×

জাতীয়

ভোটের পরে আরো তিন সপ্তাহ সেনাবাহিনীকে চাইল ঐক্য পরিষদ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:৩০ পিএম

ভোটের পরে আরো তিন সপ্তাহ সেনাবাহিনীকে চাইল ঐক্য পরিষদ

শনিবার ঢাকায় ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম মিলনায়তনে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: ভোরের কাগজ

ভোটের পরে আরো তিন সপ্তাহ সেনাবাহিনীকে চাইল ঐক্য পরিষদ

সংখ্যালঘু স্বার্থবিরোধীদের কোনোভাবেই ভোট নয় ১১ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচনী মনিটরিং সেল গঠন মন্দিরে নির্বাচনী সভায় ‘না’

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা বনাম স্বতন্ত্রের লড়াইয়ে ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘুরা ‘শ্যাম রাখি না কূল রাখি’র পর্যায়ে পড়েছেন। এরকম পরিস্থিতিতে তারা নিরাপত্তার অভাবের কথা উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনে অনুরোধ করে বলেছেন, নির্বাচনের পরেও অন্তত তিন সপ্তাহ যেন দেশজুড়ে বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকে।

পাশাপাশি আসন্ন সংসদ নির্বাচনে যেসব প্রার্থী ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘুদের সমঅধিকার ও সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠার পক্ষে যেসব প্রার্থী থাকবেন তাদেরকে সমর্থন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। সেসঙ্গে অতীতে যেসব রাজনৈতিক ব্যক্তি সাম্প্রদায়িক ও ধর্মান্ধ ভূমিকা পালন করেছেন এবং ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের জায়গা-জমি জবরদখল, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও নির্যাতনে যুক্ত থেকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে সংখ্যালঘু স্বার্থবিরোধী কাজে লিপ্ত থেকে বর্তমানে প্রার্থী হয়েছেন তাদের ভোট না দেয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংগঠনটি। পাশাপাশি নির্বাচনী প্রচারে মন্দিরে নির্বাচনী সভা, ঐক্য পরিষদের ব্যানার, পোস্টার, লিফলেট ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়।

শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) ঢাকায় ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম মিলনায়তনে আয়োজিত বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় বর্ধিত সভায় এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সংগঠনের নেতারা। সাবেক সংসদ সদস্য ও সংগঠনের সভাপতি ঊষাতন তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিভিন্ন জেলা থেকে আসা নেতা ও কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেন।

সংগঠনের কুমিল্লা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর তাপস বক্সী বলেন, নৌকার প্রার্থী আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহারের নির্বাচনী প্রচারণায় সংখ্যালঘুদের টার্গেট করে যেসব উসকানিমূলক বক্তব্য ও হুমকি প্রদান করা হচ্ছে তাতে সংখ্যালঘুরা শঙ্কিত। এ ব্যাপারে নির্বাচনের আগে সংখ্যালঘুদের নির্ভয়ে ভোটদানের উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি জোর দাবি জানান তিনি।

মাদারীপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দে বলেন, তার জেলায় অঘোষিতভাবে দু’জন এমপি হয়ে গেছেন। বাকি রয়েছেন একজন। এখন যা অবস্থা তা কুরুক্ষেত্রের চেয়েও খারাপ। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, শ্যাম রাখি না কূল রাখির মত। নৌকা-স্বতন্ত্র দুজনেই ডাকে। কোথায় যাব আমরা? এবার কঠিন খেলা শুরু হয়েছে।

জামালপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রমেন চন্দ্র বণিক বলেন, জামালপুরের একটি আসনে নৌকার প্রার্থী প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্যসচিব। আবার যিনি স্বতন্ত্র তিনিও আওয়ামী লীগের। দুইজনের কারণে আওয়ামী লীগ বিভক্ত। এই বিভক্তির জেরে সংখ্যালঘুরাও সমস্যায় পড়েছেন। পাশাপাশি নির্বাচনকে ঘিরে কোটি কোটি টাকার খেলাও চলছে। দুই পক্ষই খেলছে। এতে সংখ্যালঘুরা পরিস্থিতি ভালো দেখছেন না।

