×

জাতীয়

ঢাকঢোল আর কাঁসার বাদ্যে মুখর পূজামণ্ডপ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০১৮, ১১:০৩ এএম

ঢাকঢোল আর কাঁসার বাদ্যে মুখর পূজামণ্ডপ
হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শ্রী শ্রী শারদীয় দুর্গাপূজার আজ মহাঅষ্টমী। দুর্গতিনাশিনী দেবী মা দুর্গা মহাঅষ্টমী তিথিতে নবরূপে ধরায় অধিষ্ঠিত হয়েছেন। স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে অধিষ্ঠিত দেবীকে নানা উপাচারে আরাধনার মাধ্যমে সব অনাচার দূর করা, সংকট মোচন এবং বিশ্ববাসীর শান্তি কামনায় ভক্তরা প্রার্থনা করেন। আজ সকাল ৯টা ৫৭ মিনিট ১৩ সেকেন্ডের মধ্যে দেবী দুর্গার মহাঅষ্টমী বিহীত পূজা, কল্পরম্ভ। পূজা শেষে প্রতিটি মন্দির ও পূজামণ্ডপ ভক্তরা দেবীর চরণে পুষ্পাঞ্জলি দেবেন। যেসব মন্দির বা পূজামণ্ডপ উৎসবমুখর ভক্তদের ভিড় বেশি থাকবে সেসব পূজামণ্ডপ একাধিকবার অঞ্জলি দেয়ার ব্যবস্থা থাকবে। অঞ্জলি প্রদান শেষে ভক্তদের মাঝে মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হবে। মহাঅষ্টমী ও মহানবমীর তিথির সংযোগ সময়ে সন্ধিপূজার মধ্য দিয়ে শেষ হবে ‘মহাঅষ্টমী’। ষোড়শ উপাচারে দেবীর বিহিত পূজা ও সন্ধি পূজা অনুষ্ঠিত হবে। অষ্টমী তিথির শেষ ২৪ মিনিট ও নবমী তিথির প্রথম ২৪ মিনিট নিয়ে মোট ৪৮ মিনিট ধরে সন্ধি পূজা চলবে। এই সন্ধি পূজার সময় দুর্গাদেবীকে চণ্ডীরূপে বা কালীরূপে পূজা করা হয়। হিন্দু ধর্মীয় পুরাণ মতে, এই সন্ধিক্ষণেই অবতার শ্রী রামচন্দ্রের হাতে রাবণ বধ হয়। অষ্টমীতেও সপ্তমীপূজার মতো বিশেষ পূজা মহাস্নান অনুষ্ঠিত হবে। আজও নগরীর বিভিন্ন মন্দির ও পূজামণ্ডপ প্রাঙ্গণে ভক্তিমূলক গান, পদাবলি কির্তন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। আজ কুমারী পূজা : শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাঅষ্টমীতে আজ ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনে জাঁকজমকপূর্ণভাবে ‘কুমারী পূজা’ অনুষ্ঠিত হবে। আজকের দিনের প্রধান আকর্ষণ থাকবে কুমারী পূজা। কুমারী পূজার জন্য মাতৃভাবের পবিত্রতার প্রতীক অল্পবয়সী একটি মেয়েকে কুমারী হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে। তাকেই দেবী দুর্গার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আজ মাতৃরূপে ফুল, চন্দন, বেলপাতা, তুলশী পাতা দিয়ে তারই পূজা করা হবে। তবে প্রথা ও নিরাপত্তার কারণে মেয়েটির নাম ও পরিচয় পূজা শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রকাশ করা হয় না বলে রামকৃষ্ণ মিশন সূত্রে জানা গেছে। মহাঅষ্টমী ও কুমারী পূজার কারণে আজ রামকৃষ্ণ মিশনে প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার ভক্ত ও দর্শনার্থীর সমাগম ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে। পূজা শেষে দুপুরে মহাপ্রসাদ পরিবেশন করা হবে। মহাসপ্তমী পালিত : ওদিকে গতকাল মঙ্গলবার ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে মহাসপ্তমী উদযাপিত হয়েছে। প্রতিটি পূজামণ্ডপ ধুপ-ধূনো, বেল-তুলসি আসন, বস্ত্র, নৈবেদ্য, পুষ্পমাল্য, চন্দনসহ ১৬টি উপাচার দিয়ে দেবী দুর্গাকে পূজা করা হয়। ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার চক্ষুদান করা হয়। সব পূজামণ্ডপে দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গার আশীর্বাদ চেয়ে ভক্তরা অঞ্জলি প্রদান করেন। এরপর মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হয়। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের পুরোহিতরা জানিয়েছেন, মহাসপ্তমীর সকালে প্রথমেই চক্ষুদানের মধ্য দিয়ে ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হয়। পুরাণ মতে, মহাসপ্তমীতে ভক্তদের কল্যাণ ও শান্তির আশীষ নিয়ে পূজার পিঁড়িতে বসেন হিমালয় নন্দিনী দেবী দুর্গা। দেহ শুদ্ধি, অঙ্গ শুদ্ধি সেরে শুরু হয় পূজা অর্চনা। বেজে ওঠে ঢাক-ঢোল, খোল-কাঁসাসহ বিভিন্ন ধরনের বাদ্য-বাজনা। পূজামণ্ডপগুলো শঙ্খধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে। শঙ্খ ও জয়ধ্বনির মধ্য দিয়ে গতকাল সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটের মধ্যে দেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ, স্থাপন, সপ্তম্যাদি কল্পারম্ভ ও সপ্তমী বিহীত পূজা সম্পন্ন হয়। এরপর ভক্তরা অঞ্জলি নিবেদন করেন। পূজা শেষে দুপুরে দুস্থদের মাঝে বস্ত্র ও ভক্তদের মাঝে মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হয়। সন্ধ্যায় আবারো পূজা অর্চনা ও প্রসাদ বিতরণের মধ্য দিয়ে মহাসপ্তমীর পূজা সমাপ্ত হয়। রাতে দেবীর অর্ধরাত্র বিহিত পূজা সম্পন্ন হয়েছে। মহাসপ্তমীতে ঢাক-ঢোল, কাঁসর-ঘণ্টা ও জয়ধ্বনির মুহুর্মুহু শব্দ আর ভক্তদের পূজা অর্চনায় পূজামণ্ডপগুলো মুখরিত হয়ে ওঠে। আনন্দে, ভক্তিতে মাতোয়ারা ভক্তরা ধূপদানি নিয়ে নেচে নেচে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করে দেবী দুর্গাকে। নগরীর প্রতিটি পূজামণ্ডপ ঘিরে আনন্দঘন পরিবেশ দেখা গেছে। পূজামণ্ডপগুলোর সামনে ভক্তদের ভিড় লক্ষ করা গেছে। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন, সিদ্ধেশ^রী কালি মন্দির, রমনা কালি মন্দির, জগন্নাথ হল পূজামণ্ডপের সামনে সবচেয়ে বেশি ভিড় হয়েছে। এ ছাড়া শাঁখাড়িবাজার, লক্সীবাজার এলাকার পূজামণ্ডপগুলোতেও অসংখ্য মানুষের ভিড় দেখা গেছে। সব পূজামণ্ডপের সামনেই নানা জিনিসপত্রের পসরা সাজিয়ে বসেছে দোকানিরা। এসব এলাকার রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজট নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে হিমশিম খেতে দেখা যায়। সব পূজামণ্ডপেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য ও পূজা কমিটির নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবকসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখা গেছে। বিশেষ আয়োজন ছিল ঢাকেশ^রী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনের মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির মণ্ডপে। মন্দির থেকে পলাশী মোড় পর্যন্ত উৎসবের আমেজ ছাড়িয়ে পড়ে। পুরো এলাকা কঠোর নিরাপত্তার চাদরে ঘিরে ফেলা হয়। র‌্যাব-পুলিশের সতর্ক নজরদারি ছিল সর্বত্র। রামকৃষ্ণ মিশন এলাকায়ও মেলা বসেছে। মাইকে বাজছে ভক্তিমূলক গান। মেলার দোকানগুলোতে সাদা ও রক্ত চন্দন, তুলসীর মালা, সিঁদুর, তিলক, পূজার থালা-গ্লাস, ঘণ্টা, পঞ্চপ্রদীপ, ধর্মীয় বই, মিষ্টান্ন দ্রব্য ও গৃহসজ্জার নানা সামগ্রী শোভা বাড়িয়েছে। গুলশান-বনানী সার্বজনীন পূজা পরিষদ এবারো অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত গুলশান-বনানী সার্বজনীন দুর্গাপূজার আয়োজন করেছে। রমনা কালীমন্দির ও মা আনন্দময়ী আশ্রমের পূজামণ্ডপে উৎসবের আমেজ দোয়েল চত্বর থেকে বাংলা একাডেমি হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। ঢাকেশ্বরী মন্দিরকে প্রধানমন্ত্রীর দেড় বিঘা জমি দান : ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরকে দেড় বিঘা জমি দেয়ার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণার বিষয়টি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে আলোচনায় স্থান পেয়েছে। প্রায় আটশ বছরের পুরনো এই জাতীয় মন্দিরের দেড় বিঘা জমির মালিকানা নিয়ে ৬০ বছর ধরে জটিলতা চলে আসছিল। গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানাতে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে আসেন। এ সময় তিনি এই জটিলতার অবসান ঘটিয়ে জমির মালিকানা ঢাকেশ্বরী মন্দিরকে দেয়ার ঘোষণা দেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এ বিষয়টিকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে দুর্গাপূজার উপহার বলে মনে করছেন। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল চ্যাটার্জি বলেন, জমি নিয়ে প্রায় ৬০ বছরের একটা জটিলতা ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পূজা উপলক্ষে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে এসে দেড় বিঘা জমি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উপহার দিয়েছেন। আমাদের জন্য এটা এবারের দুর্গাপূজার সেরা উপহার বলে মনে করছি। ধারণা করা হয় সেন রাজবংশের রাজা বল্লাল সেন দ্বাদশ শতাব্দীতে ঢাকেশ্বরী মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App