×

জাতীয়

দুঃখ ভুলিয়েছে পূজার আনন্দ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০১৮, ১২:৫১ পিএম

দুঃখ ভুলিয়েছে পূজার আনন্দ
সকাল থেকেই থেমে থেমে ঢাক ঢোল ও ঝুমুর বাজছে হিন্দু রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। এই বাজনা ক্যাম্পের বাসিন্দাদের একঘেয়ে জীবনে এনেছে এক নতুন ছন্দ। সাউন্ড সিস্টেমে বাজছে গান। সেই গানের তালে তালে নিজেদের মতো ছন্দে নাচছে ক্যাম্পের শিশুরা। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রতিটি ঘরে সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে বাতি জ্বললেও সেই বাতি খুব একটা আলো ছড়ায় না। কিন্তু দুর্গাপূজাকে ঘিরে অসংখ্য আলো জ্বলছে এই ক্যাম্পে। লাল-নীল-সবুজ-হলুদ রঙের ছোট বড় আলোর বল নেচে বেড়াচ্ছে পুরো মণ্ডপ জুড়ে। প্রতিমার মুখে সেই আলোর ছটা যেন প্রতিমার সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। তা দেখে নেচে উঠছে ক্যাম্পের শিশুরা। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ক্যাম্পের মণ্ডপের পাশেই বসানো হয়েছে জেনারেটর। জেনারেটরের শব্দটাও যেন ওদের কানে ঢাকের বাদ্যির মতো মধুর লাগছে। ক্যাম্পের অনেকেই গতকাল দেবীর পায়ে অঞ্জলি দিয়েছেন। জানিয়েছেন মনের আর্জি। পূজার জন্য কক্সবাজারের কার্তিক ব্যান্ডপার্টি থেকে আনা হয়েছে ঢাকি। তারা বাজাচ্ছেন ঢাকা-ঢোল, ঝুমুর ও সানাই। তিনজন পুরোহিত পূজার কাজ করছেন। কক্সবাজার রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম থেকে প্রধান পুরোহিত হিসেবে আনা হয়েছে বিজয় চক্রবর্তীকে। তন্ত্রপাঠ করছেন কুতুপালং পশ্চিম পাড়ার লোকনাথ মন্দিরের পুরোহিত চন্দন চক্রবর্তী। এ ছাড়া, সহযোগী হিসেবে রয়েছেন নিরঞ্জন রুদ্র। মণ্ডপের এক প্রান্তে বসে সুর করে জাগরণ পুঁথি পাঠ করছিলেন ক্যাম্পের দুই নারী ও পুজারি। ক্যাম্পের বাসিন্দারা জানান, মিয়ানমারেও পূজা হতো। তবে সেখানে প্রতিমা তৈরির কারিগর না থাকায় ঘট পূজা হতো। বেশ কয়েক বছর পর তারা প্রতিমা পূজা দেখছেন। পূজা উপলক্ষে গত সোমবার ক্যাম্পের সদস্যদের মাঝে বিতরণ করা হয় বস্ত্র। সবার পরনেই ছিল নতুন শাড়ি। শিশুরা পড়েছিল নতুন জামা। ক্যাম্পের বাসিন্দা জ্ঞানদা ও বিলাসী পাল জানান, এক বছর পর পূজা করতে পেরে ভীষণ খুশি তারা। ১২ অক্টোবর কুতুপালং হাসপাতালে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন বুধু বালা (২০)। প্রথম সন্তান মেয়ে হওয়ায় বুধু বালা ও নিতাই দম্পতি বেশ খুশি। মেয়ের জন্মের বছরই ক্যাম্পে পূজা হচ্ছে এতে যেন তাদের আনন্দের মাত্রা একটু বেশি। বুধু বালার মা সোনাবালা রুদ্র বলেন, আমার নাতনি ভাগ্যবতী। মায়ের আশীর্বাদেই তার জন্ম হয়েছে এবং তার জন্মের বছরই ক্যাম্পে প্রথমবারের মতো পূজা হচ্ছে। ৭ অক্টোবর ক্যাম্পেই আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে হয় গোপাল-রিমা শীল ও রাদিশ-বিশু দত্তের। বিয়ের পর এবারই এই দুই দম্পতির প্রথম পূজা। অভাবের সংসারেও পূজার এই আনন্দ যেন একটু বেশিই তাদের কাছে। রিমা ও বিশু জানায়, খুব দামি নয় কিন্তু তাদের বর পূজা উপলক্ষে তাদের কিনে দিয়েছে নতুন শাড়ি। এই শাড়ি পড়েই দেবীর পায়ে অঞ্জলি দেবেন তারা। পূজাকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পের ভেতরেই বসেছে ছোট ছোট দোকান। ক্যাম্পের শিশুরা চানাচুর, চকলেট, জুস, কোলড্রিংকস, আচার, বেলুন, বিভিন্ন খেলনা নিয়ে বসেছিল। মণ্ডপের একটু দূরে খেলনা, চুড়ি, ফিতা, ক্লিপ, কানের দুল ও গলার মালা নিয়ে বসেছিল একটি দোকান। সেখানেও দেখা গেছে মেয়ে শিশুদের জটলা। এসব দোকানে বিক্রিও মন্দ নয়। গতকাল কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন ক্যাম্পের পূজাম পরিদর্শন করেন। ক্যাম্পের ১০২ পরিবারের মাঝে তিনি সরকারের পক্ষ থেকে শাড়ি, লুঙ্গি এবং চাল, ডাল, তেল বিতরণ করেন। এ সময়, কক্সবাজার জেলার পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুম হোসেন, থানা নির্বাহী কর্মকর্তা নিকারুজ্জামান চৌধুরী, সহকারী ভ‚মি কমিশনার একরামুল সিদ্দিক, রাজাপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবীর চৌধুরী, জেলার পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি এডভোকেট রঞ্জিত দাস ও সাধারণ সম্পাদক বাবুল শর্মা, উখিয়া পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি স্বপন শর্মা রনি ও সাধারণ সম্পাদক রবীন্দ্র দাশ, রাজাপালং ইউনিয়নের পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জয়ধন ঘোষ ও সাধারণ সম্পাদক সজল কান্তি ধর এবং ক্যাম্পের মাঝি (প্রধান) সুমন্ত রুদ্র উপস্থিত ছিলেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App