বরিশাল শাখার সাধারণ সম্পাদক বলেন, যেদিন শাম্মী আক্তার নৌকার প্রার্থী হলেন সেদিনই পংকজ নাথের ১৫০ অনুসারীদের বাড়ি ভাংচুর হল। এরপরে শাম্মী আক্তারের প্রার্থিতা বাতিল হওয়ায় আপাতত রক্ষা। কিন্তু আগামী ২ জানুয়ারি শাম্মী আক্তার উচ্চ আদালতের আদেশে প্রার্থিতা ফিরে পেলে সেখানে কি ভয়াবহ অবস্থা হবে তা ভাবলেই গা শিউড়ে উঠে। পাশাপাশি সাদিক আব্দুল্লাহ ও জাহিদ ফারুকের আসনেও সংখ্যালঘুরা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে।

ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট অতুল দেবনাথ বলেন, দাবি-দাওয়ার দরকার নেই। ভোটের আগেপরে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাটাই যেন দয়া করে দেয়। পুলিশকে নিয়ে তার আস্থা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনের পরে সেনাবাহিনীর আরো তিন সপ্তাহ মাঠে থাকা দরকার। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আনন্দ চন্দ্র বাউল বলেন, ভোট আসলেই সংখ্যালঘুদের ওপর জ্বালাও-পোড়াও শুরু হয়।

বাংলাদেশ শিক্ষক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক সুধাংশু কুমার গাইন বলেন, আমরা ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত হওয়ার জন্য বসে আছি। কেউ আমাদের বাঁচাতে আসবে না। এবার যেভাবে ভোট হচ্ছে তাতে নিরাপত্তা আরো কমবে।

সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত কুমার দেব বলেন, আমরা তাকেই ভোট দেব যারা আমাদের কথা ভাবছে। আমরা তাকেই ভোট দেব যিনি স্বাধীনতার মূল্যবোধ ধারণ করেন। আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ বলেন, আমরা যারা ভুক্তভোগী তারা যেন কোথাও গাঁ হেলিয়ে না দেই। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম মেম্বার জে এল ভৌমিক বলেন, অসাম্প্রদায়িক চেতনায় যারা বিশ্বাস করেন তাদেরকেই আমরা ভোট দেব। কোনো মন্দিরে কেউ নির্বাচনী সভা করতে পারবেন না। নির্বাচনের পরেও যাতে সেনাবাহিনী মাঠে থাকে সেজন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি পাঠানো হচ্ছে।

আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য মিলন কান্তি দত্ত বলেন, এবারের ভোটকে কেন্দ্র করে বাম-ডান সবাই এক হয়ে গেছে। এরফলে এই ঘটনা ভাববার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু আওয়ামী লীগকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য রঞ্জন কর্মকার বলেন, সংখ্যালঘুরা আর রাজনৈতিক ফ্যাক্টর নয়। এজন্য রাজনৈতিক দল সংখ্যালঘুদের উন্নয়নে কথা দিয়ে কথা রাখে না।

আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য জয়ন্ত সেন দীপু বলেন, ভোটকে কেন্দ্র করে ‘রায়ট’ সৃষ্টির শংকা রয়েছে। কাজেই নিজেদের মধ্যে দোষত্রুটি বাদ দিয়ে আগে মানুষকে বাঁচানোর কাজ করতে হবে।

পরে সভায় গৃহীত প্রস্তাবে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, ধর্মকে নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যবহারে নির্বাচন কমিশনের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও চলমান নির্বাচনী প্রচারণায় ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতা এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ব্যাপারে অনতিবিলম্বে নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে কঠোর পদক্ষেপ কামনা করছে। সভায় নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে ৭২-র সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা ছাড়াও সংখ্যালঘু স্বার্থবান্ধব অঙ্গীকারের প্রতিশ্রুতি দেয়ার ওপর জোর গুরুত্ব আরোপ করে বলা হয়, অতীতে নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে দলের উদ্যোগ ‘নেয়া না নেয়া’ পর্যালোচনা করে পরবর্তী কর্মসূচি গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

সভায় কাজল দেবনাথ ও রঞ্জন কর্মকারকে যথাক্রমে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব করে ১১ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় নির্বাচনী মনিটরিং সেল গঠন করা হয়। যারা নির্বাচনপূর্ব, নির্বাচনকালীন এবং নির্বাচন-পরবর্তী ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা, নির্যাতন এবং বিভিন্ন ধরনের সংঘাতের তাৎক্ষণিক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন এবং একটি প্রতিবেদন তৈরি করবেন। প্রতিটি জেলায় পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট মনিটরিং সেল থাকবে যারা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ নিবেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App