×

জাতীয়

‘সিটিং সার্ভিসের’ নামে গণপরিবহনে প্রতারণা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০১৯, ১১:২৮ এএম

‘সিটিং সার্ভিসের’ নামে গণপরিবহনে প্রতারণা

সড়কে নৈরাজ্য

পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের কাছে রাজধানীবাসী জিম্মি হয়ে পড়ছেন। নানান অজুহাতে ভাড়া বাড়িয়ে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। গেটলক, ডাইরেক্ট ও সিটিং সার্ভিসের নামে প্রতারণা অব্যাহত রেখেছে। ‘সিটিং সার্ভিসের নামে চিটিং’ এখন নগরবাসীর কাছে প্রবাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজধানীর ৯৬ ভাগ গণপরিবহন এখন সিটিংয়ের নামে চিটিং সার্ভিসের মাধ্যমে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে। এই প্রতারণার দায় মালিক-শ্রমিকরা একে অপরের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন। পুলিশ প্রশাসন বিষয়টিকে অবৈধ ও বেআইনি বলার পরও ‘ব্যবস্থা নেয়া হবে’ বলেই দায় সারছে। যাত্রীসেবা নিশ্চিত করার ব্যাপারে পুলিশের নেই কোনো মাথাব্যথা। সড়কে বিশৃঙ্খলা প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, রাজধানীসহ সারা দেশে সড়ক ও পরিবহন সেক্টরে বিশৃঙ্খলা রয়েছে। আমার এই মেয়াদে সড়ক ও পরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে ‘নাম্বার ওয়ান’ হিসেবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করব। যদিও এটা কঠিন, তবে অসম্ভব নয়। গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের কাছে এ কথা বলেন তিনি। ওবায়দুল কাদের বলেন, অবকাঠামো যতই উন্নত হোক, সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে না পারলে সফলতা আসবে না। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা দিয়েছি। এদিকে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, পরিবহন কোম্পানিগুলো ‘সিটিং সার্ভিস’ হিসেবে ঘোষণা দিয়ে ভাড়া ৫-১৫ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে আগের মতোই দাঁড়িয়ে যাত্রী নেয়া হচ্ছে। সব যাত্রী সমান হারে ভাড়া দিতে বাধ্য হচ্ছেন। অথচ লোকাল বাসের রুট পারমিট নিয়েই বাস রাস্তায় চলাচলের অনুমতি পেয়েছে। এক জরিপে দেখা গেছে এখন রাজধানীর ৯৬ শতাংশ বাস ‘সিটিং সার্ভিসে’ চলে। কিছু বাস সকালে অফিসের সময় ও বিকেলে ছুটির পর সিটিং সার্ভিসে এবং অন্য সময়ে ‘লোকাল বাস’ হিসেবে চলাচল করছে। এতে নগরবাসী ক্ষণে ক্ষণে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। আজিমপুর নিউমার্কেট থেকে মিরপুর রুটে চলাচলকারী বিকল্প পরিবহন, বিকাশ, রমজান, বিহঙ্গ, মেট্রো সার্ভিস, সেফটি, উইনার, ভিআইপি পরিবহনের সবগুলোই এখন ‘সিটিং সার্ভিস’ হিসেবে চলছে। মোহাম্মদপুর, মিরপুর, গাবতলী এমনকি সাভার থেকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতকারী পরিস্থান, প্রজাপতি, মিরপুর লিংক, রবরব, নূরে মক্কা, আকিক, চিটাগাং রোড থেকে ফ্লাইওভার হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে চলাচলরত রজনীগন্ধা, মনজিল, নিলাচল, ঠিকানা, লাব্বাইক, মনজিল, অনাবিল পরিবহন ও উত্তরা থেকে চলাচলরত সব বাস ‘সিটিং সার্ভিস’ রূপ ধারণ করে চলাচল করছে। ইচ্ছেমতো ভাড়া বাড়িয়েছে। তারপরও সব বাসেই প্রায় সমানসংখ্যক যাত্রী দাঁড়ানো অবস্থায় বহন করা হচ্ছে। ২০১৮ সালের ‘বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক জরিপে দেখা গেছে ৯৬ শতাংশ গণপরিবহনই ‘সিটিং সার্ভিস’ হিসেবে চলাচল করছে। সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক বলেন, নগরীর গণপরিবহনের স্বেচ্ছাচারিতা বেড়েই চলছে। গত এক বছরে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে। আইনগত ব্যবস্থা না নেয়ায় অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা কোনো নিয়মই মানছে না। সরকারের নিয়ম-নীতির কেউ তোয়াক্কা করে না। কোনো নীতিমালা না থাকায় রাজধানীর গণপরিবহনের নৈরাজ্য দূর হচ্ছে না। সিটিং সার্ভিসে বাস চলাচল নিয়ে মালিক-শ্রমিকরা একে অপরকে দোষারোপ করছে। মালিকরা বলছে শ্রমিকদের চাপের মুখে তারা সিটিং সার্ভিসে বাস চালাতে বাধ্য হচ্ছেন। মালিকরা শ্রমিকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। অপরদিকে শ্রমিকরা জানান, বেশি লাভের আশায় মালিকরাই সিটিং সার্ভিস হিসেবে বাস চালানোর নির্দেশ দিয়েছে। তাদের কথা না মানলে চাকরি থাকবে না। ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘সিটিং সার্ভিস’ নামের কোনো সার্ভিসের অনুমতি নেই। পরিবহন সেক্টরকে নিয়মের মধ্যে আনার জন্য আমরা একটি কমিটি করে কিছু সুপারিশমালা দিয়েছিলাম। সেটা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। বিআরটিএ-এর পরিচালক মাহবুব-ই-রব্বানী সিটিং সার্ভিসের বৈধতা নেই বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সিটিং সার্ভিসের নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পেলে ভ্রাম্যমাণ আদালত ব্যবস্থা নেয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মীর রেজাউল আলম জানান, আমরা বিষয়টি দেখব। আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App