×

জাতীয়

হামলার আশঙ্কায় পুলিশের বাড়তি সতর্কতা জারি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০১৮, ০১:১৬ পিএম

হামলার আশঙ্কায় পুলিশের বাড়তি সতর্কতা জারি
দেশের গুরুত্বপূর্ণ থানা, চেকপোস্টসহ পুলিশের স্থাপনাগুলোতে নাশকতামূলক হামলার আশঙ্কা করছে গোয়েন্দারা। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সতর্ক করে স্থাপনাগুলো নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সম্প্রতি ১৯ দফা নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এডিশনাল ডিআইজি (ইন্টেলিজেন্স এন্ড স্পেশাল অ্যাফেয়ার্স) মো. মনিরুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এমন নির্দেশনা দেয়া হয়। নির্দেশনাটি এডিশনাল আইজি, র‌্যাব মহাপরিচালক, বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি, পুলিশ কমিশনারসহ ঊর্ধ্বতনদের পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, পুলিশের স্থাপনার ওপর নাশকতামূলক হামলার আশঙ্কা রয়েছে। সম্ভাব্য নাশকতা রোধকল্পে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সসহ বাংলাদেশ পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য নিম্নক্তো নির্দেশাবলি প্রতিপালনে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আদেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। এ বিষয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের একাধিক কর্মকর্তার বক্তব্য চাওয়া হলে কেউ কথা বলতে রাজি হননি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে চেকপোস্টসহ যে কোনো জায়গায় হামলা করতে পিছপা হচ্ছে না অপরাধীরা। আগেও দেশে একের পর এক জঙ্গি হামলা রুখে দেয়ায় জঙ্গিদের টার্গেট হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জঙ্গি হামলার সম্মুখীন হয়েছে পুলিশের একাধিক চেকপোস্ট। এমনকি খুনের আসামি থেকে শুরু করে অবৈধ পাচারকারীকে ও ছিচকে অপরাধীরা পালানোর জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা করেছে। এর আগে ২০১৬ সালে জুলাইতে গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ওপর হামলার আশঙ্কা করে গোয়েন্দারা। তখন মাঠ পর্যায়ে সারা দেশের সব পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যদের সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকতে সব ইউনিট প্রধানকে আলাদা আলাদা জরুরি বার্তা পাঠায় পুলিশ ও র‌্যাব সদর দপ্তর। সম্প্রতি জারি করা চিঠির ১৯ দফা নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে- পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, ডিএমপি, এসবি, সিআইডি, র‌্যাব ফোর্সেস হেডকোয়ার্টার্সসহ সব পুলিশ স্থাপনায় স্ক্যানিং করে গাড়ি প্রবেশ ব্যবস্থা রাখতে হবে। প্রবেশের পূর্বে সেই গাড়ি ও ব্যক্তিগত সামগ্রী তল্লাশি করতে হবে। আগতদের পরিচয় লিপিবদ্ধ করতে হবে। থানাসহ স্থাপনাগুলোয় সাহায্যকারী, দর্শনার্থীদের নাম-ঠিকানা ও তাদের আগমনের উদ্দেশ্য রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করতে হবে। পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সদর দপ্তর, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কার্যালয়, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, অস্ত্রাগারে ও পুলিশ লাইন্সের প্রবেশপথে নিরাপত্তার জন্য সশস্ত্র পুলিশ ও তল্লাশির জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করতে হবে। ক্যাম্প ও ফোর্সের নিরাপত্তা বিবেচনায় নিয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। থানা