×

জাতীয়

সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ে অবহেলিত জনগোষ্ঠী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮, ০১:৫৮ পিএম

সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ে  অবহেলিত জনগোষ্ঠী
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মাধ্যমে আগামী পাঁচ বছরে দারিদ্র্যের হার ১৩ শতাংশে নামিয়ে আনতে ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে একযোগে কাজ করছে সরকারের ২৮টি মন্ত্রণালয়। ১৪২টি কর্মসূচির মাধ্যমে সমাজের অবহেলিত, অক্ষম এবং নিঃস্ব জনগোষ্ঠীকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আনার জন্য কার্যক্রম পরিচালনা করছে ওই মন্ত্রণালয়গুলো। বর্তমানে এসব কর্মসূচির আওতায় রয়েছেন প্রায় ৭৮ লাখ অসহায় মানুষ। শিগগিরই এই সংখ্যা ১ কোটিতে পৌঁছাবে বলে আশা প্রকাশ করেছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এই কর্মসূচির আওতায় সরকার বয়স্ক, বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত নারী, প্রতিবন্ধী, দুস্থ ও দরিদ্র অন্তঃসত্ত¡া নারী, চা বাগানের শ্রমিক, হিজড়া, দলিত ও ভবঘুরে সম্প্রদায় এবং আর্থিকভাবে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে। এ ছাড়া দেশব্যাপী ওপেন মার্কেট সেল (ওএমএস), ভালনারেবল গ্রæপ ডেভেলপমেন্ট (ভিজিডি), ভালনারেবল গ্রæপ ফিডিং (ভিজিএফ), টেস্ট রিলিফ (টিআর), কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) এবং প্রোগ্রাম ফর ফ্রেন্ডলি ফুডের মতো অন্যান্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচিও পরিচালিত হচ্ছে। পাশাপাশি নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় মাসে ১০ লাখ অতিদরিদ্র নারীকে ৩০ কিলোগ্রাম করে চাল এবং আট লাখ অতিদরিদ্র মাকে মাতৃত্বকালীন ভাতা দিচ্ছে। এ ছাড়া মন্ত্রণালয় ৩৫ উপজেলাতে দরিদ্র মানুষের মাঝে পুষ্টিকর চাল বিতরণ করছে। সমাজসেবা বিভাগ (ডিএসএস) জানিয়েছে, চলতি বছর সরকার বয়স্ক ভাতা বাবদ ২ হাজার ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এ খাতে ৩৫ লাখ দরিদ্র মানুষ মাসে ৫০০ টাকা করে পাচ্ছেন। ১২ লাখ ৬৫ হাজার বিধবা বা স্বামী পরিত্যক্ত নারীর জন্য ৭৫৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এখান থেকে প্রত্যেক বিধবা নারী মাসে ৫০০ টাকা করে ভাতা পাবেন। ৮ লাখ ২৫ হাজার প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য ৬৯৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এখান থেকে প্রত্যেকে ৬০০ টাকা করে ভাতা পাবেন। ৮০ হাজার শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এ ছাড়া চলতি বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সব কর্মসূচির ভাতা ১০ শতাংশ হারে বাড়িয়েছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। এ ব্যাপারে সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ভোরের কাগজকে বলেন, বর্তমান সরকার অসহায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতা যাতে প্রকৃত উপকারভোগীর হাতে ঠিক সময়ে পৌঁছানো যায়, সেজন্য ডাটাবেজ তৈরির কথাও বলেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, আশা করছি অর্থ মন্ত্রণালয় বিষয়টি গ্রহণ করবে। কারণ বর্তমান সরকার গত ১০ বছরে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে। দেশের ১২ শতাংশ মানুষ এখনো অতিদরিদ্র, তবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার এই হারকে শূন্যের কাছাকাছি আনতে বদ্ধপরিকর। সংশ্লিষ্টরা জানান, জিডিপি প্রবৃদ্ধি, খাদ্যে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, প্রবাসী রেমিট্রন্স, তৈরি পোশাক খাতে বিপ্লব, মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার স্বপ্ন ুপূরণের মাধ্যমে পরিসর বাড়ছে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্য মোতাবেক বর্তমানে দেশে নির্ভরশীল মানুষের অনুপাত দাঁড়িয়েছে ৫৪ ভাগ। ২০০২ সালে যার অনুপাত ছিল ৮০ জন। ২০১১ সালে এই অনুপাত নেমে আসে ৬৮ দশমিক ৪ জন। গত পাঁচ বছর ধরে এই অনুপাত ঘুরপাক খাচ্ছে সাড়ে ৫৫ ভাগে। সরকারের নীতি-নির্ধারকদের মতে, দেশের বিরাট জনগোষ্ঠীকে অন্ধকারে রেখে ডিজিটাল বাংলাদেশের সম্পূর্ণ লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। জানতে চাইলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহেমদ পলক ভোরের কাগজকে বলেন, ১৬ কোটি মানুষকে নিয়েই ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নপূরণ। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা, সংবিধানের আলোকেই আওয়ামী লীগের রূপকল্প-২০২১। ডিজিটাল বাংলাদেশের ভিশনেই অসাম্য, বঞ্চনা ও দারিদ্র্যদূরীকরণ এবং সবার জন্য সমান মর্যাদা নিশ্চিতে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এসব দিক বিবেচনায় রেখে আগামী এক বছরের মধ্যে প্রায় দেড় কোটি মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এ ব্যাপারে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, দেশের দুস্থ, অবহেলিত, সমস্যাগ্রস্ত, পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর কল্যাণে আমরা নানা ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম ক্রমান্বয়ে জোরদার করছি। এ ধারা আমরা আগামীতেও অব্যাহত রাখব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App