×

জাতীয়

বিমানের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে নানা প্রশ্ন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০১৯, ০১:১৫ পিএম

বিমানের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে নানা প্রশ্ন
মাত্র ১৪ মাসের মাথায় চাকার সমস্যা নিয়ে আবারো বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজের জরুরি অবতরণের ঘটনা ঘটল। ৬৩ জন আরোহী নিয়ে গতকাল শুক্রবার বিকেলে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করে বিজি ৪০২ ফ্লাইটটি। এ জাতীয় সমস্যায় ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর ও ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর জরুরি অবতরণ করে বিমানের আরো দুটি উড়োজাহাজ। বারবার একই ধরনের সমস্যার পেছনে বিমানের রক্ষণাবেক্ষণ-সংক্রান্ত কোনো অবহেলা বা অনিয়ম রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখার কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা। সিলেট থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা ড্যাশ-৮ মডেলের বিজি ৪০২ ফ্লাইটটি গতকাল বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে জরুরি অবতরণ করলেও পাইলট-ক্রুসহ ৬৩ আরোহী নিরাপদে নামতে পেরেছেন। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক উইং কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল ফারুক জানান, ঢাকা আসার পর ল্যান্ডিং গিয়ারে সমস্যা হয়। তবে এটি বড় কোনো সমস্যা নয়। একটি সূত্র জানায়, বিমানটির পেছনের চাকা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পাইলট জরুরি অবতরণের সিদ্ধান্ত নেন। বিমানের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ বলেন, এটি আতঙ্কিত হবার মতো কিছু নয়, যুক্তরাজ্যের হিথ্রো বিমানবন্দরে প্রতিদিনই এমন দু-চারটি ঘটনা ঘটে। পাইলট যদি মনে করেন সমস্যা হতে পারে তখন তিনি ইমার্জেন্সি চান। এটিই সঠিক। এ ক্ষেত্রে ইমার্জেন্সি না চাওয়া ভুল অপারেশন। এর আগে ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর ওড়ার সময় রানওয়েতে চাকা খুলে গেলেও সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যান বিমানের ৬৬ যাত্রী, পাইলট ও কেবিন-ক্রুসহ ৭১ জন। ওই দিন সকাল ৯.৩৩ মিনিটে সৈয়দপুর বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করে ফ্লাইটটি। ওড়ার কিছুক্ষণ পরই রানওয়েতে চাকার অংশ পড়ে থাকতে দেখেন বিমানবন্দরের নিরাপত্তাকর্মীরা। তারা তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি কন্ট্রোল টাওয়ারকে জানান। কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে বিমানের ককপিটে সে বার্তা জানিয়ে দেয়া হয়। পরে বিশেষ দক্ষতার সঙ্গে বিমানের অপারেটিং ক্যাপ্টেন আতিক ও ফার্স্ট অফিসার ইয়ামিন ঢাকায় বিমানটি জরুরি অবতরণ করাতে সক্ষম হন। ওই ঘটনায় বিমানের ডেপুটি চিফ অব ফ্লাইট সেফটি ক্যাপ্টেন এনামকে প্রধান করে ৪ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরে এটিকে যান্ত্রিক ত্রুটি আখ্যা দিয়ে প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত কমিটি। এর আগে ২০১৬ সালে ২২ ডিসেম্বর প্রায় একই ধরনের ঘটনা ঘটে। মাসকাট থেকে দেশে ফেরার পথে সামনের চাকা ফেটে বিমানের বোয়িং ৭৩৭ এয়ারবাসটি ভয়াবহ দুর্ঘটনায় পড়ার অবস্থা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পাইলটের দক্ষতায় রক্ষা পান ওই ফ্লাইটের ১৪৯ জন যাত্রী। পাইলট বিশেষ কৌশলে পেছনের চাকার ওপর ভর করে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এয়ারবাসটি জরুরি অবতরণ করান। তার মাত্র কয়েক দিন আগে ১২ ডিসেম্বর যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিমানের একটি উড়োজাহাজ মিয়ানমারের উদ্দেশে যাত্রা করে কিছুক্ষণ পর আবার ঢাকায় ফিরে আসে। ২৭ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে হাঙ্গেরি যাওয়ার পথে বোয়িং রাঙা প্রভাতও তুর্কমেনিস্তানে জরুরি অবতরণ করতে বাধ্য হয়। এ বিষয়ে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী অরুণ চৌধুরী বলেন, প্রকৌশল শাখার অবহেলা ও অদক্ষতার কারণে বারবার এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। সঠিকভাবে উড়োজাহাজের রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে, সঠিক তদারকি ও রক্ষণাবেক্ষণ না করার কারণে অনেক ক্ষেত্রে এ জাতীয় যান্ত্রিক ত্রুটি ঘটে থাকে। গাফিলতি ও ব্যর্থতার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধেও সব সময় ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। ঘটনাগুলোকে বিচ্ছিন্নভাবেই দেখা হয় সব সময়। কিন্তু বারবার একই ধরনের ঘটনা কেন ঘটছে- সে বিষয়ে গভীর অনুসন্ধান নেই। মন্ত্রণালয় ও বিমানের মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতিও ব্যবস্থা না নেয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এভিয়েশান বিশেষজ্ঞ আশীষ রায় চৌধুরী মনে করেন, প্রধানমন্ত্রীর ফ্লাইটে যান্ত্রিক ত্রুটির ঘটনায় দেশ-বিদেশে তোলপাড় হওয়ার পরও টনক নড়েনি। অবস্থা দৃষ্টে মনে হয়, এ ঘটনায় কেউ শিক্ষাও নেয়নি। বিমানের নতুন নতুন উড়োজাহাজে কেন এত ঘন ঘন টেকনিক্যাল ত্রুটি হচ্ছে তা রহস্যজনক। এটা অবশ্যই তদন্তের দাবি রাখে। দেশের প্রাইভেট এয়ারলাইন্সগুলো এত পুরোনো উড়োজাহাজ বছরের পর বছর ধরে নির্বিঘ্নে অপারেট করতে পারলে বিমান কেন পারছে না এটা একটা বড় প্রশ্ন। গত বছরের এপ্রিলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিমানের সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয় রক্ষণাবেক্ষণ খাতে। এ খাতে বিমানের বিভিন্ন যন্ত্রাংশসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কেনাকাটা হয়। এ ছাড়া মেরামতের জন্য উড়োজাহাজ বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়। এসব কেনাকাটার ক্ষেত্রে দরপত্রে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়। সাধারণত বিমানের বোর্ড পরিচালক ও কর্মকর্তারা নিজেরা লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে তাদের পছন্দমতো প্রতিষ্ঠানকে ঠিকাদার নিয়োগ করে কার্যাদেশ দেন। বিমানের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ও সরঞ্জাম কেনার ক্ষেত্রে শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়। নিম্ন মানের যন্ত্রাংশ অতি উচ্চমূল্যে ক্রয় দেখিয়ে ঠিকাদার ও নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের যোগসাজশে অর্থ আত্মসাৎ করা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে বলা হয় দুদকের ওই প্রতিবেদনে। মেইনটেন্যান্স ও ওভারহোলিং খাতে কেনাকাটার সময় আন্তর্জাতিক দরপত্রের নিয়ম সঠিকভাবে মানা হচ্ছে কিনা, তা পর্যালোচনা করতে একটি বিশেষজ্ঞ টিম গঠনের কথাও বলা হয় এতে। তবে সুপারিশের পর এখন পর্যন্ত এমন কোনো বিশেষজ্ঞ টিম গঠনের কথা জানা যায়নি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App