কিংবা স্থাপনার মেইন গেট ঝুঁকিপূর্ণ থাকলে সেগুলোকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবগত করে নির্মাণ অথবা মেরামত করতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ পুলিশ স্থাপনাগুলোর সীমানা প্রাচীর উঁচু করতে হবে অথবা কাঁটাতারের বেড়া দিতে হবে। রাতে থানা ও পুলিশ ফাঁড়ির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত লাইট লাগাতে হবে। থানাসহ পুলিশ ইউনিটগুলোয় মেইন গেট বন্ধ রেখে পকেট গেট খোলা রাখতে হবে। কেউ পায়ে হেঁটে বা গাড়িতে প্রবেশ করতে চাইলে তার নাম-পরিচয় নিয়ে তল্লাশি করে প্রবেশ করাতে হবে। নম্বরবিহীন গাড়ি ও মোটরসাইকেল পুলিশ স্থাপনাগুলোয় প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। বরাদ্দ অনুযায়ী ইউনিটপ্রধানদের ভেহিকেল সার্চিং মিরর, হ্যান্ড হল্ড মেটাল ডিটেক্টর, টর্চ, হ্যালোজেন লাইট ও সিকিউরিটি লাইট নিশ্চিত করতে হবে। সব ইউনিট প্রধানকে নিরাপত্তার বিষয়ে নিয়মিত ফোর্সেস ব্রিফিং ও দায়িত্ব পালনে পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। অফিসপ্রধানরা সময়ে-অসময়ে আকস্মিকভাবে তার অধীন ইউনিটগুলো পরিদর্শন করবেন। কোনো ক্ষেত্রে ব্যত্যয় পরিলক্ষিত হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন। ব্যক্তিগত দেহরক্ষী, অধিকারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা পেশাগত জ্ঞান, অস্ত্র চালানোর সক্ষমতা এবং নিরাপত্তা সচেতনতা সম্পর্কে ব্যক্তিগতভাবে নিশ্চিত হবেন। সব অফিসার ও ফোর্সকে মাঝে মাঝে অস্ত্র খোলা, জোড়া লাগানো, অস্ত্রের নিরাপত্তা, অস্ত্র চালানোর কৌশল রপ্ত করবেন। ইউনিটপ্রধানরা বিষয়টি নিশ্চিত করবেন ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করবেন। বিভিন্ন পুলিশ ইউনিটে অস্ত্রাগারের নিরাপত্তা সংক্রান্ত ইউনিটপ্রধানরা পিআরবিতে বর্ণিত বিধিবিধানের কোনো ব্যত্যয় ব্যতীত পরিপূর্ণভাবে পালন করবেন। পুলিশ সুপার ও তদূর্ধ্ব কর্মকর্তারা বিভিন্ন পুলিশ ইউনিট নির্ধারিত/আকস্মিক পরিদর্শনে গেলে পুলিশ ইউনিটগুলোর নিরাপত্তার বিষয়টি অবশ্যই পরিদর্শন করবেন এবং পরিদর্শন প্রতিবেদনে উল্লেখ করবেন। এসিআর মূল্যায়নকারী/প্রতি স্বাক্ষরকারী কর্মকর্তারা মূল্যায়নাধীন পুলিশ কর্মকর্তার নিরাপত্তা সচেতনতার বিষয়টি বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনে উল্লেখ করবেন। পুলিশ ইউনিটগুলোর নির্দেশাবলি প্রতিপালনের ক্ষেত্রে পুলিশ সদস্যরা পেশাগত কারণে কঠোর ও বিনয়ী হবেন এবং কোনোক্রমেই যাতে অহেতুক হয়রানি না হয়, ইউনিট প্রধানরা সে বিষয়ে নিশ্চিত করবেন। এ সংক্রান্তে ‘বাংলাদেশ পুলিশ সদস্য ও স্থাপনা সংক্রান্ত নিরাপত্তা নির্দেশিকা’ অনুসরণ করতে হবে। নিরাপত্তা নির্দেশিকায় সন্ত্রাসী হামলার সময় দ্রæত ‘কুইক রেসপন্স টিম’ পাঠানো, ২৪ ঘণ্টার স্ট্রাইকিং টিম প্রস্তুত রাখা, ব্যাকআপ সাপোর্ট (এপিবিএন, র‌্যাব, বিজিবি) ইত্যাদি প্রস্তুত রাখার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়াও পুলিশকে উদ্দেশ করে জারি করা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক নির্দেশনায় বাসা ও মেস ভাড়া দেয়ার আগে আগতদের যথাযথভাবে পরিচয় নিশ্চিত, বাস-রেলস্টেশন, স্থল, বিমান, নৌবন্দরে নিয়ন্ত্রণ ও আকস্মিক তল্লাশির ব্যবস্থা, স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে বিকাশের মতো মোবাইল মানি একাউন্ট পরিচালনাকারী এজেন্টদের পরিচয় ও কার্যকর যাচাই-বাছাই এবং নজরদারির নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App