×

জাতীয়

আজ ‘জননী সাহসিকা’র ১০৭তম জন্মদিন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ জুন ২০১৮, ০২:৪৩ পিএম

আজ ‘জননী সাহসিকা’র ১০৭তম জন্মদিন
‘ওই তো লক্ষ ছেলেমেয়ে/ নাতি-নাতনি দামাল/ সবুজ দ্বীপের মতো মাঝখানে/ সুফিয়া কামাল’ Ñউপমহাদেশের বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী কবীর সুমন নিজের গানে কবি সুফিয়া কামালকে এভাবেই বর্ণনা করেছেন। আজ বুধবার বাংলাদেশের নারী জাগরণের পুরোধা ব্যক্তিত্ব এই কবির ১০৭তম জন্মবার্ষিকী। ১৯১১ সালে এই দিনে বরিশালের শায়েস্তাবাদে এক অভিজাত পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বাংলাদেশের প্রগতিশীল, অসা¤প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক এবং নারীমুক্তি আন্দোলনের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব; জাতির অভিভাবকতুল্য এই কবি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত রাজনীতিবিদ, সাহিত্যিক ও সংস্কৃতি কর্মীদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। কবির জন্মদিন উপলক্ষে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথকভাবে বাণী দিয়েছেন। সুফিয়া কামাল যে পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সেখানে নারী শিক্ষাকে প্রয়োজনীয় মনে করা হতো না। তার বাবা সৈয়দ আবদুল বারী ছিলেন একজন আইনবিদ। মা সাবেরা বেগমের কাছে পড়তে শেখেন তিনি। মাত্র ১২ বছর বয়সে সৈয়দ নেহাল হোসেনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তার স্বামী সাহিত্য পাঠে তাকে আগ্রহী করে তোলেন, যা তাকে পরবর্তীকালে সাহিত্য রচনায় উদ্বুদ্ধ করে। ১৯২৩ সালে তিনি রচনা করেন প্রথম গল্প ‘সৈনিক বধূ’ যা বরিশালের তরুণ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ১৯২৬ সালে সওগাত পত্রিকায় তার প্রথম কবিতা বাসন্তী প্রকাশিত হয়। মহাত্মা গান্ধীর সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি কিছুদিন চরকায় সুতা কাটেন। এ সময়েই যোগ দেন নারী কল্যাণমূলক সংগঠন ‘মাতৃমঙ্গল’-এ। ১৯২৯ সালে তিনি বেগম রোকেয়ার ‘আঞ্জুমান-ই-খাওয়াতিন-ই-ইসলাম’-এ যোগ দেন। এ সময় বেগম রোকেয়ার আদর্শ তাকে প্রভাবিত করে। ১৯৩১ সালে তিনি প্রথম মুসলিম নারী হিসেবে ইন্ডিয়ান মহিলা ফেডারেশনের সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর স্বামীর আকস্মিক মৃত্যুতে ১৯৩২ থেকে ৪১ সাল পর্যন্ত তিনি কলকাতা কর্পোরেশন প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। ১৯৩৮ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘সাঁঝের মায়া’ প্রকাশিত হয়, যার ভ‚মিকা লিখেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম; আর প্রশংসা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৯৩৯ সালে কামালউদ্দীন আহমেদের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তিনি ছিলেন বেগম পত্রিকার প্রথম সম্পাদক। ১৯৪৭ সালে তিনি সপরিবারে ঢাকায় চলে আসেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তিনি সরাসরি যোগ দেন। ১৯৬৯ সালে মহিলা সংগ্রাম পরিষদ (বর্তমানে মহিলা পরিষদ) গঠিত হলে প্রতিষ্ঠাতা প্রধান নির্বাচিত হন। এ ছাড়া তিনি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ছায়ানটের সভাপতি ছিলেন। তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলো হচ্ছে- সাঁঝের মায়া, মায়া কাজল, মন ও জীবন, শান্তি ও প্রার্থনা, উদাত্ত পৃথিবী, দিওয়ান, মোর জাদুদের সমাধি পরে প্রভৃতি। গল্পগ্রন্থ ‘কেয়ার কাঁটা’। ভ্রমণকাহিনী ‘সোভিয়েত দিনগুলি’। স্মৃতিকথা ‘একাত্তুরের ডায়েরি’। সুফিয়া কামাল ৫০টিরও অধিক পুরস্কার লাভ করেছেন। এর মধ্যে বাংলা একাডেমি, সোভিয়েত লেনিন, একুশে পদক, বেগম রোকেয়া পদক, জাতীয় কবিতা পুরস্কার, স্বাধীনতা দিবস পদক উল্লেখযোগ্য। ১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর এই মহীয়সী নারী মৃত্যুবরণ করেন। তাকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। বাংলাদেশে নারীদের মধ্যে তিনিই প্রথম এই সম্মান লাভ করেন। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ কবির জন্মবার্ষিকী পালন উপলক্ষে আগামী ২৭ জুন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এতে ‘কবি সুফিয়া কামাল স্মারক বক্তৃতা’ রাখবেন লেখক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ। নারী নির্যাতনবিরোধী কার্যক্রমে বিশেষ অবদান রাখায় অনুষ্ঠানে তিনজনের হাতে তুলে দেয়া হবে চলতি বছরের ‘কবি সুফিয়া কামাল সন্মাননা’। ঢাকার সেগুন বাগিচায় কবি সুফিয়া কামাল ভবনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App