×

জাতীয়

নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রোহিঙ্গাদের হাতে হাতে মোবাইল ফোন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০১৮, ১২:৪০ পিএম

নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রোহিঙ্গাদের হাতে হাতে মোবাইল ফোন
কক্সবাজারে আশ্রিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশি অপারেটরদের সিম ব্যবহার বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার কথা বারবারই জানিয়েছে সরকার। কিন্তু রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অনেকেরই হাতে, জামার পকেটে এবং লুঙ্গির গাঁটে মোবাইল নিয়ে ঘুরছে। নারীরাও মোবাইল ব্যবহার করছেন। প্রয়োজনে প্রকাশ্যেই মোবাইল বের করে কথা বলছেন। আইফোনসহ বিভিন্ন দামি ব্র্যান্ডের মোবাইল সেটে তারা কথা বলেন। তবে বাইরে থেকে কেউ গিয়ে মোবাইল ব্যবহার করছে কি না জানতে চাইলে তারা তা অস্বীকার করেন। কিন্তু সরেজমিন দেখা গেছে, ক্যাম্পের ভেতরেও গড়ে উঠেছে মোবাইল সার্ভিসিংয়ের দোকান। ক্যাম্পের পুরুষ সদস্যরাই এই দোকান পরিচালনা করছেন। মধুরছড়া ক্যাম্পের বাসিন্দা মো. ইউনুস। তিনি মোবাইল সার্ভিসিংয়ের কাজ করেন। ইউনুস জানান, মিয়ানমার থাকতেও তিনি এ কাজ করতেন। দৈনিক সেখানকার টাকায় ৮-১০ হাজার টাকা আয় হতো তার। এখন ক্যাম্পে তার আয় হচ্ছে দৈনিক ৪০০ টাকা। তার টং দোকানে সৌরবিদ্যুৎ পরিচালিত বাল্ব, মোবাইলের হেড ফোন, বৈদ্যুতিক তারও পাওয়া যায়। ময়নার ঘোনা ক্যাম্পের বাসিন্দা রহমতউল্লাহও মোবাইল সার্ভিসিংয়ের কাজ করেন। তিনি জানান, ক্যাম্পে দৈনিক গড়ে চার থেকে পাঁচশ টাকা রোজগার হয় তার। তা দিয়েই তার সংসার চলে। ইউনুস ও রহমত উভয়েই জানান, বাইরের কাস্টমার তারা পান না, ক্যাম্পের সদস্যরাই তাদের কাস্টমার। বিভিন্ন ক্যাম্পের কয়েকজন মাঝি (প্রধান) এবং বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা মোবাইল কোম্পানি রবি ও বাংলালিঙ্কের সিম ব্যবহার করছেন। দেড়শ থেকে দুইশ টাকার বিনিময়ে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তারা এই সিম কিনছেন। ক্যাম্পের কয়েক জন বাসিন্দা জানান, বর্ডারেও বাংলাদেশি সিম কিনতে পাওয়া যায়। সেখানেও ভালো নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়। সিম তুলতে কোনো প্রকার কাগজপত্র লাগে না। স্থানীয়দের অভিযোগ, এলাকার কিছু স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি অর্থের বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি সিম তুলে দিচ্ছে। নাফ নদীর উপক‚লে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি মোবাইল অপারেটরের নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়। অনেকে মিয়ানমারে বসেও বাংলাদেশের সিম ব্যবহার করেন। ক্যাম্পের ঘরে বসেই মোবাইলে কথা বলছিলেন হুসনে বানু (৪৫)। প্রতিবেদককে ঘরে ঢুকতে দেখেই তিনি মোবাইল লুকিয়ে ফেলেন। মোবাইল কোথায় পেয়েছেন জানতে চাইলে তিনি কোনো কথা বলেননি। ৫নং পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের সিম চালু করার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র এবং বায়োমেট্রিক তথ্য দেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তা সত্ত্বেও রোহিঙ্গাদের অনেকেই স্থানীয়ভাবে সিম কিনে মোবাইল ফোন ব্যবহার করছেন। এ ধরনের নিবন্ধিত সিমসহ কয়েক জনকে আটকও করেছে স্থানীয় পুলিশ। যারা সিম বিক্রি করছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াসহ সিম ব্যবহার বন্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার কথাও শুনেছি। কিন্তু কোনো কিছুই হচ্ছে না। আমি মনে করি, এতে আমাদের দেশের জন্য ঝুঁকি বাড়ছে। এদিকে গত ১০ অক্টোবর রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যেন মোবাইল নেটওয়ার্ক সুবিধা না পায় সেজন্য অপারেটরগুলোকে ব্যবস্থা নিতে বলেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোকে এ বিষয়ে নির্দেশনা-সংক্রান্ত চিঠিও পাঠিয়েছে বিটিআরসি। ওই চিঠিতে বলা হয়, ২০১৬ সালে মোবাইল কোম্পানিগুলোর নেটওয়ার্ক কাভারেজ কক্সবাজার সীমান্তের জিরো লাইনের মধ্যে রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। এরপর ২০১৭ সালে উদ্ভ‚ত পরিস্থিতি এবং রাষ্ট্রীয় গুরুত্ব বিবেচনায় কক্সবাজার এবং উখিয়া এলাকায় অস্থায়ীভাবে বিটিএস স্থাপনের অনুমতি দেয়া হয়। এ ছাড়া সীমান্তবর্তী এলাকা এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সিম বিক্রির ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। বায়োমেট্রিক নিবন্ধন ছাড়া সিম বিক্রির কোনো সুযোগ নেই উল্লেখ করে চিঠিতে জানানো হয়, বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থা বর্তমানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিভিন্ন সিম বিক্রি ও ব্যবহারের তথ্য পেয়েছে। চিঠিতে অপারেটরগুলোকে মোবাইল নেটওয়ার্ক যেন মিয়ানমার পর্যন্ত না পাওয়া যায় এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মোবাইল নেটওয়ার্ক সুবিধা বন্ধ করে বিটিআরসিকে জানাতে বলা হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App