×

জাতীয়

ঝরে গেল ষাটের আরেক নক্ষত্র আবু বকর সিদ্দিক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:১৪ পিএম

ঝরে গেল ষাটের আরেক নক্ষত্র আবু বকর সিদ্দিক

ঝরে গেল ষাটের আরেক নক্ষত্র বরেণ‌্য কবি, গল্পকার কথাসাহিত্যিক আবু বকর সিদ্দিক। এ শহর ছেড়ে তিনি চলে গিয়েছিলেন দূরে। রূপসার তীরে খুলনায়। সেখানেই চির ঘুমের দেশে চলে গেলেন। বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) ভোর পৌনে ৬টার দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছেন তার মেয়ে রাজনীতিবিদ বিদিশা।

এর আগে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় আবু বকর সিদ্দিককে খুলনা সিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) রাতে তাকে হাসপাতালের আইসিইউতে (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে) স্থানান্তর করা হয়। ৯০ বছর বয়সী কবি আবু বকর সিদ্দিক দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছেন।

আবুবকর সিদ্দিক একজন কবি, কথাসাহিত্যিক, ছড়াকার, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার ও সমালোচক। সাহিত্যে অবদানের জন্য আবুবকর সিদ্দিক ভূষিত হয়েছেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৮), বাংলাদেশ কথাশিল্পী সংসদ পুরস্কার, বঙ্গভাষা সংস্কৃতি প্রচার সমিতি পুরস্কার (কলকাতা) আরও অনেক পুরস্কারে।

তার প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে ২০টির অধিক কাব্যগ্রন্থ, চারটি উপন্যাস, ১৫টি গল্পগ্রন্থ ও একটি ছড়া গ্রন্থ।

তিনি ১৯৩৪ সালের ১৯ আগস্ট মামারবাড়ি বাগেরহাট সদরের গোটাপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তারা বাবা মতিয়র রহমান পাটোয়ারী ছিলেন সরকারি চাকুরে। মা মতিবিবি গৃহিণী। বাবার চাকরি সূত্রে ১৯৩৫ সাল থেকে তিনি হুগলি শহরে এবং ১৯৪৩ সাল থেকে বর্ধমানে বসবাস করেন। ১৯৪৬ সালে পঞ্চম শ্রেণিতে থাকাকালীন তার প্রথম কবিতা আবদুস সাত্তার সম্পাদিত বর্ধমানের কথা পত্রিকায় ছাপা হয়।

তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে থেকে ১৯৫৮ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে শিক্ষকতাকেই পেশা হিসেবে বেছে নেন। তিনি পর্যায়ক্রমে চাখার ফজলুল হক কলেজ, দৌলতপুর বিএল কলেজ, কুষ্টিয়া কলেজ, বাগেরহাট পিসি কলেজ এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন।

১৯৯৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। এরপর কুইন্স ইউনিভার্সিটি ও ঢাকার নটর ডেম কলেজে অধ্যাপনা করেন।

কবি আবু বকর সিদ্দিকের কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা আঠারোটি: ধবল দুধের স্বরগ্রাম (১৯৬৯), বিনিদ্র কালের ভেলা (১৯৭৬), হে লোকসভ্যতা (১৯৮৪), মানুষ তোমার বিক্ষত দিন (১৯৮৬), হেমন্তের সোনালতা (১৯৮৮), নিজস্ব এই মাতৃভাষায় (১৩৯৭), কালো কালো মেহনতি পাখি (২০০০), কংকালে অলংকার দিয়ো (২০০১), শ্যামল যাযাবর (২০০০), মানব হাড়ের হিম ও বিদ্যুৎ (২০০২), মনীষাকে ডেকে ডেকে (২০০২), আমার যত রক্তফোঁটা (২০০২), শ্রেষ্ঠ কবিতা (২০০২), কবিতা কোব্রামালা (২০০৫), বৃষ্টির কথা বলি বীজের কথা বলি (২০০৬), এইসব ভ্রমণশস্য (২০০৭), বাভী (২০০৮), নদীহারা মানুষের কথা (২০০৮) ইত্যাদি এবং ছড়াগ্রন্থ: হট্টমালা (২০০১)। এসব কাব্যরচনার পাশাপাশি তিনি ক্রমাগত নির্মাণ করেন অবিনাশী গণসংগীত, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, স্মৃতিকথা ও জীবনীগ্রন্থ। তার প্রথম গ্রন্থ ধবল দুধের স্বরগ্রাম। তার একটি মাত্র ছড়াগ্রন্থ হট্টমালা (২০০১)।

