×

জাতীয়

নারীত্বের বন্দনাঅষ্টমীর কুমারী পূজায়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০১৮, ১১:২৩ এএম

নারীত্বের বন্দনাঅষ্টমীর কুমারী পূজায়
অশুভ শক্তির নাশ করে বিশ্বজুড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় গতকাল বুধবার মহাষ্টমীতে দেবী দুর্গার পায়ে অঞ্জলি দিয়েছেন ভক্তরা। প্রতিবারের মতো এ বছরও একই মণ্ডপে মাতৃরূপে পূজিতা হলেন কুমারী। রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনে অনুষ্ঠিত হয়েছে কুমারী পূজা। শারদীয় দুর্গোৎসবের চতুর্থ দিন আজ বৃহস্পতিবার মহানবমী। মহানবমী পূজা শুরু হবে সকাল সাড়ে ৬টায়। সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হবে আরতি প্রতিযোগিতা। আজ মণ্ডপে মণ্ডপে প্রধান আকর্ষণ থাকবে আরতি প্রতিযোগিতা। রাতকে উজ্জ্বল করে ভক্তরা মেতে উঠবেন নানা ঢঙে আরতি নিবেদনে। একই সঙ্গে দিনভর চলবে চণ্ডী পাঠ। থাকবে ভক্তদের কীর্তনবন্দনা। গতকাল ভোর থেকেই সনাতন ধর্মাবলম্বীরা জড়ো হতে থাকেন রামকৃষ্ণ মিশনসহ বিভিন্ন মণ্ডপে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়তে থাকে। এক সময় ভিড়ে মঠ ও মিশনের মূল গেট পর্যন্ত চলে আসে। এ সময় মন্দিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে পুলিশ ও র‌্যাব নিয়োজিত ছিল। রামকৃষ্ণ মিশনে অষ্টমী পূজা শুরু হয় সকাল ৬টায়। সকাল ১১টার কিছু পর কুমারী দেবীকে আসনে বসানো হয়। এবার কুমারী দেবীরূপে মণ্ডপে অধিষ্ঠিত হন মিতালী চক্রবর্তী। হাজারো ভক্ত দেবী দুর্গা ও কুমারী মাকে জয়ধ্বনি, উলুধ্বনি দিয়ে বরণ করে নেন। কুমারীর বাবার নাম কালী প্রসাদ চক্রবর্তী। মায়ের নাম সুচিত্রা চক্রবর্তী। তার জন্ম ২০১১ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর। মিতালী চক্রবর্তীর বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার খাবাশপুর গ্রামে। সে খাবাশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী। মিতালীর বয়স ৮, তাই শাস্ত্রানুযায়ী এবারের কুমারীর নাম ‘কুব্জিকা’। কেন কুমারী পূজা করা হয় এ সম্পর্কে শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস দেব বলেছেন, শুদ্ধাত্মা কুমারীতে ভগবতীর বেশি প্রকাশ। কুমারী পূজার মাধ্যমে নারী জাতি হয়ে উঠবে পুতপবিত্র ও মাতৃভাবাপন্ন। প্রত্যেকে শ্রদ্ধাশীল হবে নারী জাতির প্রতি। ১৯০১ সালে ভারতীয় দার্শনিক ও ধর্মপ্রচারক স্বামী বিবেকানন্দ সর্বপ্রথম কলকাতার বেলুড় মঠে নয়জন কুমারী পূজার মাধ্যমে এর পুনঃপ্রচলন করেন। তখন থেকে প্রতিবছর দুর্গাপূজার অষ্টমী তিথিতে এ পূজা চলে আসছে। সকালে কুমারী কুব্জিকাকে স্নান করিয়ে নতুন কাপড় পরানো হয়। মাথা ও গলায় ফুলের মালা, অলংকার ও প্রসাধনে নিপুণ সাজে সাজিয়ে তোলা হয় তাকে। এরপরই কুমারী মাকে মন্ত্র পাঠ করে গঙ্গাজল ছিঁটিয়ে শরীর মন শুদ্ধ করে মাতৃজ্ঞান রূপে পূজা করা হয়। ১৬টি উপকরণ দিয়ে কুমারী পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। অগ্নি, জল, বস্ত্র, পুষ্প ও বাতাস- এ পাঁচটি উপকরণ দিয়ে কুমারীকে পূজা করা হয়। কুমারীকে সিংহাসনে বসানোর সময় অসংখ্য পুণ্যার্থী সমস্বরে ‘দুর্গা মায় কি জয়’, ‘কুমারী মায় কি জয়’ বলে ধ্বনি দিতে থাকেন। কুমারী পূজা সম্পন্ন হলে ভক্তরা মাকে প্রণাম করেন। কুমারী পূজা শেষে ভক্তরা দেবী দুর্গার পায়ে অঞ্জলি নিবেদন করেন। অঞ্জলি শেষে হাজার হাজার ভক্ত দর্শনার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা হয় মহাপ্রসাদ। অষ্টমী পূজা ছাড়াও রাতে অনুষ্ঠিত হয় সন্ধি পূজা। অষ্টমীর শেষ নবমীর শুরুর সন্ধিক্ষণে অনুষ্ঠিত হয় সন্ধি পূজা। যেসব মণ্ডপে কুমারীপূজা হয় সেখানে একইদিনে অনুষ্ঠিত হয়েছে তিনটি পূজা। দিনের বেলা অষ্টমী বিহিতপূজা আর কুমারীপূজা পরে সন্ধি পূজা। গতকাল সকালে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির কেন্দ্রীয় পূজামণ্ডপে দেবীর মহাষ্টমী বিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে অনুষ্ঠিত হয় সন্ধি পূজা। গতকাল দুপুরে বিভিন্ন মণ্ডপ ও মন্দিরে বিতরণ করা হয় মহাপ্রসাদ। সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় আরতি। গতকাল দুপুরের পর থেকে মণ্ডপগুলোতে ঢল নামে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের। শুধু হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাই নন, সব ধর্মের দর্শনার্থীরাই মণ্ডপে মণ্ডপে প্রতিমা দেখতে ভিড় করেন। পূজাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা মেলায়ও ভিড় করেন দশনার্থীরা। এদিকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, মন্ত্রী, সংসদ সদস্যরাও নগরীর বিভন্ন মণ্ডপ পরিদর্শন করেছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App