি পুলিশ বক্সের পাশে টাইম বোমা ফেলে রাখার ঘটনায় জঙ্গিদের অস্ত্রভাণ্ডার নিয়ে তদন্তে রয়েছে পুলিশ, র‌্যাব ও গোয়েন্দারা। প্রাপ্ত তথ্যমতে, জঙ্গিরা একে-২২ রাইফেলসহ যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহারে পারদর্শী। আফগান যুদ্ধে এর ব্যবহার রয়েছে। এই অস্ত্রের বাজার ও রুট তারাই ভালো জানে। সিটিটিসি ইউনিটের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, একে-২২ রাইফেলগুলোর উৎস ও হাত বদল হয়ে যাদের কাছে যাওয়ার কথা ছিল তাদের আমরা শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। এসব অস্ত্র পেশাদার সন্ত্রাসী নাকি জঙ্গিরা সংগ্রহ করছে, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মো. মাহবুব আলম এ বিষয়ে বলেন, একে-২২ রাইফেল উদ্ধারের ঘটনায় কারা জড়িত তা এখনি বলা যাচ্ছে না। এর পেছনে জঙ্গিগোষ্ঠী, রাজনৈতিক ক্যাডার নাকি পেশাদার সন্ত্রাসীরা জড়িত সেটা তদন্তে বেরিয়ে আসবে। তবে জঙ্গিদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য মেলেনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App