×

জাতীয়

একাত্তরের জননী রমা চৌধুরী শঙ্কামুক্ত নন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০১৮, ১১:২১ এএম

একাত্তরের জননী রমা চৌধুরী শঙ্কামুক্ত নন
মুক্তিযোদ্ধা লেখিকা ‘একাত্তরের জননী’ হিসেবে পরিচিত সাহিত্যিক মুক্তিযোদ্ধা রমা চৌধুরীর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল থাকলেও তিনি এখনো শঙ্কামুক্ত নন। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় স্থানান্তর করা জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। গত শনিবার বিকেলের দিকে তার শারীরিক অবস্থা অবনতি ঘটলে তাকে চমেক হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। এদিকে তার চিকিৎসার ব্যয় নির্বাহ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তার স্বজনদের। শারীরিক নানা জটিল ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ায় হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে পারছেন না রমা চৌধুরীর পরিবারের স্বজনরা। পরিবারের স্বজনরা বলছেন, একাত্তরের বীরাঙ্গনা সাহিত্যিক রমা চৌধুরীর শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর পড়ে গিয়ে সেই যে কোমর ভেঙেছে তার এরপর থেকেই তিনি বিভিন্ন ক্লিনিক এবং এখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছেন শয্যাশায়ী। প্রচন্ড অর্থাভাবে থাকার পরও কখনো কারো কাছে সাহায্যের আবেদন জানাননি তিনি। তার চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ করাটা পরিবারের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে। মায়ের চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে রমা চৌধুরীর বেঁচে থাকা একমাত্র পুত্র জহর লাল চৌধুরী ভোরের কাগজকে বলেন, আমার মায়ের সংগ্রামী জীবনকথা শুনে বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার মায়ের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। এখন রমা চৌধুরী মৃত্যুর মুখোমুখি। পরিবারের পক্ষে চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ খবর হয়তো প্রধানমন্ত্রী জানেন না। জানলে নিশ্চয়ই আমার মায়ের (রমা চৌধুরী) চিকিৎসার জন্য সহযোগিতা করতেন। আমি অনুরোধ করব যেন আমার মায়ের চিকিৎসায় সবাই এগিয়ে আসেন। রমা চৌধুরীর সহকারী ও বইয়ের প্রকাশক আলাউদ্দীন খোকন ভোরের কাগজকে বলেন, আর্থিক অনটন ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবে জীবন সংগ্রামী রমা চৌধুরীর শরীরে বাসা বেঁধেছে নানা ধরনের রোগ। তার পিত্তথলিতে পাথর আছে, বয়সের জন্য যেটি অপসারণ করা যাচ্ছে না। এ ছাড়া তিনি ডায়াবেটিস, রক্তশূন্যতা, অ্যাজমা, পেটে ক্ষত, হৃদরোগ এবং উচ্চ রক্তচাপেও ভুগছেন। চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি কখনো কারো কাছ থেকে কিছু চাননি। কিন্তু এ অবস্থায় তার চিকিৎসার জন্য সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের এগিয়ে আসা জরুরি। প্রসঙ্গত, ৭৮ বছর বয়সী রমা চৌধুরী একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে নির্যাতিতই শুধু হননি, সে সময় হারিয়েছেন তার দুই শিশু পুত্রকে। এরপর ১৯৯৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর ছোট ছেলের মৃত্যু হয় এক সড়ক দুর্ঘটনায়। পুত্রদের মৃত্যুর পর তিনি তাদের হিন্দু ধর্মমতে দাহ না করে মাটিতেই সমাহিত করেছিলেন এবং তারপর থেকে পায়ে আর জুতা তোলেননি দুঃখিনী এই মা। খালি পায়ে হেঁটে হেঁটে বই বিক্রি করেই চলেছেন তিনি এতদিন। ২০১৩ সালের ২৭ জুলাই এই বীরাঙ্গনাকে গণভবনে ডেকে নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় প্রধানমন্ত্রী রমা চৌধুরীর সঙ্গে একান্তে আধাঘণ্টা কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বীরাঙ্গনার কাছে জানতে চেয়েছিলেন, তার কী প্রয়োজন? উত্তরে রমা শুধু বলেছিলেন, আমার কিছু প্রয়োজন নেই। প্রধানমন্ত্রী রমা চৌধুরীর আত্মসম্মান দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন। এ সময় রমা তার লেখা বই ‘একাত্তরের জননী’ প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেন। ১৯৪১ সালে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার পোপাদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন রমা চৌধুরী। ষাটের দশকে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে মাস্টার্স করা রমা চৌধুরী দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রথম নারী স্নাতকোত্তর (এমএ)। সন্তান হারানোর তীব্র যন্ত্রণা আর সীমাহীন দারিদ্র্য সঙ্গী করে কেটেছে তার সংগ্রামী জীবন। দীর্ঘ ১৬ বছর তিনি বিভিন্ন উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব পালন শেষে লেখালেখিকে পেশা হিসেবে নেন তিনি। প্রবন্ধ, উপন্যাস ও কবিতা মিলিয়ে এ পর্যন্ত ১৯টি গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন এই জীবন সংগ্রামী নারী।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App