×

জাতীয়

অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘটে অচল দেশ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ আগস্ট ২০১৮, ১০:৫৫ এএম

অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘটে অচল দেশ
নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের মধ্যে অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘটে অচল হয়ে পড়েছে সারা দেশ। সড়কে পরিবহন ভাঙচুর, শ্রমিকদের ওপর হামলার প্রতিবাদ ও তাদের নিরাপত্তার দাবিতে হঠাৎ করে গতকাল শুক্রবার রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে শ্রমিকরা ধর্মঘট শুরু করে। এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর রাজধানীর অন্যান্য বাস টার্মিনাল থেকেও আন্তঃজেলায় বাস যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ঢাকার বাইরে থেকেও দূরপাল্লার কোনো বাস রাজধানীতে প্রবেশ করেনি। তবে পরিবহন মালিকরা বলছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বাস চলাচলও স্বাভাবিক হবে। গতকাল রাত ৯টার পর রাজধানীর বেশ কয়েকটি টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার গাড়িও ছেড়ে গেছে বলে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সমিতির প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। নিরাপদ সড়কসহ ৯ দফা দাবিতে আন্দোলনের পঞ্চম দিনে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেন। তাদের সঙ্গে অভিভাবকরাও রাজপথে শামিল হন। শুক্রবার রাজধানীর ধানমন্ডি, শাহবাগ, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, মিরপুরসহ বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে গাড়ি থামিয়ে চালকদের লাইসেন্স দেখেন। এ পরিস্থিতিতে গতকাল রাজধানীর রাজপথ ছিল প্রায় গণপরিবহনশূন্য। গতকাল সকাল থেকে নগরীতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল। কিন্তু বিআরটিসির বাস ছাড়া কোনো গণপরিবহন রাজধানীর রাস্তায় ছিল না। ফলে ছুটির দিনে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষদের রিকশা ও অটোরিকশায় দ্বিগুণ ভাড়া গুনতে হয়েছে। তবে পায়ে হেঁটেই বেশির ভাগ মানুষকে গন্তব্যে গিয়েছেন। এদিকে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনের বিপরীতে এবার পরিবহন শ্রমিকরাও রাস্তায় নেমেছেন। বাসে ভাঙচুর, শ্রমিকদের ওপর হামলা এবং চালকদের নিরাপত্তার দাবিতে পরিবহন শ্রমিকরা শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের সামনের সড়ক অবরোধ ও ধর্মঘট পালন করেছে। এ সময় তারা অর্ধশতাধিক বাস চলাচলে বাধা দেয়। ধর্মঘটের ফলে সায়দাবাদ টার্মিনাল থেকে আন্তঃনগর সিটি সার্ভিস ও দূরপাল্লার কোনো বাস ছাড়েনি। এতে যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। গতকাল শুক্রবার বিকেলে মহাখালী বাস টার্মিনালে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেছেন, শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনকে আমরা সমর্থন করি। কিন্তু সড়কে আমাদের কোনো নিরাপত্তা নেই। এই আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা এখন পর্যন্ত চার শতাধিক গাড়ি ভাঙচুর করেছেন। এ জন্যই এখন রাস্তায় যানবাহন নামছে না। তিনি বলেন, যখন নিরাপত্তাবোধ করব, তখনই আমরা রাস্তায় গাড়ি নামাবো। ছাত্ররা ভাঙচুর বন্ধ করুক, বাস চলাচল স্বাভাবিক হয়ে যাবে। পরিবহন ধর্মঘট আমাদের আনুষ্ঠানিক কোনো কর্মসূচি নয়। আমরা আইন মেনে চলার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। আইন অনুযায়ী দোষীদের যে শাস্তি হোক আমরা মেনে নেব। নতুন আইনকে আমরা স্বাগত জানাই। ধর্মঘটরত পরিবহন শ্রমিকরা জানান, সরকার যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা কাজে যোগ দেবে না। লাইসেন্স দেখার কথা পুলিশের, অথচ দেখছে ছাত্ররা। এর ফলে পরিবহন শ্রমিকরা নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে পড়েছে। অনাবিল পরিবহনের হেলপার মিরাজ উদ্দিন বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে না ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা রাস্তায় গাড়ি নামাতে দেব না। এ ব্যাপারে আমরা সরকার ও মালিকপক্ষসহ সবাইকে জানিয়ে দিয়েছি। সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক জামদানি খন্দকার জানান, গত কয়েক দিনে আমাদের পাঁচ শতাধিক গাড়ি ভাঙচুর করেছে। চালক ও হেলপারদের ওপর হামলা হয়েছে। এটা তো শিক্ষার্থীদের আন্দোলন হতে পারে না। শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নেয়া হয়েছে। তার পরও তারা আন্দোলন করছেন। এদিকে সায়েদাবাদ বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ ধর্মঘট ও আন্দোলন থেকে শ্রমিকদের সরে আসার আহবান জানিয়েছেন। তিনি শ্রমিকদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা আন্দোলন প্রত্যাহার করুন। আমরা পুরো বিষয়টি নিয়ে উচ্চপর্যায়ে কথা বলব। রাজধানীতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে দেশের বিভিন্ন জেলার সঙ্গে রাজধানীর বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ফেনী আন্তঃজেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আজম চৌধুরী জানান, চালকরা রাস্তায় ঝুঁকি নিয়ে বাস চালাতে চাইছে না। শুধু চালকরা নয়, যাত্রীরাও নিরাপদ থাকছেন না। এ কারণে শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের আলোকে বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। ওদিকে কোনো ধরনের ঘোষণা ছাড়াই চট্টগ্রামেও পরিবহন শ্রমিকরা ধর্মঘট পালন করেছেন। গতকাল দূরপাল্লার বেশির ভাগ কাউন্টার বন্ধ ছিল। ‘চালক-শ্রমিকদের নিরাপত্তাহীনতার’ কারণ দেখিয়ে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতারা বাস চলাচল বন্ধ রাখার কথা জানিয়েছেন।বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের পূর্বাঞ্চলীয় সভাপতি মৃণাল চৌধুরী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, শ্রমিকরা ধর্মঘট করেনি। নিরাপত্তাহীনতার কারণে গাড়ি চালাচ্ছে না। চট্টগ্রাম-নোয়াখালী রুটে বাস চলছে না। আমরা চালক-শ্রমিকদের বলেছি, যদি তোমার সুযোগ পাও গাড়ি চালাবে। ছাত্রদের সঙ্গে কোনো ধরনের বিরোধে যাবে না। গতকাল দেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকেও ঢাকার উদ্দেশে বাস চলাচল করেনি। রংপুর থেকেও বাস ছাড়েনি। কেন বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে, সে বিষয়েও পরিবহন মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা সরাসরি কোনো কথা বলতে রাজি হয়নি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App