×

জাতীয়

বিনামূলে ১৫০০ কিডনি প্রতিস্থাপন করলেন অধ্যাপক ডা. কামরুল (ভিডিও)

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:২৭ পিএম

বিনামূলে ১৫০০ কিডনি প্রতিস্থাপন করলেন অধ্যাপক ডা. কামরুল (ভিডিও)

ছবি: ভোরের কাগজ

দীর্ঘ ১৬ বছরে বিনামূলে দেড় হাজার কিডনি প্রতিস্থাপন করেছেন অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম। স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত এই চিকিৎসক এর মাধ্যমে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি কিডনি প্রতিস্থাপনের ইতিহাস গড়েছেন। তিনি প্রথম কিডনি স্থাপন করেছিলেন ২০০৭ সালে। প্রথম এক হাজার কিডনি প্রতিস্থাপন করতে তার সময়ে লেগেছিল ১৪ বছর। এরপর আরো ৫০০ কিডনি প্রতিস্থাপন করতে তার সময় লাগে মাত্র ২৬ মাস। সর্বশেষ তিনি বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে আটটায় মাদারীপুরের এক যুবকের কিডনি প্রতিস্থাপন করেন। বৃহস্পতিবার সাড়ে চার ঘণ্টা অপারেশনের পর ডা. কামরুল জানান, মাদারীপুরের মো. শহীদুল ইসলাম নামে এ যুবকের দুটি কিডনি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তার বাবা ওই যুবককে একটি কিডনি দিয়েছেন। তার বাবা তারা মিয়ার বয়স ৫৫ বছর। তার ডান পাশের কিডনিটা নেয়া হয়েছে প্রতিস্থাপনের জন্য। তিনি আরো বলেন, শহীদুলের কিডনির যে সমস্যা হয়েছে সেটা ইয়াং বয়সে হয়। কিডনি আস্তে আস্তে বিকল হয়ে যায় কিন্তু বোঝা যায় না। টেরই পাওয়া যায় না, প্রোটিন যেতে যেতে যখন শেষ পর্যায়ে আসে তখন ধরা পড়ে যে কিডনির সমস্যা। তখন আর কিছু করার থাকে না। তিনি বলেন, কিডনি প্রতিস্থাপন শুরু করি সেই ২০০৭ সাল থেকে। কিডনি প্রতিস্থাপনে প্রথমে ভীতি কাজ করতো। কিডনি প্রতিস্থাপনে আসলে এটা সাকসেসফুল (সফল) হবে কি না, রোগীর অবস্থান কেমন হবে, যদি সাকসেসফুল না হয় তাহলে এর উত্তর কী দেব, এই ধরনের ভীতি একটা কাজ করতে আমাদের মাঝে। এখন আমাদের প্রতি সপ্তাহে পাঁচটা করতে হয়। আবার কোনো কোনো সপ্তাহে ছয়টাও কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হয়। এরফলে মাসে প্রায় ২৩ টা পর্যন্ত করতে হচ্ছে। কিডনি প্রতিস্থাপনের সফলতার হার কেমন জানতে চাইল ডা. কামরুল বলেন, প্রতিস্থাপনের পর এক বছর কিডনি সচল থাকার হার ৯৪ শতাংশ। ৩ বছর পর্যন্ত ৮৪ শতাংশ, ৫ বছর পর্যন্ত ৭২ শতাংশ এবং ১০ বছর পর্যন্ত কিডনি সচল বা সুস্থ থাকার হার ৫০ শতাংশ। আমি দেখেছি এক বছর পর্যন্ত ৯৫ শতাংশের মতো কিডনি সচল থাকে। একটা সমস্যা হয় আমি তিন মাস পর রোগীকে ছুটি দিলে বাড়ি চলে যায়। রোগীরা অনেক ওষুধ খায় তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। ফলে অসতর্কতার কারণে ঠাণ্ডা লাগলে নিউমোনিয়া হয়ে যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এমন নিউমোনিয়া হয় যে আর ভালো করা যায় না। দেখা যায় কিডনি ভালো থাকে কিন্তু রোগী মারা যায়। কিডনি প্রতিস্থাপনের পর যদি রোগীরা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সতর্ক থাকে, জীবনযাপন করে তাহলে সুস্থ্য থাকার সম্ভাবনা ভালো থাকে। তবে তরুণদের কিডনি দানের হার বেশি হলে গ্রহীতারা আরো দীর্ঘ সময় সুস্থ থাকতে পারতো। উল্লেখ্য, বিনা পয়সায় দেশে কিডনি প্রতিস্থাপনের ইতিহাস তৈরি করা অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম ঢাকার শ্যামলীতে তার প্রতিষ্ঠিত সিকেডি অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করে থাকেন। প্রতি সপ্তাহে পাঁচটি কিডনি প্রতিস্থাপন করেন তিনি। এখন পর্যন্ত কিডনি প্রতিস্থাপন তিনি কোনো পারিশ্রমিক নেননি। তবে অস্ত্রোপচারের ওষুধসহ অন্যান্য খরচ রোগীকে বহন করতে হয়। সব মিলিয়ে খরচ হয় দুই লাখ টাকা। প্রয়োজনীয় প্রতিস্থাপন পরবর্তী ফলোআপ ও পরীক্ষা নিরীক্ষা করতেও রোগীর কাছ থেকে কোনো ফি নেন না। একসময় ঢাকার জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসক ছিলেন ডা. কামরুল। মানবিক কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ২০২২ সালে দেশের সর্বোচ্চ সম্মান স্বাধীনতা পদক পান অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App