আবু বকর সিদ্দিকের প্রকাশিত ছোটগল্পগ্রন্থসমূহ: ভূমিহীন দেশ (১৯৮৫), চরবিনাশকাল (১৯৮৭), মরে বাঁচার স্বাধীনতা (১৯৮৭), কুয়ো থেকে বেরিয়ে (১৯৯৪) এবং ছায়াপ্রধান অঘ্রান (২০০০)।

নির্মম কালপুরুষের মতো তিনি বাংলাদেশের শোষিত মানুষের অন্ধকারাচ্ছন্ন জীবনসত্যকে ভূমিহীন দেশের (১৯৮৫) ‘ভূমিহীন দেশ’ গল্পে চিত্রিত করেন।

লেখকের শৈল্পিক প্রতিবাদের ধারাবাহিক প্রকাশ মরে বাঁচার স্বাধীনতা (১৯৮৭) গল্পগ্রন্থ, যা মুক্তিযুদ্ধের শিল্পদলিল হিসেবে স্বীকৃত। এ ছাড়াও ‘বেলুনওয়ালা’, ‘খালখসা লাল কংকাল’, ‘ভূতপ্যাদানী’, ‘খাদ্য মন্ত্রণালয় কতো দূরে’, ‘চন্দনের ঘূণ’, ‘লাশের নাম নেই’, ‘খতম’, ‘এই সেই জয় বাংলা’, ‘ফজরালি হেঁটে যায়’, ‘রক্তগর্জন’ ও ‘খোঁড়া সমাজ’ গল্পের কোথাও কৃত্রিমতার ফাঁক নেই।

চরবিনাশকাল (১৯৮৭) গল্পগ্রন্থের সাতটি গল্পে রূপক-প্রতীকী ভাষায় মানবজীবনের কিছু অস্তিত্বের প্রসঙ্গ উপস্থাপিত হয়েছে। কুয়ো থেকে বেরিয়ে (১৯৯৪) গল্পগ্রন্থে তার এ-পরিচিতি অধিক সমুজ্জ্বল।

ছায়াপ্রধান অঘ্রান (২০০০) গল্পসংকলনেও রাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্র, গ্রামীণজীবন, ধর্মীয় অন্ধত্ব, শোষণ-নির্যাতন গাল্পিকের সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা এবং নিজস্ব রচনাশৈলীতে নির্মিত হয়েছে। কান্নাদাসী (২০০৬), হংসভাসীর তীরে (২০০৮), কালাকুম্ভীর (২০০৮), মুক্তিযুদ্ধের নির্বাচিত গল্প: মুক্তিলাল অভ্যুদয় (২০০৮), মধুবন্তী (২০০৯) এবং বরীনভূমি-বাদাবন (২০১৭) গ্রন্থের প্রতিটি গল্পই ভিন্নমাত্রিক ও জীবনঘনিষ্ঠ।

তার প্রকাশিত উপন্যাস চারটি: দক্ষিণবঙ্গের জনজীবন নিয়ে রচিত জলরাক্ষস (১৯৮৫, দ্বি. প্র. ২০০১), উত্তরবঙ্গের খরাপীড়নের ভয়াবহ শিল্পনির্মাণ খরাদাহ (১৯৮৭, দ্বি. প্র. ২০০০), স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলনের পটভূমিতে রচিত বারুদপোড়া প্রহর (১৯৯৬) এবং একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের আলেখ্য একাত্তরের হৃদয়ভস্ম (১৯৯৭)।

তার প্রকাশিত প্রবন্ধগ্রন্থ কালের কলস্বর (২০০১) ও সাহিত্যের সংগপ্রসংগ (২০০১)। জীবনীগ্রন্থ রমেশচন্দ্র সেন (১৯৯২)। স্মৃতিকথা সাতদিনের সুলতান (২০০২), প্রীতিময় স্মৃতিময় (২০১০) এবং স্মরণের মুখশ্রী (২০১১)।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App