×

জাতীয়

একাত্তরে গণহত্যার বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রাধান্য দিতে হবে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:৪৬ পিএম

একাত্তরে গণহত্যার বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রাধান্য দিতে হবে

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বুধবার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সেমিনার হলে ‘গণমাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার’-এর প্রথম আয়োজন ‘বিশ্ব গণমাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক আয়োজনে বিশেষ বক্তৃতা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক কাবেরী গায়েন। ছবি: ভোরের কাগজ

একাত্তরে গণহত্যার বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রাধান্য দিতে হবে

বাঙালির মুক্তি সংগ্রাম ইতিহাসের অচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছে, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও সাংবাদিক সমাজের অবদান। অথচ এই যুদ্ধটাকে ভারত পাকিস্তানের যুদ্ধ বলে চালিয়ে দেয়া হয়। তাই একাত্তরে গণহত্যার বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রাধান্য দিতে হবে। এখন অনেক ধরনের মিথ্যা সংবাদ, গুজব, অপপ্রচার হচ্ছে। সেগুলো থেকে মুক্ত হয়ে সংবাদ পরিবেশনের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। সাধারণ মানুষ যাতে ভুল তথ্য না পায় এজন্য গণমাধ্যমকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হবে।

বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সেমিনার হলে ‘গণমাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার’-এর প্রথম আয়োজন ‘বিশ্ব গণমাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক বিশেষ বক্তৃতা অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।

বিশেষ বক্তৃতা দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক কাবেরী গায়েন। এতে আলোচক ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাষ্টি গবেষক মফিদুল হক, মুক্তিযোদ্ধা ও লেখক হারুন হাবীব, শহীদ বুদ্ধিজীবীর সন্তান ডা. নুজহাত চৌধুরী ও সাংবাদিক পার্থ সঞ্জয়। সভাপতিত্ব করেন সাংবাদিক মহিম মিজান।

গণমাধ্যম অনেক কিছু করতে পারে তার প্রমাণ একাত্তর এমন মন্তব্য করে মফিদুল হক বলেন, গণমাধ্যম ক্ষমতাবিন্যাসের মাধ্যমে থেকেও একটা প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে। করাচীর সাংবাদিক অ্যান্থনি ম্যাসকারেনহাস প্রোপাগাণ্ডা ছড়াতে সহযোগিতার বদলে তুলে ধরেছিলেন গণহত্যার আসল চিত্র। পূর্ব বাংলায় ১০ দিন থেকে তিনি প্রতিবেদন করেছিলেন যুদ্ধপরাধের নানা তথ্য নিয়ে। জেনোসাইড শিরোনামে সেটি ছাপা হয় ‘দ্য সানডে টাইমসে’। একাত্তরে প্রকাশিত সেই প্রতিবেদন ইতিহাস বদলে দিতে বিরাট ভূমিকা রেখেছিল।

তিনি বলেন, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী অনলাইন মিডিয়ার ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। অনেক ক্ষেত্রে টিকটক থেকে শুরু করে নানা মাধ্যম গণমাধ্যমকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশেও অনলাইন মিডিয়ার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। যেখানে গ্রুপ করেও নানা চ্যালেঞ্জ নেয়া যায়। এসব মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঘটে যাওয়া ভয়ংকর নিষ্ঠুরতার কথা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরতে হবে।

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ভালো গবেষণা নেই উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধের কথা বলতে গেলে প্রতিটি বিষয় নিয়ে আলাদাভাবে গবেষণা করা যায়। ৫২ বছর আগের হলেও বিষয়টা মহাসাগরের মতো।

হারুন হাবীব বলেন, পশ্চিমা গণমাধ্যম যেভাবে সংবাদ প্রকাশ করুক না কেন তাদের গণমাধ্যমের বাইরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সত্যিকার অর্থে কি ঘটেছিল সেসময় ভারতীয় গণমাধ্যম, সোভিয়েত গণমাধ্যম, অস্ট্রেলিয়া, জাপানের গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের প্রসঙ্গ বাদ দেয়া যায় না।

তিনি বলেন, আশার কথা আমাদের নতুন প্রজন্মের মধ্যে সত্যিকারের বিপ্লব সৃষ্টি হয়েছে। যত প্রতিবন্ধকতাই আসুক না কেন নতুন প্রজন্ম যেভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ছড়িয়ে দিতে শক্তি ধারণ করছে তাতে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবেই।

সত্য ইতিহাসকে তথ্য আকারে তুলে ধরার আহবান জানিয়ে নুজহাত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের গণহত্যা আন্তর্জাতিক বিশ্বে এখনও স্বীকৃত নয়। আমাদের গণমাধ্যমে গণহত্যাকে গণহত্যা হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে না। লক্ষ পরিবার আছে তাদের কথা এখনও কেউ তুলে ধরছে না। কেবল দিবস এলে একধরণের গাছাড়া ভাব নিয়ে তুলে ধরা হয়, বিশ্ব গণমাধ্যমে অনেক সাক্ষাতকার দিয়েছি, কোনোটাই সঠিকভাবে তুলে ধরা হয়নি, আমরা ‘নন রিপ্রেজেন্টেশন’-এর শিকার। আমি এর প্রতিবাদ জানাই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে কাজ করেছিল এমন মন্তব্য করে কাবেরী গায়েন বলেন, তাদের গণমাধ্যমগুলোও নেতিবাচক সংবাদ প্রচার করেছিল, ২৫ মার্চ যা ঘটেছিল এটাকে তারা বলেছিল সিভিল ওয়ার। বিশ্ব গণমাধ্যমও প্রচার করেছিল ভারত পাকিস্তানের যুদ্ধ হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে তথ্য প্রমাণ দ্বার করাতে হবে। এমনকি বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার নিয়েও তারা কোনো সংবাদ প্রকাশ করেনি। তবে শরণার্থী শিবিরের প্রশ্নে অধিকাংশ সাংবাদিক তাদের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তন করে ফেলেছিল।

মহিম মিজান বলেন, বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের বয়ানকেই আমরা তুলে ধরতে চাই নতুন প্রজন্মের কাছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App